গত
পর্বে অর্থাৎ কল্যাণের প্রতি আহবান (২) যা কুমিল্লার কাগজে শনিবার
১৫/০৩/২০২৫ইং ছাপা হয়েছে তার মধ্যে ওয়াজ নসিহতসহ যে কোন প্রকার কথাবার্তা
বর্ণনা করার পাঁচটি কৌশলের বিষয় নূর নবিজী দঃ এর হাদিস থেকে আমরা জানতে
পেরেছি।
এই পাঁচটি বিষয় যদি আমরা খেয়াল রাখতে পারি তবেই আমাদের
উদ্দেশ্য সফলতার মুখ দেখবে। কেননা মনের প্রভাব বড় প্রভাব। এটা জাগাতে পারলে
তবেই এর উপর মানুষ আমল করতে থাকে এবং বাস্তবায়নের জন্য সর্বপোরি চেষ্টায়
লিপ্ত হয়ে যায়।
রাসুল করিম দঃ এরশাদ করেন সতর্ক থাক ও জেনে রাখো,
মানুষের দেহে একটি গোল্ডের টুকরা আছে যদি সেটি ঠিক থাকে তাহলে তোমার সবই
ঠিক আর যদি সেটি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তোমার সবুকিছুই শেষ। সতর্ক হয়ে খেয়াল
রখ সেটি হলো অন্তর।" কিন্তু আমরা এর খেয়ালই করিনা বরং আমরা করি তার
সম্পূর্ণ বিপরীত। না রাখি সময়ের প্রতি খেয়াল না করি মানুষের আগ্রহের
তোয়াক্কা। আমার আলোচনা মানুষ কি আগ্রহ নিয়ে শুনতেছে নাকি পাগলের প্রলাপ মনে
করতেছে সেদিকে আমাদের খেয়ালই থাকেনা। মাইক পাইছি তো পাইছি, সুযোগ পাইছি তো
পাইছি একে হাত ছাড়া করা যাবেনা মাইক ও জনগণের বারোটা বাজিয়ে ছেড়ে দেব। আর
বিশেষ করে ওয়াজ মাহফিলের ক্ষেত্রে আরও সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। যাঁরা
ধর্মের প্রতি ও কল্যাণের প্রতি মানুষদেরকে আহবান করেন তাঁরা অবশ্যই
কড়াকড়িভাবে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। কেননা রাসুল দঃ এশার নামাজের পূর্বে
ঘুমানো এবং এশার নামাজের পর কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। এটা সন্মানিত
ওলামায়ে কেরাম খুব ভাল করেই জানেন। এখন রাসুল করিম দঃ যে সময়ে কথাবার্তা
বলা অপছন্দ করতেন সে সময়ের ওয়াজ নসিহতে কি কোন বরকত বা হেদায়াত আশা করা
যায়? কখনই না। তারপরও যেহেতু আমাদের দেশের পরিস্থিতি এমন হয়ে গিয়েছে। আসুন
না একটু পরিবর্তন করি। নিজে বদলে যাই, সমাজকে বদলে দেই। নিজে পরিবর্তন হই,
সমাজকে পরিবর্তন করি। হেদায়াতের মালিক মহান আল্লাহ। চেষ্টা করা আপনাদের
আমাদের সকলের। আর একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যেন যাকে তাকে দিয়ে এই মহান
দাওয়াতী কাজ করানো না হয়। আক্বিদা, ঈমান, আমল ও যে বিষয়ে যিনি পারদর্শি এমন
বিজ্ঞ লোক দিয়ে যাতে দাওয়াতী কাজ করানো হয়। আমরা সমাজে দেখতে পাই ওয়াজের
মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে রং তামাশাও চলে। গলার সুর দিয়ে বিবেচনা করা হয়
মাহফিলগুলো। মনে রাখবেন ভাইরাল হওয়া এক জিনিস আর হেদায়াত হওয়া বা পাওয়া
আরেক জিনিস। দাওয়াতী কাজ হাসি ঠাট্টার বিষয় নয়। আবার অনেককে দেখা যায়
ওয়াজের নামে মঞ্চে উঠে কৌতুক ও মিথ্যা বানোয়াট কিচ্ছা কাহিনী দিয়ে ওয়াজের
কাজ শেষ করে চলে আসেন। আর শ্রোতাদেরকেও দেখা যায় ঐ কৌতুক বক্তা আর গান বা
সুর ওয়ালা বক্তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মাহফিল কমিটিও খুশি। অধিকাংশরেই
হেদাযয়াতের চিন্তা নাই। মাহফিল কমিটির নিয়্যত ভাইরাল হওয়া, বক্তার নিয়্যত
ভাইরাল হওয়া, শ্রোতার নিয়্যত মজা পাওয়া ও ভাইরাল হওয়া। ফলাফল নিয়্যত
অনুযায়ী যা হওয়ার তাই হয় হেদায়াত আর হয়না। আর যদি সময়ের দিকে খেয়াল করি
তাহলে অবস্থা আরও বেগতিক। রাত একটা দুইটা পার হয়ে যায় তারপরও কোন হুশ
আমাদের থাকেনা। এভাবে যদি বলতে যাই তাহলে অনেক বলা যাবে শেষ হবেনা। দয়া করে
কেউ ভুল বুঝবেন না। আর আরেকটি এমন সমাবেশের উদাহরণ দিবেন না। কেননা খারাপ
জিনিসের উদাহরন ও প্রমান কোনটাই হয়না। আসুন আমরা পরিবর্তন আনি। আক্বিদা,
ঈমান ও আমল ওয়ালা বিজ্ঞ ব্যাক্তি দ্বারা মাহফিলগুলো সাজাই এবং সময়
সর্ব্বোচ্চ রাত ১০-১১টা সীমাবদ্ধ করে ফেলি। ছোট থাকতে দেখতাম মানুষ
মাহফিলে যেত আর ফিরে আসতো চোখের অশ্রুতে বুক ভাসিয়ে আর হেদায়াত নিয়ে। সেই
পরিবেশ কি ফিরিয়ে আনা যায়না? অবশ্যই যায় শুধু মন মানসিকতা, চিন্তা ভাবনা ও
আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন। একদিনে হয়ত তা সম্ভব হবেনা। আসুন না শুরু করি।
আমরা এবং বর্তমান প্রজন্ম যদি শুরু করে দিয়ে যেতে পারি তাহলে হয়ত আমরা
দুনিয়ায় থাকবনা
কিন্তু এমন একটি সময় আসবে যখন সারা দেশ পরিবর্তন হবে,
দেশের মানুষগুলোও পরিবর্তন হবে। আর যদি না পারি তাহলে ফলাফল মহান আল্লাহর ঐ
বানী" আর আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের
অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করেনা। তাদের চোখ রয়েছে তার দ্বারা
দেখেনা। তাদের কান রয়েছে তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত বরং
তার চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হলো গাফেল, শৈথিল্য পরায়ণ।" পারা-৯। সুরা-আরাফ।
আয়াত-১৭৯। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াতের আলোতে আলোকিত করুন। আমিন।
(আপাততঃ সমাপ্ত)
প্রধান ইমাম ও খতীব, কান্দিরপাড় কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ ও কেন্দ্রিয় ঈদগাহ, কুমিল্লা।