জাতিসংঘের
মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে পাশে রেখে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ
ইউনূস রোহিঙ্গাদের দ্রুত তাদের মাতৃভূমিতে পাঠানোর আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছেন।
পরের ঈদটি যেন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নিজ ভূমিতে ফিরে করতে পারেন, সেজন্য
নিজের প্রচেষ্টার কথা রোহিঙ্গাদের সামনে তুলে ধরেছেন ইউনূস; এজন্য তাদের
কাছে দোয়াও চেয়েছেন।
শুক্রবার উখিয়ায় আশ্রয় শিবিরের ২০ নম্বর ক্যাম্পে
লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে শরিক হয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন
ইউনূস, যা রোহিঙ্গাদের কাছেও সহজবোধ্য।
তিনি বলেন, “আল্লার হাছে দোয়া গরি, সামনর ঈদত যেন অনারা নিজর বাড়িত যাইয়েরে ঈদ গরিন ফারন।”
দ্রুত প্রত্যাবাসনের বিষয়ে উদ্যোগ নিতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলবেন বলে আশ্বস্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা।
চার
দিনের সফরে বাংলাদেশে আসা গুতেরেসকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ
বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে কক্সবাজার পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা।
সেখানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাস। শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষের দেশে ফেরা নিয়ে কয়েক বছর ধরেই দেন দরবার চলছে।
মিয়ামানমারে
রোহিঙ্গাদের ধনসম্পদ থাকার কথা তুলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা বলেছেন
সেখানে আপনাদের অনেক জায়গা-জমি রয়েছে, এখানে বোঝা হয়ে থাকতে চান না।
“যত তাড়াতাড়ি পারা যায় নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বিশ্বকে বুঝিয়ে দেন, আমরাও পারি। আপনারা সবাইকে খবর দেন, যেন নিজেদের বাড়ি ফিরতে পারেন।”
কক্সবাজারের
উখিয়ায় শুক্রবার লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেন প্রধান উপদেষ্টা
মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
কক্সবাজারের
উখিয়ায় শুক্রবার লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ
ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিব নানা ব্যস্ততার মধ্যেও রোহিঙ্গা প্রতাবাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা।
চট্টগ্রামের
আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, “এত কিছুর ভেতরে অনারার দায়িত্ব হত গুরুত্ব
সহকারে বিবেচনা গরের আজিয়া ইয়াত উপস্থিত থাকনর মাধ্যমে ইয়ান বুঝিত পাইত্য
লাইগন্য। হত গুরুত্ব দিয়ে তাইন।
“এ দুরততুন আইয়েরে অনারার লাই ইফতার
গরিব আর অনারার খুজহবর লইব। দুঃখগান বুঝিত পরিব যাতে তাইন ইয়ানর সমাধান
গরিত পারে। হাজেই বেয়াক্কুনর পক্ষত তো শুকরিয়া জানাই।”
তার এই বক্তব্যের
অর্থ দাঁড়ায়, “তিনি (জাতিসংঘ মহাসচিব) প্রত্যাবাসনের দায়িত্ব নিজে
নিয়েছেন। এত ব্যস্ততার ভেতরে বেশ গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন বলেই আজ ইফতারে
উপস্থিত হয়েছেন, যেন দুঃখকষ্ট অনুধাবন করে তা সমাধান করতে পারেন। এজন্য
উনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আজ খুব খুশি হলাম
আপনাদের সঙ্গে দেখা হয়ে। আমিও চেষ্টা করব জাতিসংঘ মহাসচিবকে মনে করিয়ে
দিতে, যেন কাজটা (প্রত্যাবাসন) দ্রুত হয়। ধন্যবাদ সবাইকে।”
অনুষ্ঠানে গুতেরেস বলেন, প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান।
রোহিঙ্গাদের
বরাদ্দ কমানোর পরিণতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটা হবে নিয়ন্ত্রণহীন
দুর্যোগ, যেটাকে আমরা নিতে পারব না। মানুষ দুর্ভোগ পোহাবে, এমনকি মারা
যাবে।
“সুতরাং আমি ততক্ষণ পর্যন্ত কথা বলা থামাব না, ততক্ষণ না
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটা বুঝবে যে, বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের
জন্য সহায়তার বাধ্যবাধকতা তাদের রয়েছে।”
ইফতার শেষ করেই ইউনূস ও গুতেরেস সড়ক পথে কক্সবাজার বিমানবন্দরে ফেরেন। রাত ৮টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরেন তারা।