আয়েশা (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্য সময়ের তুলনায় রমজানের শেষ দশ দিনে আমল-ইবাদতে অধিক পরিশ্রম করতেন। (মুসলিম, ১১৭৫) আরও বর্ণিত আছে, শেষ দশক চলে এলে তিনি কোমর বেঁধে লাগতেন। নিজে রাত জেগে ইবাদত করতেন। পরিবারের লোকদের জাগাতেন। (মুসলিম, ১১৭৪ )
১. রাত জাগরণ করতেন: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রমজানের শেষ দশ দিনে প্রবেশ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) রাত জাগরণ করতেন। পরিবারের সবাইকে জাগিয়ে দিতেন এবং পূর্ণভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। 'রমজানের শেষ দশ দিনে রাসুলুল্লাহ (সা.) রাত জাগরণ করতেন।' (বুখারি, ৩/৪৭) উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রমজানের শেষ দশক আসত তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তার লুঙ্গি কষে নিতেন এবং রাতে জেগে থাকতেন ও পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (মুসলিম, ১১৭৪)
২. লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলেছেন: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের শেষ দশকে বা শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে তোমরা লাইলাতুল কদর তালাশ করো। (মুসলিম, ১১৬৫; বুখারি, ২০২৭)
৩. ইতিকাফ করতেন: রমজানের শেষ দশকে আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত রয়েছে, আর তা হলো, ইতিকাফ। পাপমোচন ও পুণ্য বৃদ্ধির অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল হলো ইতিকাফ। রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশ দিনে আমৃত্যু ইতিকাফ করেছেন। (বুখারি, ২০২৬) ৪. সদকাতুল ফিতর আদায় করতে বলেছেন: ঈদুল ফিতরের আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। সাধরণত রমজানের শেষ দশ দিনে মুসলমানরা সদকাতুল ফিতর আদায় করে থাকেন। সদকাতুল ফিতর নারী-পুরুষ, স্বাধীন-পরাধীন, শিশু-বৃদ্ধ, ছোট-বড় সকল মুসলিমের জন্য ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব।
দ্বিতীয় হিজরিতে উম্মতে মুহাম্মদির ওপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করার সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের 'সাদাকাতুল ফিতর' আদায় করার নির্দেশ দেন। একে সাধারণত রোজার 'ফিতরা' বলা হয়। এটা মূলত মাহে রমজানেরই নির্ধারিত সাদকা বা দান। বহু হাদিস দ্বারা সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মোট চারটি পণ্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা হতো। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমাদের সময় ঈদের দিন খাদ্য দ্বারা সদকা আদায় করতাম। আর তখন আমাদের খাদ্য ছিল জব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। (ইবনে মাজাহ, ২২৮২)
৫. ক্ষমা প্রার্থনা করতেন জিবরাঈল (আ.) এসে রাসুলুল্লাহ (সা.) (সা.)-কে বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি, যে রমজান মাস পাওয়ার পরও নিজের গুনাহ মাফ করে নিতে পারল না। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমীন। (ইবনে হিব্বান,
৯০৭; ইবনে খুজাইমা, ১৮৮৮)
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক