নতুন বছরের আড়াই মাস শেষ হয়ে গেলেও এখনও সব পাঠ্যবই হাতে পায়নি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। সরকারের পক্ষ থেকে দফায় দফায় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এতদিনেও সব বই পৌঁছেনি শিক্ষার্থীদের হাতে।
সবশেষ গত রবিবার (১৬ মার্চ) সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার কথা জানিয়েছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কিন্তু শেষ দফায় দেওয়া প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করতে পারেনি এনসিটিবি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) পর্যন্ত সব বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পৌঁছায়নি।
তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেছেন, ‘সব বই ছাপা শেষ হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবারের (২০ মার্চের) মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের দেওয়া সম্ভব হবে।’
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কাউসার-উজ-জামান রুবেল বলেন, ‘সব পাঠ্যবই চলে গেছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্যাকেটে কম বই যাওয়া কিংবা ছেড়া-ফাটা বের হলে রিপ্লেস করার বিষয় থাকতে পারে। তাছাড়া সব বই মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।’
তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, দুর্বল কিছু প্রিন্টার্স এখনও কিছু বই পাঠাতে সক্ষম হয়নি।
রেওয়াজ অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বছরের প্রথম দিন বই উৎসবও করা হতো সরকারিভাবে। তবে এবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া হলেও খরচ বাঁচাতে বই উৎসব করা হবে না। কিন্তু বছরের প্রথম দিন সামান্য কিছু বই শিক্ষার্থীদের দেওয়া হলেও বই না পেয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী খালি হাতে বাসায় ফেরে।
এরপর থেকে বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে সময় বেঁধে দিয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় পাঠ্যবই দেওয়ার। কিন্তু দফায় দফায় প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা করতে পারেনি এনসিটিবি।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে পাঠ্যবই দিতে না পেরে ৪ মার্চ এনসিটিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল ১০ মার্চের মধ্যে সব বই দেওয়া হবে।
তারও আগে গত ৯ জানুয়ারি ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছিলেন, ‘ক্যাবিনেট মিটিংয়ে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ক্যাবিনেটে বলা হয়েছে, আগামী মাসের মধ্যে সবার হাতে পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হবে।’
এরপর ১৩ জানুয়ারি শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীরা সব পাঠ্যবই হাতে পাবে।’
১০ মার্চ এনসিটিবির চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে মোট বইয়ের সংখ্যা ৩৯ কোটি ৬০ লাখের বেশি। এর মধ্যে সোমবার (১০ মার্চ) পর্যন্ত ছাপা হয়েছে ৩৮ কোটি ৭০ লাখ ৪ হাজারের মতো। প্রাথমিকের ৯ কোটি ১৯ লাখের মতো বইয়ের মধ্যে ছাপা হয়েছে ৯ কোটি ১৮ লাখের বেশি। সরবরাহ করা হয়েছে ৯ কোটি ১৬ লাখের বেশি। আর মাধ্যমিকের (ইবতেদায়ি মাদ্রাসাসহ) প্রায় ৩০ কোটি ৪১ লাখ বইয়ের মধ্যে সোমবার (১০ মার্চ) পর্যন্ত ছাপা হয়েছে ২৯ কোটি ৫১ লাখের বেশি। সরবরাহ হয়েছে ২৭ কোটি ২০ লাখের মতো।
গত সোমবার (১০ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেন, ‘আমদানি করা কাগজ খালাস করতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় সে বইগুলো ছাপানো সম্ভব হয়নি। তাছাড়া চীনের নববর্ষ ছিল। সে কারণেও এ প্রক্রিয়া কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে।’ (সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন)