অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে এখনো প্রধান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার একটি হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। সারা দেশেই ঘটছে খুনের ঘটনা। সেই সঙ্গে বেড়েছে ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি। বাড়ছে হুমকি-ধমকি ও চাঁদাবাজির ঘটনা।
নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার পরও পথে-ঘাটে, এমনকি নিজের বাসার ভেতরেও মানুষ নিরাপত্তাহীন। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সারা দেশে সব ধরনের অপরাধ বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে হত্যা, নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, চুরি, ডাকাতি, দস্যুতা, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে হামলা, দখল, চোরাচালান, মাদক ব্যবসার মতো অন্তত ১১ ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা বেড়েছে। এসব নিয়ন্ত্রণে জোরালো পদক্ষেপ না থাকায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানেও অপরাধ বেড়ে যাওয়ার তথ্য রয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, গত বছর প্রথম ছয় মাসের (জানুয়ারি-জুন) তুলনায় এর পরের সাত মাস (জুলাই ২৪-জানুয়ারি ২৫) প্রায় সব ধরনের অপরাধের ঘটনায় মামলার সংখ্যা বেড়েছে। নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা সমাজে আতঙ্কে আছে মানুষ।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সমাজে অপরাধমূলক নানা ঘটনায় ভুক্তভোগীরা রীতিমতো অসহায়।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দায়িত্বে ঘাটতির বিষয়টিও দৃশ্যমান। দায়িত্বশীলদের সঠিক জবাবদিহির আওতায় না আনা, আইন না মানার প্রবণতা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা এসব ঘটনার পেছনে বেশির ভাগ দায়ী বলে তাঁরা মনে করছেন।
এটি ঠিক যে সমাজের কিছু মানুষ যেন দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। এক শ্রেণির মানুষ পুলিশ-প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধ-কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না, যে কারণে সমাজে খুনখারাবিসহ অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ রকম অবনতির কারণ কী? কেন খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না? কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না নৃশংসতা, অমানবিকতা? পেশাগত অপরাধীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়া এবং ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর কারণেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সারা দেশেই অপরাধ কর্মকাণ্ড বাড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাড়ছে খুনখারাবি, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, রাহাজানি, লুটতরাজের মতো ঘটনা। ফলে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার অভাববোধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতি মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে।
নিরাপদে বসবাস করা মানুষের মৌলিক অধিকার। আর মানুষের সেই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বোধ তীব্র হবে। তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, সেটি আমরা কেউ চাই না। আমাদের প্রত্যাশা, অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক চেষ্টায় সুস্থ পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।