আধুনিক
যুগে বিদ্যুৎ ছাড়া জীবনযাত্রা যেন কল্পনাই করা যায় না। আলো জ্বালানো, পাখা
চালানো, এসি চালানো, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ওয়াশিং মেশিনসহ ঘর-গৃহস্থালির
অনেক কাজেই এখন বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। কুটির শিল্প থেকে ভারী
শিল্প-সর্বত্রই বিদ্যুৎ অপরিহার্য। যানবাহন চালাতেও এখন বিদ্যুতের ব্যবহার
বাড়ছে।
বিদ্যুতে চলছে মেট্রো রেল। স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের চাহিদা
বাড়ছে এবং তা ক্রমেই বাড়তে থাকবে। এটি অনস্বীকার্য যেকোনো দেশের উন্নয়ন
অনেকাংশেই নির্ভর করে দেশটিতে বিদ্যুতের সহজলভ্যতার ওপর।
পত্রিকান্তরে
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চাহিদার অতিরিক্ত সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেও
প্রয়োজনীয় জ্বালানির অভাবে এবারও গরমের সময় বিদ্যুৎসংকটে লোডশেডিং বাড়বে।
জ্বালানি
আমদানির অনিশ্চয়তা ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া পরিশোধে বিলম্বের
কারণে গ্রীষ্মে সারা দেশে ব্যাপক লোডশেডিংয়ের শঙ্কা রয়েছে। সংকটের মূলে
রয়েছে জ্বালানিসংকট, বিপুল পরিমাণ দেনার বোঝা এবং ডলার সংকট। সম্প্রতি
জ্বালানি উপদেষ্টা জানিয়েছেন, শীত মৌসুমে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৯
হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু দুটি কারণে গ্রীষ্মে চাহিদা বেড়ে ১৭ হাজার থেকে ১৮
হাজার মেগাওয়াট হয়ে যায়।
সেচে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। বিদ্যুৎ
বিভাগ বলছে, এখন পর্যন্ত দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে গত বছরের
৩০ এপ্রিল, ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট। এরপর আর কখনো ১৬ হাজার মেগাওয়াটে যায়নি
উৎপাদন, বরং বিদ্যমান সংকটের কারণে সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে
উৎপাদন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ মার্চে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার এবং
এপ্রিলে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ধরেছে। ঘাটতি পূরণে আগের মতো
এবারের গ্রীষ্মেও লোডশেডিং করতে হতে পারে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ
সম্পদ উপদেষ্টা সম্প্রতি গ্রীষ্মের প্রস্তুতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সভা শেষে
সাংবাদিকদের বলেছেন, এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে।
দেশে
কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য ব্যাপক
শিল্পায়ন প্রয়োজন। আর সে জন্য প্রয়োজন ব্যাপক অবকাঠামোগত সুবিধা, জ্বালানি ও
বিদ্যুতের সহজলভ্যতা। বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে
আমাদের ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের সবাইকে
বিদ্যুৎ ব্যবহারে যথাসম্ভব সাশ্রয়ী হতে হবে। বাস্তবতা বিবেচনা করেই
লোডশেডিং করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভোক্তাদের ভূমিকাটাই প্রধান। ভোক্তারাও
নিশ্চয় তা উপলব্ধি করতে পারবে। কিন্তু পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না
চলে যায় কিংবা লাগামহীন না হয়ে পড়ে সে জন্য এখন থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কতা
অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে দেশে
রপ্তানিমুখী শিল্পসহ সামগ্রিকভাবে শিল্পোৎপাদন, সেচ সুবিধা এবং অতি জরুরি
কিছু সেবা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার,
বিপণিবিতান, দোকানপাট, অফিস-আদালত এবং বাড়িঘরে আলোকসজ্জাসহ কম গুরুত্বপূর্ণ
কিছু ক্ষেত্রে বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের সবাইকে সচেতনতার
পরিচয় দিতে হবে।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে সরবরাহব্যবস্থার
আধুনিকায়ন দ্রুততর করতে হবে। বিদ্যুৎ সুবিধা কিভাবে আরো সুলভ ও সহজলভ্য করা
যায় সেই চেষ্টা চালাতে হবে। সঞ্চালনব্যবস্থা যেন ভেঙে না পড়ে সেদিকে
দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা আশা করি, বিদ্যুতের এই সংকট দ্রুতই কেটে যাবে।