ন্যায়
বিচার একটি সুপরিচিত ও সুন্দর কথা। পৃথিবীতে এমন কাউকেই পাওয়া যাবেনা যে
ন্যায় বিচার চায়না। ন্যায় বিচার সমাজকে, রাষ্ট্রকে স্থিতিশীল, শান্তিময় ও
কলাণকর করে তুলে। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে ন্যায় বিচারের প্রধান পাঁচটি বিষয়।
এক-
সীমালংঘন না করা। দুই শিথিলতা না করা। তিন- অপরাধী যেই হোক অপরাধ প্রমাণিত
হলে তাকে কোন ক্রমেই ক্ষমা না করা বা ছেড়ে না দেওয়া। চার- ন্যায় বিচারের
রায় যথাসম্ভব দ্রুত বাস্তবায়ন করা। পাঁচ- কোন চাপ ও লোভের বশিবর্তী হয়ে
প্রবৃত্তির অনুসারী না হওয়া। এমন কি সেটা যদি নিজের বিরুদ্ধে বা নিজের
সন্তান, ভাইবোন, মা-বাবা, আত্মীয় স্বজন, নিজ দলের যেই হোক না কেন তার
ব্যাপরে ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যাবস্থা নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা
না করা। এর ব্যতিক্রম যদি করা হয় তাহলে তা হবে অত্যাচার ও বড় আপরাধ যা
সম্পূর্ণরূপে হারাম। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে ও বর্তমানে আমাদের দেশসহ সারা
বিশ্বের পরিস্থিতির দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই পৃথিবীতে অশান্তি,
বিশৃংখলা, সন্ত্রাস, খুন খারাবি, ধর্ষণ ও রাহাজানি ব্যাপক বিস্তারের কারণ
হলো ন্যায় বিচারের অভাব। যার কারণে খুনি খুন করে পার পেয়ে যায়। সন্ত্রাসি
সন্ত্রাস করে, দুর্নিতীবাজ দুর্নিতি করে, ধর্ষক ধর্ষণ করে আরও কত অপকর্ম
করে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। ন্যায় বিচারের যে পাঁচটি ধাপের কথা বলা হয়েছে
এর একটিতো (তিন নং) আমরা অহরহ বক্তাদের মুখে, সভা-সেমিনারে শুনতে শুনতে কান
ঝালাপালা ও বক্তাদের মুখের পানি শুকিয়ে যায় কিন্তু ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা
পায়না।
মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল করিমে এরশাদ করেন- তোমরা মহান
আল্লাহকে তোমাদের কৃতকর্মের সাক্ষী জেনে ন্যায় বিচারে দৃঢ় ও কঠোর থাকবে।
যদিও তা তোমাদের নিজেদের, পিতা মাতা ও আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধেও হয়। সে ধনী
হোক বা গরীব হোক মহান আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্টতর (অর্থাৎ উভয় সম্পর্কেই
জ্ঞাত, উভয়ই তাঁর নিকট সমান) সুতরাং তোমরা ন্যায় বিচার করতে প্রবৃত্তির
অনুসারী হইওনা। পারা-০৫। সুরা-নিসা। আয়াত-১৩৫। অন্য জায়গায় আল্লাহ রাব্বুল
আলামিন ন্যায়বিচার তো অনেক বড় বিষয় বরং সাধারণ কথাবার্তা বলতেও ন্যায় ও যা
সত্য তা বলার নির্দেশ
দিয়েছেন তার বান্দাদেরকে। কুরআনুল করিমে মহান
আল্লাহ ঘোষনা করেন- যখন তোমরা কথা বলবে সুবিচারের সহিত কথা বল যদি সে নিকট
আত্মীয়ও হয়। আল্লাহ তায়ালার অঙ্গীকার পূর্ণ কর। পারা-০৮। সুরা-আনয়াম।
আয়াত-১৫২। উপরের আয়াতগুলো যদি আমাদের জীবনে, সমাজে ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা
থাকতো তাহলে এই পৃথিবীতে কোন প্রকার অশান্তি থাকতোনা। আমরা অধিকাংশ
ক্ষেত্রে দেখি ক্ষমতাবানদের দাপটে, অর্থের কাছে ও কোন কোন বন্ধনের কাছে
ন্যায় বিচার জিম্মি হয়ে আছে। আরও আশ্চার্য্য লাগে যখন দেখি যে, প্রমাণিত
অপরাধির পক্ষেও কাউকে কাউকে সাফাই গাইতে। যদি আমরা এর থেকে বেরিয়ে এসে সত্য
ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে পারি তবে উভয় জগতেই রয়েছে আমাদের জন্য কল্যাণ।
তাই নূর নবিজী দঃ এরশাদ করেন- কিয়ামতের দিন লোকদের মধ্যে ন্যায় পরায়ণ শাষকই
মহান আল্লাহর নিকট সবচাইতে প্রিয় ও নিকটে অবস্থানকারী হবে। পক্ষান্তরে
তাদের মাঝে অত্যাচারী শাষক মহান আল্লাহর নিকট ঘৃণিত ও তাঁর নিকট হতে সবচেয়ে
দুরে অবস্থান করবে। তিরমিযি শরীফ ১ম খন্ড। হাদিস শরীফ নং-১৩২৯। অন্য
হাদিসে রাসুল করিম দঃ বলেন- আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যাকে জনগণের দায়ীত্ব
দিয়েছেন কিন্তু যদি সে জনগণের প্রতি খিয়ানতকারী হিসাবে
মৃত্যু বরণ করে
তার জন্য মহান আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিবেন। মুসলিম শরিফ ১ম খন্ড। হাদিস
শরিফ নং-১৪২। আরও অনেক লেখা যেত। জ্ঞানী ও সচেতন মহলের জন্য এতটুকুই
যথেষ্ট।
মহান আল্লাহ সবাইকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
আমাদের এই মাতৃভূমিকে ন্যায় বিচারের ও শান্তির জন্য কবুল করুন। আমিন বি
হুরমাতি রামাতিল্লিল আলামিন।
প্রধান ইমাম ও খতীব, কান্দিরপাড় কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ ও কেন্দ্রিয় ঈদগাহ, কুমিল্লা।