প্রকাশ: রোববার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ২:৩৭ এএম আপডেট: ১৬.০৩.২০২৫ ২:৩৯ এএম |

প্রাচীন ভারতে সতীদাহ প্রথা ছিল একটি নিষ্ঠুর সামাজিক রীতি। মৃত স্বামীর চিতায় সদ্য বিধবা স্ত্রীকে জোর করে আত্মাহুতি দিতে বাধ্য করা হতো। রাজপরিবার এবং উচ্চ বর্ণের হিন্দু সমাজে সতীদাহের প্রচলন ছিল। তারা বিশ্বাস করত, স্ত্রী স্বামীর মৃত্যুর পর বেঁচে থাকলে তার প্রতি অসতীত্ব ও আনুগত্যহীনতার প্রতীক হতো। সমাজে বিশ্বাস ছিল, সতীদাহ করলে নারী স্বর্গ লাভ করবেন এবং স্বামীর আত্মাও মুক্তি পাবে। ইতিহাসবিদদের মতে, সতীদাহ প্রথা সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৫০০-১০০০ সালের মধ্যে বৈদিক যুগে শুরু হয়। রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। ব্রিটিশ শাসনামলে গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর সতীদাহ প্রথা আইন করে নিষিদ্ধ করেন।

প্রাচীন বাংলায় সতীদাহের বহু ঘটনা ঘটেছে। ২০৬ বছর আগে ১৮১৭ সালের ১৬ আগস্ট লেস্টার ক্রনিকল পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদে কুমিল্লার একটি সতীদাহের ঘটনা প্রকাশিত হয়। তাতে সেসময় কিভাবে সতীদাহ হতো তার একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৮১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। রাজার আত্মীয় ও বিধবার দাহ হয়েছিল সন্ধ্যায়। সংবাদটিতে বলা হয়, কুমিল্লার কাছে সতীদাহের ঘটনা ঘটেছে, যা ত্রিপুরা জেলার সদর স্টেশনের কাছে (সম্ভবত ঠাকুরপাড়া মহাশ্মশান)। যে মহিলা আত্মাহুতি দিয়েছিলেন, তিনি রাজার আত্মীয় ছিলেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মৃত স্বামী ও তার বিধবাকে একটি খাটিয়ায় করে বলিদান স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়, দু'জনকেই চমৎকারভাবে সাজানো হয়েছিল। মহিলা নিজেই প্রস্তুতি তত্ত্বাবধান করেছিলেন এবং শেষকৃত্যের স্তূপে আরও বেশি জ্বালানি আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা তিনি সারারাত পোড়ানোর জন্য যথেষ্ট বড় নয় বলে মনে করেছিলেন। বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালনের পর, তিনি স্তূপে উঠে বসেন; মৃতদেহটি তার পাশে রাখা হলে তিনি তাকে বাহুতে জড়িয়ে ধরেন। সঙ্গে সঙ্গে আগুন জ্বালানো হয়, যখন চারপাশের জনতার চিৎকার এবং ঢাক ও অন্যান্য যন্ত্রের শব্দের কারণে মহিলার গোঙানি শোনাও যায়নি।
মোগল শাসকরা সতীদাহ প্রথাকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিরুৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু রাজপুত ও হিন্দু জমিদারদের মধ্যে সতীদাহ প্রথা অব্যাহত ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলায় সতীদাহ প্রথার হার বেড়ে যায়। ১৮১৫-১৮২৮ সালের মধ্যে বাংলায় বার্ষিক প্রায় ৬০০-৮০০টি সতীদাহ ঘটনার রেকর্ড ছিল।