নিজস্ব
প্রতিবেদক।। যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন দলের জন্য কাজ করে যাবো। বিএনপি
আমার অস্তিত্ব। দল আমাকে দূরে সরিয়ে রাখলেও আমি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে
পিছপা হবো না। আমি মারা গেলেও যেন বিএনপি’র পতাকায় মুড়িয়ে আমাকে দাফন করা
হয়। ২০২২ সালে দল আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি দল ছাড়িনি। নিরলস ভাবে দলের
জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তিন বছর অতিবাহিত হলেও আমি আমার কাজ বন্ধ করিনি।
কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের দুবারের সাবেক মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির
যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টকে
দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে সাক্কু বলেন, শেখ
হাসিনা সরকারের অধীনে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ
নিতে তিনবার তুলে নিয়ে চাপ দাওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন। এসব তাকে রাজধানীর
বাসা থেকে তুলে নিয়ে একটি বাহিনীর পক্ষ থেকে পাস করিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিও
দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি। আওয়ামী লীগের তৎকালীন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদও তাকে পাস করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও
সকল প্রস্তাব নাকচ করেন সাক্কু।
সাক্ষাৎকারে সাক্কু আরও বলেন, আমি
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের দুবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি।কুমিল্লার মানুষ
আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন। কুমিল্লার মানুষের কারণেই আমি দলীয় সিদ্ধান্তের
বাইরে গিয়ে ২০২২ সালের সিটি নির্বাচনে অংশ নিই।তখন দলের হাই কমান্ডকে
বলেছিলাম, সিটটা বিএনপির সিট। এখানে বিএনপির ভোটব্যাংক। অন্য কোনো দল এখানে
কোনোদিন জিততে পারবে না অথচ দল আমার কথা আমলে না নিয়ে উল্টো বহিষ্কার
করেন।
সামনের নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে সাক্কু বলেন, যে নির্বাচন
আগে হবে আমি দলের কাছে সেটির মনোনয়ন চাইব।হোক জাতীয় কিংবা সিটি কর্পোরেশন
নির্বাচন।সেটিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আশা করছি দল বহিষ্কারের আদেশ
প্রত্যাহার করে আমাকে মনোনয়ন দেবে।
কুমিল্লার বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান
নিয়ে সাক্কু বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে ইফতারসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে যাচ্ছি।
দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সাথে আমার যোগাযোগ রয়েছে। তিন বছর হলো বহিষ্কার করা
হলো, কিন্তু এই তিন বছরে আমার তিনজন নেতাকর্মীও আমাকে ত্যাগ করেনি। আমি
আমার নেতাকর্মীদের সংগঠিত রেখে যাচ্ছি। সরকার পতনের আগেকার দলের প্রতিটি
কর্মসূচি পালন করেছি। মহাসচিব আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন কাজ করে
যাও। আমি একটা কর্মসূচিতেও বসে থাকিনি।
সাক্কু বলেন, আমাকে অন্য দলে
নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আমি জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে
বিচ্যুত হইনি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আমাকে ডেকে বলেছিলেন, তুমি জাতীয়
পার্টিতে যোগ দাও, তোমার স্ত্রীকে এমপি বানিয়ে দেবো। কিন্তু আমি তাকে
সরাসরি বলেছিলাম, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে সরে যেতে
পারবো না।
২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন
বাহারের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য একটি বাহিনীর সদস্যরা আমাকে
বাসা থেকে তিনবার তুলে নিয়ে যায়। একবার নিয়ে গিয়েছিল সাবেক মন্ত্রী হাছান
মাহমুদের কাছে। হাছান মাহমুদ আমাকে পাস করিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা
করেছিলেন।বাহিনীটি আমাকে গুম করে ফেলার হুমকিও দিয়েছিল।কিন্তু তাদের লোভে
কিংবা ভয়ে পড়িনি। আমি শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক। যতদিন বাঁচব, জিয়াউর
রহমানের আদর্শ ধারণ করে দলের জন্য কাজ করে যাবো। দল আমাকে অনেক কিছুই
দিয়েছে। আমি দলের প্রতি সবসময়ই কৃতজ্ঞ।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কু বিএনপি থেকে অব্যাহতি
নিয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করে প্রথমবারের মতো মেয়র হোন। এরপর
২০১৭ সালে তিনি বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আবারও মেয়র
নির্বাচিত হোন।২০২২ সালের ১৫ জুন দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে
অংশ নেন।এজন্য দল তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে। বহিষ্কার হওয়ার আগে
মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক
ছিলেন। তৃতীয় সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী
লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কাছে ৩৪৯ ভোটে হেরে যান
সাক্কু। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর মেয়র আরফানুল হক রিফাতের মৃত্যুতে মেয়র
পদটি শূন্য হয়ে পড়ে।পরে ২০২৪ সালের ৯ মার্চ সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয়। ওই উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হন মনিরুল হক সাক্কু।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনার কাছে ২২ হাজার ভোটে হেরেছিলেন
সাক্কু। অবশ্য সেই নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, ভোটারদের কেন্দ্রে
আসতে না দেওয়াসহ নানান অভিযোগ ওঠেছিল তাহসিন বাহার সূচনার বিরুদ্ধে।