প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫, ১:৪২ এএম আপডেট: ১৩.০৩.২০২৫ ২:১৪ এএম |

ইন্টার্ন
চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন চলছে কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (কুমেক)। জরুরী বিভাগ ও আইসিও সেবা ছাড়া বন্ধ রয়েছে
বহির্বিভাগসহ হাসপাতালের যাবতীয় সকল সেবা কার্যক্রম। এতে করে গত দুদিন
যাবত চরম দুর্ভোগে রয়েছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার রোগি ও তার
স্বজন। অথচ তারা জানেনই না চিকিৎসকদের এ কর্মবিরতির কথা। রোজা রেখে
চিকিৎসার প্রত্যাশায় আসা শিশু, বৃদ্ধ ও নারী থেকে শুরু করে নানান বয়সী
রোগীরা ফিরছেন হতাশা নিয়ে। বুধবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখা
যায় এসব চিত্র।
হাজার হাজার রোগী, স্বজনদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম হোসেন। কিডনি রোগে আক্রান্ত বাবাকে নিয়ে এসেছিলেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
কুমিল্লার
সদর দক্ষিণ উপজেলা থেকে আসা এ রোগী দীর্ঘদিন যাবত কিডনি রোগে ভুগছেন।
সপ্তাহখানেক ধরে ভর্তি রয়েছেন মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগে। সোমবার দায়িত্বরত
চিকিৎসক কিডনিসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু
মঙ্গলবার এবং বুধবার ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের কমপ্লিট শাটডাউনের
কারণে পরীক্ষা করাতে গিয়ে পড়েন চরম বিপর্যয়।
ইমাম
হোসেন বলেন, চিকিৎসা সেবা ব্যয় বহন করতে না পেরে বাধ্য হয়ে এসেছি কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ভাবছিলাম এখানে চিকিৎসা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো
করা যাবে বিনা পয়সায়। কিন্তু ডাক্তারদের কর্মবিরতির কারণে বন্ধ হয়ে পড়ে
মেডিকেলের সকল কার্যক্রম। বাহিরে গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষাগুলো
করানোর মত টাকাও নেই। এখন বাবাকে কই যাবো। বর্তমানে অসহায় ইমাম হোসেন তার
অসুস্থ বাবাকে নিয়ে পড়েছে চরম দুর্ভোগে।
আরো এক ভুক্তভোগী
সত্তোরোর্ধ্ব রোকেয়া বেগম। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবানিতে
এসেছিলেন কুমিল্লার সদর উপজেলার ভানাসুয়া থেকে। স্বজনদের হাত ধরে আশায় এ
নারী ভুগছেন নানা রোগে। বুধবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে আসেন
পরীক্ষার কাগজপত্র দেখিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ নিবেন। পরপর দুইদিন
এসে পড়েছেন ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে।
রোকেয়া বেগম বলেন, আর্থিকভাবে এমনই
দুরবস্থা একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার মতো নেই সেই সামর্থ্য।
তাই ঘুরে ফিরে আসছি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবা নিতে। কবে ডাক্তাররা
ফিরবেন চিকিৎসা সেবায় সেটাই জিজ্ঞেস করছেন এ নারী।
এদিকে এমবিবিএস ও
বিডিএস ব্যতীত কেউ ডাক্তার উপাধি ব্যবহার করতে পারবে না এবং ম্যাটস ও
নিম্নমানের মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করাসহ ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের ৫
দফা দাবির কর্মবিরতির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন পেশাগত চিকিৎসকরাও। এছাড়া
কুমিল্লার তিন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং
শিক্ষার্থীও এ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সমন্বয়ক জোবায়ের আহমেদ জানান, পাঁচ দফা দাবি আদায়ে গত
দুসপ্তাহ থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন তারা। তারপরও কোন ধরনের আশ্বাস কিংবা
দাবি মেনে না নেওয়ায় মঙ্গলবার এবং বুধবার তারা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে কমপ্লিট শাটডাউন এর ঘোষণা দেন। বুধবার ছিল ইন্টার্ন চিকিৎসকদের
করা রিট শুনানির রায়। রায় সন্তোষজনক না হলে তারা আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার
কথা ভাবছেন।
এমবিবিএস ও বিডিএস ব্যতীত কেউ ডাক্তার উপাধি ব্যবহার করতে
পারবে না এবং ম্যাটস ও নিম্নমানের মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করা ছাড়াও ৫ দফার
মধ্যে রয়েছে।
ওটিসি ড্রাগস লিস্ট আপডেট করতে হবে, স্বাস্থ্য খাতে
চিকিৎসকের সংকট নিরসন করা, ম্যাটস ও নিম্নমানের মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করা
এবং চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।