হঠাৎ করেই রবিবার (১৬ মার্চ) কুমিল্লা সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসেরকার্যক্রম প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গার মূল দলিলের পাতা পরিবর্তন করে নতুন পাতা যুক্ত করে ভলিউমে (বালাম বই) উঠানোর জের ধরেই রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম বন্ধ ছিলো বলে গুঞ্জন উঠেছে। যদিও দলিলের পাতা পরিবর্তনের বিষয়টি অস্বীকার করে সদর সাবরেজিস্ট্রার বলছেন- ‘ইন্টার্নাল বিশৃঙ্খলার’ কারণে দলিল নিবন্ধনের কার্যক্রম ২০ মিনিটের মতো বন্ধ ছিলো। দলিল লিখকদের সহকারী এবং দালালদের তৎপরতা কমাতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিস সংশ্লিষ্ট অন্তত ৫ জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাব রেজিস্ট্রি অফিসে পুরনো একটি দলিল ভলিউমে উঠানোর সময় মূল দলিলের দুটি পাতা ছিঁড়ে ফেলে সেখানে নতুন দুটি পাতা যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এরপর ওই দলিলের নকল তুলতে গেলে বিষয়টি সাবরেজিস্ট্রারের নজরে আসে। এরপর শুরু হয় তোড়জোড়। এ ঘটনায় জড়িত একজন নকল নবীশকে ডেকে এনে রাগারাগি এবং পুরনো দলিলের পাতা খোঁজে পেতে তৎপরতা চালাতে থাকেন তিনি। দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনার জের ধরে প্রায় দুই ঘন্টা ধরে দলিল নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত ওই কপি পাওয়া গেছে কি- না তা জানা যায়নি।
কুমিল্লা সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের মোহরার কাম অফিস সহকারী শাহ আলম বলেন- দুপুরের দিকে একটা ঝামেলার কারণে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম কিছুক্ষণ বন্ধ ছিলো। তবে পরে আবার চালু হয়েছে।
নকল নবীশ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাইদুল ইসলাম পারভেজ বলেন, একজন নকল নবীশ দলিল থেকে ভলিউমে লিখতে গিয়ে কি যেনো উল্টা-পাল্টা করছে; এজন্য ম্যাডাম রাগারাগি করেছেন। এ সময় ঘন্টাখানিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
কোন দলিলের ঘটনা নিয়ে এমনটা হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা আমি বলতে পারবো না। বালাম তো সাব রেজিস্ট্রার ম্যাডামের কাছে। বালাম দেখলে তা বলা যাবে।
তিনি বলেন, অকারেন্স হয়েছে তৃতীয় তলার একটি কক্ষে। ম্যাডাম বন্ধ করে দিয়েছেন নিচতলার একটি কক্ষ। এ কক্ষ থেকে পাবলিক সব ধরণের সার্ভিস নেয়। কি কারণে তিনি সেই কক্ষ বন্ধ না করে পাবলিক সার্ভিসের কক্ষটি বন্ধ করে দিলেন তা বোধগম্য নয়।
একই তথ্য দিয়েছেন নকল নবিশ এসোসিয়েশনের সভাপতি কামাল হোসেন। তিনি বলেন, আমি রেকর্ড রুমে থাকি। ঝামেলার পর কিছুক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। পরে আবার ঠিক হয়ে গেছে। এর বেশি কিছু জানি না।
সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রার লুৎফুননাহার লতা বলেন- দলিলের পাতা পাল্টানোর মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। আজকে কার্যক্রম বন্ধ ছিলো ভিন্ন কারণে। তাও ২০ মিনিটের মতো। এখানে দলিল লিখকদের সহকারীরা হুট করে রুমে ঢুকে পড়ে। এতে করে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় এবং দালালরাও সুযোগ পায়। এরকম সুযোগে আগে একবার এখানে দলিলে ঘষামাজার মতো ঘটনা ঘটেছিলো। তখন আমি এখানে ছিলাম না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর যেনো এরকম কোনো ঘটনা না ঘটে- এজন্য বাড়তি সতর্কতা হিসেবে স্টাফ মিটিং করেছি। এসময় প্রায় ২০ মিনিট দলিল নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ ছিলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছার বলেন, সাবরেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম বন্ধ থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই। দলিলের পাতা পরিবর্তনের বিষয়েও কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।