বছরে
দুটি ঈদ বাঙালি মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব। কাজের প্রয়োজনে যে
যেখানেই থাকুক, এ সময় সুস্থ-সবল প্রায় সবাই নাড়ির টানে পরিবার বা স্বজনদের
কাছে ফিরবেই। সামনে ঈদুল ফিতর। এখনো সপ্তাহ দুয়েক বাকি।
এরই মধ্যে
ট্রেন, বাস ও লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। পত্রিকান্তরে
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রেলপথে অনলাইনে অগ্রিম টিকিট কেনার অ্যাপে প্রথম
দিন সকাল ৮টার মধ্যেই ৭৩ লাখ বার টিকিট কেনার চেষ্টা হয়েছে। সোয়া ৮টার
মধ্যে বিক্রি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টিকিট। টিকিট না পেয়ে অনেকে হতাশা
প্রকাশ করেছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, ঈদের আগে ট্রেন, বাসসহ অন্যান্য
পরিবহনে কয়েক কোটি মানুষ চলাচল করবে। কিন্তু এবার নিরাপত্তা নিয়ে সবচেয়ে
বেশি আতঙ্কে রয়েছেন বাস মালিকরা। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে
যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী যানবাহনে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে
পরিবহন খাতের অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে রাতে দূরপাল্লার বাসে
ডাকাতির আশঙ্কা বেশি করছেন।
গবেষণা ও সচেতনতামূলক প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য
রোডের তথ্য মতে, গত আট মাসে সড়ক, রেল ও নৌপথে চার হাজার ৫০৫টি ছিনতাই এবং
২৫৫টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু সড়কপথে এক হাজার ৮৬৮টি ছিনতাই আর
১১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে ১৬৮ জন। এ ছাড়া ফুটপাত বা
চলার পথে দুই হাজার ৪৩২টি ছিনতাই ও ৩৫টি ডাকাতির ঘটনায় এক হাজার ১৭ জন আহত
এবং একজন নারীসহ দুজন নিহত হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের
(বিআরটিএ) তথ্য মতে, গত বছর জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত যাত্রীবাহী
বাসের সংখ্যা ৫৪ হাজার ৪৭৪।
এর মধ্যে আন্ত জেলা বাস প্রায় ২২ হাজার। আর
রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে প্রায় ১০ হাজার বাস। সড়ক পরিবহন
মালিক সমিতি সূত্র জানায়, ঈদ ঘিরে রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলায় একটি বাস
দিনে অন্তত তিনটি করে ট্রিপ দেবে। প্রতি ট্রিপে গড়ে ৪০ জন যাত্রী থাকলে ১০
হাজার বাসে দিনে আট লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। এবার ডাকাত আতঙ্ক নিয়েই
যাত্রীসেবা দিতে হবে। এ অবস্থায় সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মহাসড়ক ও
আঞ্চলিক সড়কে, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা যথেষ্ট পরিমাণে
বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। টহল বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ
থেকে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সম্প্রতি হাইওয়ে পুলিশ স্পেশাল
হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর (০১৩২০-১৮২২০০) চালু করেছে। জরুরি পরিস্থিতিতে এই নম্বরে
যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া যাবে।
আমরা চাই, এবারের ঈদ
যাত্রা নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হোক। ডাকাতি-ছিনতাই থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার
পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা রোধেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।