কুমিল্লার
চান্দিনা পৌরসভার বাজার পরিদর্শক গিয়াস উদ্দিনের সীমাহীন দুর্নীতি অতিষ্ঠ
বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীরা। পৌর মার্কেটের দোকান পরিবর্তন থেকে শুরু করে
টানা ১৬ বছর যাবৎ ২৮ দোকানে ভাড়া আত্মসাৎ করে বনে গেছেন কয়েক কোটি টাকার
মালিক। রাজনৈতিক লোকদের ম্যানেজ করে চাকুরীর শুরু থেকে একই পৌরসভায় ২০ বছর
কর্মরত আছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথেও
অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চান্দিনা
পৌরসভা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কয়েকধাপে যে ২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ
দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ ওই নিয়োগে বাজার আদায়কারী হিসেবে চাকুরী নেয় গিয়াস
উদ্দিন। যখন যে রাজনৈতিক দলের নেতা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, তখন ওই সংসদ
সদস্যের ঘনিষ্ঠজন ও নেতাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে বহাল তবিয়তে থাকেন।
এছাড়া নতুন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ‘মেয়র এর ডান হাত’ হিসেবে নিজেকে
প্রতিষ্ঠিত করেন। ওই পরিচয়ে চষে বেড়ান পৌরসভার প্রধান বাজারটি। বাজারের যত
ব্যবসায়ী আছেন তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়, ২০-২৫ হাজার
টাকায় বাজারের ফুটপাতে দোকান বসানো, পৌরসভার তোহা বাজারে কাপড় দোকান বসিয়ে
টাকা আদায়, কাঁচা বাজার, মাছ বাজার সর্বত্র তার নিয়ন্ত্রণে। বাহিরের
দোকানীরা কেউ তার কথার বাহিরে গেলে ক্ষমতা দেখিয়ে বাজার থেকে উঠিয়ে দেয়
গিয়াস উদ্দিন। আবার সেই খালি জায়গায় নতুন দোকান বসিয়ে টাকা আদায় করা পেশায়
পরিণত হয়েছে তার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৩ সালে চান্দিনা মধ্য বাজারের
কাপড় পট্টিতে ৩তলা বিশিষ্ট ‘পৌর সুপার মার্কেট’ নির্মাণ করে চান্দিনা
পৌরসভা। ওই মার্কেটে নিচতলায় ৩২টি, দ্বিতীয় তলায় ৩২টি ও তৃতীয় তলায় ৩০টি
দোকান ঘর রয়েছে। শুরুতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় দোকান বরাদ্দ দেয়
পৌরকর্তৃপক্ষ। সেই সময়ে ওই মার্কেটটি জমজমাট না থাকায় তৃতীয় তলার ৩০টি ও
দ্বিতীয় তলার ৮টি দোকান ঘর বরাদ্দ হয়নি। যে কারণে অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ওইসব
খালি দোকানগুলোকে নিজেদের গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু ওইসব
দোকান বরাদ্দ না হলেও অন্য ব্যবসায়ীরা গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করায় শুরু
থেকে ভাড়া আদায় করে আসছেন পৌরসভায় কর্মরত বাজার আদায়কারী গিয়াস উদ্দিন।
পরবর্তীতে ওই মার্কেটটি জমজমাট হওয়ায় বেড়ে গেছে প্রতিটি দোকান ঘরের
গুরুত্ব। পৌরসভার আদায়কারী গিয়াস নিজে ব্যক্তিগত ভাবে ভাড়া আদায় করে
আত্মসাৎ করার সুবাদে কখনও পৌর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেনি। দোকান ঘর
বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে পৌরদপ্তরে কখনও ফাইল নোট দেয়নি। ওই
মার্কেটে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় দোকান বরাদ্দ নিয়ে পরবর্তীতে ৩০-৪০ লক্ষ
টাকায় হাত বদল করা হয়েছে অধিকাংশ দোকান। প্রতিটি দোকানের হাত বদলে ২-৩ লক্ষ
টাকা বাগিয়ে নেন গিয়াস।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে চান্দিনা পৌরসভা
মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দোকানগুলো যখন ফাঁকা ছিল তখন আমরা গিয়াস
স্যারের সাথে কথা বলে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করে আসছি। শুরুতে প্রতি দোকান ১
হাজার টাকা করে ভাড়া দেই, বর্তমানে দোকান প্রতি ৩ হাজার টাকা ভাড়া দিচ্ছি।
তবে গিয়াস স্যার আমাদের বলে দিছেন যদি ভাড়ার কথা স্বীকার করি তাহলে নাকি
বর্তমান বাজারদর হিসেবে পূর্ব থেকে বর্তমান পর্যন্ত পৌরসভাকে ভাড়া দিতে
হবে।
এদিকে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর চান্দিনা বাজার
ও চান্দিনা গরু বাজারের ইজারা বাতিল করে পৌর কর্তৃপক্ষ। ২ কোটি টাকার
বাজারে প্রতি সপ্তাহে আদায় হয় ৩-৪ লক্ষ টাকা। ওই টাকা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও
কিছু রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করেছে গিয়াস।
পৌরসভার
একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, বাজারের দোকান-পাটের ভাড়া সম্পর্কে আমরা
কিছুই জানি না। সাপ্তাহিক বাজারের টাকা কেউ ১ হাজার কেউ ২ হাজার পাই। কত
টাকা আসে কাকে কত দেয় কিছুই জানায় না গিয়াস। আমরা কিছু জানতে চাইলে আমাদের
সাথে দুর্ব্যবহার করে। তার সীমাহীন দুর্নীতির পরও সে বাজার আদায়কারী থেকে ৭
বছর আগে বাজার পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পায়। বর্তমানে কয়েক মাস যাবৎ পৃথক
কক্ষ নিয়ে বসেন তিনি।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চান্দিনা পৌরসভার বাজার পরিদর্শক গিয়াস উদ্দিন জানান- এসব কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা, আমি আপনার সাথে পরে কথা বলব।
চান্দিনা
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক নাজিয়া হোসেন জানান- দোকান ঘর খালি
থাকার বিষয়টি আমার জানা আছে, সেগুলো নতুন ভাবে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য
প্রক্রিয়া চলছে। সেখান থেকে ভাড়া আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই, খোঁজ নিয়ে
ব্যবস্থা নিব।