জন-আকাক্সক্ষা, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমকে অনেকেই এক নিশানায় দেখতে পারছেন না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা এবং তা পূরণের পথ নিয়েও মতভিন্নতা তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছিল। এর মধ্যে সাতটি কমিশন তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে।
পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কিন্তু সেই প্রচেষ্টার সফলতা এখনো স্পষ্ট নয়। অনেক বিষয়ে ভিন্নমত থাকার কথাও জানা যাচ্ছে। বেশ কিছু বিষয়ে এক দলের চাওয়ার সঙ্গে অন্য দলের চাওয়া পরস্পরবিরোধী হয়ে যাচ্ছে।
ফলে আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলছে সংস্কার বা রাষ্ট্র মেরামতের ভবিষ্যৎ।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি সুপারিশের ওপর রাজনৈতিক দলের মতামত নিচ্ছে। এর মধ্যে ৭০টিই সংবিধানসংক্রান্ত, ২৭টি নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারসংক্রান্ত। বিচার বিভাগসংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসনসংক্রান্ত ২৬টি ও ২০টি দুর্নীতি দমন কমিশনসংক্রান্ত।
এই সুপারিশে একমত, আংশিক একমত ও ভিন্নমতে ‘টিক’ চিহ্ন দিয়ে তা জানাতে ‘স্প্রেডশিট’ দেওয়া হয়েছে। তবে এর বাইরেও মতামত রাখছে দলগুলো। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাস অতিবাহিত হয়েছে। দেশব্যাপী দ্রুত নির্বাচনের দাবি ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। দেড় দশক ধরে নিজের ভোট নিজে দিতে না পারা ভোটাররা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।
প্রধান উপদেষ্টা এর মধ্যে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। বাস্তবতা বা মানুষের প্রত্যাশাও ক্রমশ সংক্ষিপ্ত প্যাকেজের দিকেই যাচ্ছে। যদিও অনেকে এখনো পূর্ণ সংস্কারের কথাই বলছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সোমবার বলেন, ‘আমি মনে করি, ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হলেও নির্বাচনকে সহায়তা করবে এমন অনেক সংস্কার প্রস্তাব নির্বাচনের অনেক আগেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মনে করে, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় কিছু সুপারিশ নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করা হোক। বাকি গ্রহণযোগ্য সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা যেতে পারে নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী মনে করে, আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে, তারপর নির্বাচন। আবার অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘ সময়ের জন্য নির্বাচন বিলম্বিত হলে নানাভাবে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আমরা আশা করি, ঐকমত্য কমিশন দেশ ও জাতির কল্যাণে দ্রুততম সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হবে এবং জাতি দ্রুততম সময়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার পাবে।