গতকাল
শুক্রবার ছিলো এই বৎসরের মাহে রামাদ্বানের মাগফিরাতের অংশের শেষ দিন।
লেখাটি যখন লিখছি -নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে দু'টি কারণে।
আমার লেখাটি কি আমি পড়ে যেতে পারবো? আগামীকাল (আজ) পর্যন্ত কি আমি বেঁচে
থাকবো এই পৃথিবীতে? নাকি আমার লেখা পত্রিকায় ছাপানোর পূর্বেই আমি পৌঁছে
যাব অন্য এক জগতে যেখান থেকে কেউ কোনদিন ফিরে আসেনা। সবচেয়ে বড় দ্বিতীয়
কারণটি হলো- মাহে রামাদ্বানকে মহান আল্লাহ দান করলেন যে কারণে আমি কি তা
অর্জন করতে পেরেছি? আমি কি রহমতের অংশের ফসল আমার আমলনামায় তুলতে পেরেছি?
এরপর এলো মাগফিরাত। ক্ষমা ক্ষমা আর ক্ষমা। পেরেছি কি নিজের আমলনামা থেকে
সকল পাপাচার মুছে ফেলতে? পেরেছি কি মাগফিরাতের সুযোগ কাজে লাগাতে? যেখানে
মহান আল্লাহ সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করে রেখেছিলেন। কোন কিছুই কারোও জন্য
অপেক্ষা করেনা। আর সময়তো একবারেই না। সেই অপেক্ষা না করার ধারাবাহিকতা ও
সৃষ্টির নিয়ম অনুযায়ী রামাদ্বানও চলে যাচ্ছে আমাদের কাছ থেকে। যাঁরা পেরেছে
এবং কাজে লাগিয়েছে তাঁরাতো কতই না সৌভাগ্যবান। তাঁদেরকে সুফারিশের সুসংবাদ
দিয়ে দিয়ে রাহমতের অংশ বিদায় নেয়। মাগফিরাতের অংশ বিদায় নেয়। নাজাতের অংশ
বিদায় নেয়। লাইলাতুল কদর বিদায় নেয়। আর যারা তা পারেনি। তাদেরকে ধিক্কার
দিয়ে দিয়ে আর আফসোস করতে করতে এই বলে বিদায় নেয় যে- আমি রামাদ্বান রহমত
নিয়ে এসেছিলাম তোমাকে রহমত দেওয়ার জন্য, কিন্তু তুমি তা নিতে পারলেনা। আমি
এসেছিলাম ক্ষমার অপার সুযোগ নিয়ে কিন্তু তুমি নিজকে গুনাহমুক্ত করতে
পারলেনা। আমি এসেছিলাম তোমাকে নাজাতের ব্যবস্থা করার জন্য, কিন্তু তুমি তাও
কাজে লাগাতে পারনি। পুরো মাসের মধ্যে শেষ দশদিনের বেজোড় রাত্রিতে এসেছিলাম
শবে ক্বদর নিয়ে যা হাজার মাসের তুলনায় অধিক উত্তম, সেটাও দুনিয়ার
ব্যস্ততায় ও পার্থিব লোভে এত বিভোর ছিলে সেদিকে খেয়ালই করনি। সময়ই ছিলনা
তোমার এ বিষয়গুলি বিবেচনার। ধিক্কার জানাই। হায় আফসোস তোমার জন্য। তোমার মত
হতভাগা পৃথিবীতে আর কেউ নেই। এই ভাবেই কারও কারও কাছ থেকে বিদায় নেয়
পবিত্র মাহে রামাদ্বানের প্রতিটি দিন ও দশক। মাগফিরাতও বিদায় নিয়ে যাচ্ছে
এভাবেই। বিদায় মাগফিরাতের দশক, বিদায় মাগফিরাত। আবার হবে দেখা যদি মহান
আল্লাহ দয়া করে হায়াত দেন আগামী বছর পর্যন্ত। হয়তবা খেয়াল রাখতে পারিনি
তোমার প্রতি। কাজে লাগাইনি তোমাকে। নিজ নফসের কুমন্ত্রনায় ডুবে থেকেটি আপন
গুনাহের জগতে। তারপরও তোমার কাছে মিনতি করি আমার / আমাদের জন্য মহান রবের
নিকট একটু সুফারিশ করার। আশা যে ছাড়তে পারিনা হাজার কোটি গুনাহ থাকার পরও।
আর এই আশাতো স্বয়ং প্রভুই আমাদেরকে দিয়ে রেখেছেন। তাইতো নিরাশ হইনা। বিদায়
মাগফিরাত বিদায়। ক্ষমা করো আমাদের তোমার মেহমানদারীর ভুলক্রটিগুলো। তোমাকে
হারানোর বেদনায় অশ্রুশিক্ত নয়নে বিদায় দিলাম। তোমার সুফারিশ যেন নসিব হয়
আমাদের সবার জন্য। ক্ষমা ও মুক্তিপাক সারা বিশ্বের মুসলিম সমাজ সকল পাপাচার
ও অত্যাচার থেকে।
প্রধান ইমাম ও খতীব, কান্দিরপাড় কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ ও কেন্দ্রিয় ঈদগাহ, কুমিল্লা।