বাংলাদেশে
সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভুল তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে মার্কিন সেনেটর গ্যারি
পিটারসের সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার ঢাকার
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মিশিগান থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেট দলের সেনেটর
পিটারস প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচারের বিষয়টি তার কাছে তুলে ধরেছেন বলে প্রধান
উপদেষ্টার দপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে।
এতে বলা হয়, প্রায় এক
ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে তারা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং দুই
বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
মার্কিন
গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি
ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে হিন্দুসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের
ওপর নিপীড়ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন।
এর পরদিনই মার্কিন সেনেটরের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ নিয়ে অপপ্রচারের বিষয়ে তার সহায়তা চাইলেন।
তুলসী
গ্যাবার্ড বলেছেন, “হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয়
সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিনের দুভার্গ্যজনক নির্যাতন, হত্যা ও নিপীড়নের ঘটনা
মার্কিন সরকার এবং ডনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের একটা বড় উদ্বেগের
জায়গা।”
গ্যাবার্ডের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ‘গভীর উদ্বেগ ও হতাশা’
প্রকাশ করে সোমবার রাতেই বিবৃতি দেয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। তাতে বলা
হয়, “মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের এমন মন্তব্যের পেছনে কোনো তথ্যপ্রমাণ কিংবা
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। তারা এক তুলিতে পুরো জাতিকে অযৌক্তিকভাবে চিত্রিত
করেছে।
মঙ্গলবার সৌজন্য সাক্ষাৎকালে মার্কিন সেনেটর পিটারস প্রধান
উপদেষ্টাকে বলেন, মিশিগানের ডেট্রয়েট নগরীসহ তার নির্বাচনি এলাকায় অনেক
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বসবাস করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর
হামলার ঘটনায় তাদের অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, এই হামলা
নিয়ে অনেক ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে, যার কিছু অংশ যুক্তরাষ্ট্রেও পৌঁছেছে।
এটি সংখ্যালঘুদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস
তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, তার সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার
রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা যে কোনো বর্ণ, ধর্ম, গোষ্ঠী, লিঙ্গ বা সামাজিক
পরিচয়ের হোক না কেন।
তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের অগাস্টে
সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা ধর্মীয়
নয় বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। তবে তার সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে
দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।
মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন সেনেটরকে দেশের বিভিন্ন
শহর ও এলাকা সফরের আহ্বান জানিয়ে অন্যান্য মার্কিন রাজনীতিক, সাংবাদিক ও
মানবাধিকার কর্মীদের বাংলাদেশ ভ্রমণে উৎসাহিত করার অনুরোধ করেন। বলেন, যাতে
তারা দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির বাস্তব অবস্থা জানতে পারেন।
তিনি বলেন,
"আমাদের আপনাদের সহায়তা দরকার। অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের বাংলাদেশ
ভ্রমণের জন্য উৎসাহিত করুন। এভাবেই আমরা ভুল তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে লড়তে
পারব।"
সেনেটর পিটারস অন্তর্র্বতী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, গুরুত্বপূর্ণ
কমিশনগুলোর প্রতিবেদন এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সরকারের
পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান। বলেন, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক
উত্তরণের প্রত্যাশা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যদি
রাজনৈতিক দলগুলো কম মাত্রার সংস্কারে সম্মত হয়, তাহলে নির্বাচন ডিসেম্বরে
অনুষ্ঠিত হবে। তবে তারা বড় সংস্কার প্যাকেজে সম্মত হলে সাধারণ নির্বাচন
কয়েক মাস পর অনুষ্ঠিত হবে।
"নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। এটি উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে, যেমন আমরা অতীতে দেখেছি।''
ইউনূস
বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনগুলোর প্রস্তাবিত সংস্কারে সম্মত হলে তারা
‘জুলাই চার্টার’ এ সই করবে। জুলাই চার্টারই দেশের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণ
করবে।
দুই নেতা সামাজিক ব্যবসা, দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব এবং দারিদ্র্য
মোকাবিলার হাতিয়ার হিসেবে মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে আলোচনা করেন। তারা একমত হন,
এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং অন্যান্য দেশেও কার্যকরভাবে দারিদ্র হ্রাসে
ভূমিকা রাখতে পারে।