সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫
১৭ চৈত্র ১৪৩১
বইলেখা ও বইপড়া
জুলফিকার নিউটন
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫, ১:৩৯ এএম আপডেট: ২৮.০৩.২০২৫ ২:২২ এএম |


  বইলেখা ও বইপড়া মানুষটা চলে গেল। তার দেহ এখন ধুলো। তাঁর বইটি তাঁকে স্মরণে। রাখবে। সে বাঁচবে, কারও মুখে সেই বইয়ের উল্লেখে।-মিশরের একটি প্যাপিরাস (অহপরবহঃ ঊমুঢ়ঃরধহ ষরঃবৎধঃঁৎব-গ. খরপযষরবহ).
পুরনোদিনের মানুষেরা লেখক লেখাকে কী চোখে দেখতে উদ্বৃতি থেকে তার আভাস পাওয়া যাবে। ‘লেখক’ ও ‘বই লেখা’র অন্তর্গত ‘লিখ্’ ধাতুর অর্থ ‘আঁচড় কাটা’। আঁচড় কেটেই একদিন লিখতে হত। ‘আঁচড় কাটা’কে আলংকারিক অর্থে নিয়ে আমরা বলতেই পারি পাঠকের মনেও আঁচড়ই কাটতে চান লেখক। আর এই আঁচড় কাটতে গেলে তাঁর জোরালো অনুভূতি চাই সুন্দর প্রকাশের জন্যে। আর তারই জন্যে চাই নিরন্তর অধ্যয়ন। লিখতে যিনি চান তাঁকে পাঠক হতেই হয়। তা যদি না হয়, তাঁর লেখা হবে মুদ্রিত রচনা মাত্র। চিন্তাবিদ আলবার্ট উইগাম বলেছেন ঃঐড়ংঃং ঢ়বড়ঢ়ষব ংধু, দও’ফ লঁংঃ ষড়াব ঃড় নব ধ ৎিরঃবৎ. ডড়ঁষফ ঃযবু? ঘড়! ঞযবু ড়িঁষফ সবধহ ঃযবু ড়িঁষফ ংবব ঃযবরৎ হধসবং রহ ঢ়ৎরহঃ. ঐধৎফষু ড়হব ঢ়বৎংড়হ রহ ধ ঃযড়ঁংধহফ ধিহংঃ ঃড় ফড় ঃযব ড়িৎশ ড়ভ ধ ৎিরঃবৎ-ধ ষরভব ড়ভ যধৎফ ংঃঁফু ধহফ বীযধঁংঃরহম ধঢ়ঢ়ষরপধঃরড়হ?” 
লেখককে অনিবার্যভাবে বই পড়তেই হয়। এই পাঠ কখনও তাঁর নিজের বই লেখার বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত, কখনও বা তা তার বাইরেকার। দু’ধরনের পড়াই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায় আনন্দ আর উপলব্ধির পথে। ‘অধ্যয়ন’ শব্দটির মধ্যেই এই ‘এগিয়ে যাওয়া’র অর্থ নিহিত। নিজের  বই লেখার ব্যাপারে লেখক যতটুকু পড়েছেন, তা তাঁর আরও জানবার আগ্রহটা বাড়িয়ে দেয়। এ অন্বেষণের আনন্দ থাকলেও তা প্রয়োজনের সঙ্গে বাঁধা আর লেখার বিষয়ের বাইরে যে যদৃচ্ছ পাঠ তার আনন্দের বুঝি তুলনা নেই। 
প্রকাশকেরা বই বা লেখা প্রকাশের একটা বিশেষ সময়সীমা ঠিক করেন। সে জন্যে লেখকের ভাবভানার জগতে তাঁদের হানা দিতেই হয়, কখনও সশরীরে কখনও বা দূরভাষণে। লেখক ত্বরান্বিত হন। লেখাটা হয় তো ঠিক মনের মতো হল না, আর একটু সময় পেলে ভাল হত। এ আক্ষেপ তো সব লেখকেরই।
রবীন্দ্রনাথ প্রমথ চৌধুরীকে লিখেছিলেন (২৩ এপ্রিল, ১৯১৫) ঃ ‘কোনো ভদ্রলোকের পক্ষে বারো মাসের বারোটা করে গল্প লেখা কি সম্ভব, না উচিত? এরকম নিয়ম করে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মবিরুদ্ধ। ফুল ফোটার এবং ফল ধরার ঋতু আছে প্রকৃতিতে।’ এই যে ফুল ফোটার এবং ফল ধরার অবকাশ-ঋতু, লেখার বেলায় তা হল অধ্যয়ন চিন্তন ও মনন।
একজন সাহিত্যিককে একটু অধৈর্য হয়ে প্রকাশককে বলতে শুনেছি ‘আমার বই পড়ার সময়টা কেড়ে নেবেন না দয়া করে। বইমেলাই কি সব লেখার টারগেট? সৃষ্টি কি তা হলে অনাসৃষ্টি হয়ে উঠবে না।’
সমকালীন বই  লেখা তো লেখককে পড়তেই হয় বেছে বেছে, কিন্তু ধ্রুপদী সাহিত্যও তাঁকে একাধিকবার পড়তে হয় নতুন আবিষ্কারের জন্যে। একজন সাহিত্যিক জানিয়েছেন, ‘এখন শুধু পড়ছি বঙ্কিমচন্দ্র আর উরপশবহং.’আর একজন বললেন, ‘পড়ছি শুধু শেকসপিয়রের’। কেউ পড়ছেন মহাভারত, কেউ বা পুরনোদিনের শিশুসাহিত্য। এই অধ্যয়ন যে শুধু তাঁদের নতুন আবিষ্কারের আনন্দই দেয় তা নয়, দেয় নতুন কিছু লেখবার প্রেরণা। কোনও বিশেষ অংশ হয়তো তাঁদের রচনায় ছায়া ফেলে যায়। একে কুম্ভিলকতা বলা চলে না। পূর্বসূরিদের বিষয়বস্তু অবলম্বনেই শেকস্পিয়রের অনবদ্য নাট্যসৃষ্টি! ‘ঝযধশবংঢ়বধৎব ধপয়ঁরৎবফ সড়ৎব বংবহঃরধষ যরংঃড়ৎু ভৎড়স চষঁঃধৎপয ঃযধহ সড়ংঃ সবহ পড়ঁষফ ভৎড়স ঃযব যিড়ষব ইৎরঃরংয গঁংবঁস (ঞ. ঝ. ঊষরড়ঃ)’. ওইভাবে বাল্মীকি থেকে আহরণ করেই ভাস-কালিদাস। ইংরেজি তথা ইউরোপীয় কাব্য রবীন্দ্রনাথ সুধীন্দ্রনাথ জীবনানন্দ প্রমুখ অনেকেরই কাব্যোপাদান যুগিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবীর অনেক ঋণ ঝঃৎরহফনঁৎম-এর উৎবধসঢ়ষধু-র কাছে। কিন্তু রক্তকরবী রক্তকবীই। 
বই বচনে-বাচনে রম্য যা আমাদের চেতনাকে উদ্দীপিত করে এমন বই-ই আমরা পড়ব। এই উদ্দীপনার ব্যাখ্যা নানাভাবেই হতে পারে। এবিষয়ে কাফকার উপলব্ধি তিনি তাঁর বন্ধু অস্কার পোলককে জানিয়েছিলেন ১৯০৪ সালে ঃ ও ঃযরহশ বি ড়ঁমযঃ ঃড় ৎবধফ ড়হষু নড়ড়শং ঃযধঃ নরঃব ধহফ ংঃরহম ঁং. ওভ ঃযব নড়ড়শ বি ধৎব ৎবধফরহম ফড়বংহ’ঃ ংযধশব ঁং ধধিশব ষরশব ধ নষড়ি ড়হ ঃযব ংশঁষষ, যিু নড়ঃযবৎ ৎবধফরহম রঃ রহ ঃযব ভরৎংঃ ঢ়ষধপব? ঝড় ঃযধঃ রঃ পধহ সধশব ঁং যধঢ়ঢ়ু, ধং ুড়ঁ ঢ়ঁঃ রঃ? এড়ড়ফ এড়ফ, বি’ফ নব লঁংঃ ধং যধঢ়ঢ়ু রভ বি যধফ হড় নড়ড়শং ধঃ ধষষ; নড়ড়শং ঃযধঃ সধশব ঁং যধঢ়ঢ়ু বি পড়ঁষফ, রহ ধ ঢ়রহপয, ধষংড় ৎিরঃব ড়ঁৎংবষাবং. ডযধঃ বি হববফ ধৎব নড়ড়শং ঃযধঃ যরঃ ঁং ষরশব ধ সড়ংঃ ঢ়ধরহভঁষ সরংভড়ৎঃঁহব, ষরশব ঃযব ফবধঃয ড়ভ ংড়সব ড়হব বি ষড়াবফ সড়ৎব ঃযধহ বি ষড়াব ড়ঁৎংবষবং, যিধঃ সধশব ঁং ভববষ ধং ঃযড়ঁময বি যধফ নববহ নধহরংযবফ ঃড় ঃযব ড়িড়ফং, ভধৎ ধধিু ভৎড়স ধহু যঁসধহ ঢ়ৎবংবহপব, ষরশব ধ ংঁরপরফব. অ নড়ড়শ সঁংঃ নব ঃযব ধীব ভড়ৎ ঃযব ভৎড়ুবহ ংবধ রিঃযরহ ঁং. ঞযধঃ রং যিধঃ ও নবষরবাবং.’ (ঞযব সরংংরহম ভরৎংঃ ঢ়ধমব, ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ৎবধফরহম. অষনবৎঃড় গধহমঁবষ. ঢ় ৯৩). 
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লেখকদের কোনও কর্মস্থল থাকে। সেখানকার কাজ, নিজের লেখা, বাইরে আমন্ত্রণ ইত্যাদির মধ্যে তাঁকে সামঞ্জস্য করতে হয় অঙ্ক কষে। সবচেয়ে বড় কথা যে-সব বিষয়ে তিনি পড়বেন বলে স্থির করেছিলেন তা আর সবটুকু হয়েই ওঠে না। তাই কেউ কেউ অল্প সময়ে অনেকটা পড়ে ফেলার অভ্যাস করে ফেলেছেন। কিন্তু বলা বাহুল্য, পড়ার ব্যপ্তির চেয়ে গভীরতা বেশি দরকার। পড়ার রসটা তা না হলে লেখায় সঞ্চারিত হয় না।
লেখককে তো শুধু বইয়ের জগতে থাকলে হয় না, তাকে পাঠ নিতে হয় সমাজের দিকে তাকিয়ে, মানুষের দিকে তাকিয়ে। পুথির সত্যের সঙ্গে বাস্তবের সত্যের সংঘাতের মধ্যে দিয়েই লেখককে নিজস্ব সত্য উপলব্ধির পথে যেতে হয়। লেখকের নিজস্ব সত্যকে কী সহজ কথায় রবীন্দ্রনাথ প্রকাশ করেছিলেন বাল্মীকির রামায়ণ রচনা প্রসঙ্গে-
সেই সত্য যা রচিবে তুমি,
ঘটে যা তা সব সত্য নহে।
এত বড় আস্থা কবিদের সম্বন্ধে করা হয়েছে। এই আস্থা অর্জনের জন্যে কবির যে উপলব্ধি তা কি শুধু বই পাঠে আসে? মানুষের জীবনের সঙ্গে যাঁর যোগ সবকিছুই তাঁর পাঠ্য। সেদিক থেকে মিডিয়াও তাঁর সহায়ক হয় বই কী!
ভ্রমণ এই জন্যে লেখকদের পক্ষে জরুরি। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যে শুধু তাঁর কাজে লাগে তা নয়, দূরভ্রমণে ভমণসঙ্গী কিছু বইও তাঁর থাকে। ছিন্নপত্রে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ঃ ‘মফস্বলে যখন যাই তখন অনেকগুলো বই সঙ্গে নিতে হয়; তবে সবগুলোই যে প্রতিবার পড়ি তা নয়; কিন্তু কখন কোনটা দরকার বোধ হবে আগে থাকতে জানবার জো নেই।....এর মধ্যে অধিকাংশ বই-ই ছোঁচ না কিন্তু কখন কী আবশ্যক বলা যায় না। অন্যবার বরাবর আমার বৈষ্ণব কবি এবং সংস্কৃত বই আনি; এবার আনিনি, সেইজন্যে ঐ দুটোরই প্রয়োজন বেশি অনুভব হচেছ। যখন পুরী খন্ডগিরি প্রভৃতি ভ্রমণ করেছিলাম তখন যদি মেঘদূতটা হাতে থাকত ভারি খুশী হতাম। কিন্তু মেঘদূত ছিল না, তার বদলে ঈধরফ’ং চযরষড়ংড়ঢ়যরপধষ ঊংংধুংছিল।’ (৩ মার্চ, ১৮৯৩)। আর-একটি চিঠিতে লিখছেন ঃ ‘অনেক সময় আসে যখন সব বই ছুঁয়ে ছুঁয়ে ফেলে দিতে হয়, কোনোটা ঠিক আরামের বোধ হয় না-যেমন রোগের সময় অনেক সময় বিছানায় ঠিক আরামের অবস্থাটি পাওয়া যায় না। নানারকমে পাশ ফিরে দেখতে ইচ্ছে করে; কখনও বালিশের উপরে বালিশ চাপাই; কখনো বালিশ ফেলে দিই-সেই রকম মানসিক অবস্থায় আমিয়েলের(অসরবষ’ং ঔড়ঁৎহধষ) যেখানেই খুলি সেইখানেই মাথাটা ঠিক গিয়ে পড়ে, শরীরটা ঠিক বিশ্রাম পায়।’ (২২ মার্চ, ১৮৯৪)।
আশ্চর্য সুন্দরভাবে যদৃচ্ছ পাঠের সময়ে বিশেষ একটি ভালোলাগা বইয়ের পুনঃপঠনের আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্যের কথা বলেছেন রবীন্দ্রনাথ। এ আমাদের অনেকেরই অভিজ্ঞতা। ভ্রমণে একসঙ্গে  অনেককিছুই হয়, অপরিচিতের সঙ্গে আলাপচারি, কখনও বা কিছুটা পড়া, কিছুটা নোট করা, আর সেই সঙ্গে আকাশ মাটির মিলনের চিত্র দেখা। ভ্রমণকে এক ধরনের যদৃচ্ছ পাঠই বলা চলে।
ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লেখার কাজে আসে বটে, কিন্তু পাঠের পূর্বসংস্কার সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত হলেই সোনা ফলে। বাণভট্ট তরুণ বয়সেই বহু বিদ্যা আয়ত্ত করে দলবদ্ধ হয়ে ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। সে দলে সব পেশার সব বয়সের মানুষ ছিল, ছিল কবি, ভাট, গায়ক, বাদক, জাদুকর, কারিগর, নটনটী, জুয়াড়ি, সৈরন্দ্রী-কে নয়? শহরগ্রাম তাঁরা ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়িয়েছেন। এই ব্রমণের অভিজ্ঞতা তাঁর রচনায় কাজে এসেছে নিশ্চয়। কিন্তু কবিমন তার আগেই গঠিত হয়েছিল। মহারাজ হর্ষ তাঁকে সভাকবি করে নেওয়ার জন্য মনে মনে প্রস্তুত হয়েই ছিলেন, কিন্তু তাঁর আহ্বানে বাণভট্ট রাজসভায় উপস্থিত হলে হর্ষ যখন বললেন ‘মহানয়ং ভুজঙ্গঃ’ অর্থাৎ এলেন এক মহা বাউন্ডুলে। বাণ যেন বাণাহত হয়ে গর্জে উঠে বলেছিলেন ‘বাউন্ডুলে’! আমার বইপড়ার খবর রাখেন আপনি!’ এই বলে কুলমর্যাদা অনুযায়ী তাঁর বই পাঠের একটা ফিরিস্তি দিয়েছিলেন। অভিজ্ঞতাকে বিদ্যালব্ধ উপলব্ধিতে ছেঁকে নিয়েই উঁচুদরের লেখক হওয়া সম্ভব। বাণভট্ট যে ছবির পর ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাঁর বিচিত্র অভিজ্ঞতার রং।
বহু মনীষীই বলেন বহু বই পাঠেই অল্প কিছু বই লেখা সম্ভব। ড. জনসনের বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ে ঃ ‘ঞযব মৎবধঃবংঃ ঢ়ধৎঃ ড়ভ ধ ৎিরঃবৎ’ং ঃরসব রং ংঢ়বহঃ রহ ৎবধফরহম রহ ড়ৎফবৎ ঃড় ৎিরঃব; ধ সধহ রিষষ ঃঁৎহ ড়াবৎ যধষভ ধ ষরনৎধৎু ঃড় সধশব ড়হব নড়ড়শ.’ 
ড. জনসনের নিজের সম্বন্ধে এ কথা অক্ষরে-অক্ষরে সত্য। তিনি উরপঃরড়হধৎু ড়ভ ঊহমষরংয রচনা করতে গিয়ে যে অধ্যবসায়েল পরিচয় দিয়েছিলেন তার তুলনা নেই। এই অভিধানের সমস্ত উদাহরণও (প্রয়োগ) তিনি একাই আহরণ করেন। সামান্য পারিশ্রমিকে চলতে না বলে তিনি বাড়তি রোজগারের জন্যে যে কয়েকটি বই লিখেছিলেন তার জন্যে তাঁকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়েছে।
সুলেখক প্রসন্ন মনে অন্যের লেখা বই পড়বেন, আপাত নীরস লেখাতেও রসের সন্ধান পাবেন, এটাই ইপ্সিত। তাই সুলেখককে হৃদয়বান হতেই হয়। সহৃদয়ের রচনাই ‘সহৃদয় হৃদয়সংবাদী’ হতে পারে। ‘ঞধষবহঃ পধহহড়ঃ সধশব ধ ৎিরঃবৎ. ঞযবৎব সঁংঃ নব ধ সধহ নবযরহফ ঃযব নড়ড়শ.’ (জ. ড. ঊসবৎংড়হ, জবঢ়ৎবংবহঃধঃরাব গধহ)
বড় মাপের মানুষ না হলে বড় মাপের লেখক হওয়া যায় না। মানুষের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা বুকে নিয়েই মানুষের জন্যে কিছু লেখা যায়। 
অনেক কবি সাহিত্যিক নিজের লেখা অন্যকে বা আর পাঁচজনকে পড়ে শোনাতে ভালোবাসেন। এও আর-এক ধরনের অধ্যায়ন। পড়বার সময় কোনও জায়গায় খটকা লাগলে তিনি তা পরিবর্তন করে নিতে পারেন। পাঠ্য বিষয়ের ধ্বনিগত ত্রুটির দিকটাও সরব পাঠে ধরা পড়ে। পাঠকদের প্রতিক্রিয়া দেখে লেখক তাঁর রচনাংশের সবলতা বা দুর্বলতার আভাস পান। পাঠান্তে শ্রোতাদের মতামত বা মন্তব্যও লেখকের কাজে লাগে। রবীন্দ্রনাথ ‘কেমন হল দ্যাখ্’ ‘উতরোলো কিনা দ্যাখ্’ বলে কাছের মানুষদের লেখা পড়ে শোনাতেন। সবচেয়ে বেশি পড়তেন নাটক। ‘চিরকুমার সভা’ পাঠে উপস্থিত ছিলেন ‘ভারতী’ গোষ্ঠীর সাহিত্যিকদের কয়েকজন। ‘রক্তকরবী’ নাটকটি আশ্রমে বার দুয়েক পড়েছিলেন। তখন নাটকটির নাম ছিল ‘যমপুরী’। ‘শাপমোচন’ পাঠের ব্যাপারে অমিতা সেন রবীন্দ্রনাথের কথা লিখেছেন-‘তোরা তো সবাই বেশ ভালই নাচিস। তবে কেন পুরনো নাচ নাচবি? তোদের জন্যে তাই কাল রাত্রে একটা নতুন নাটক লিখে ফেললাম। দ্যাখ দেখি তোদের পছন্দ হয় কি না।’ পড়ে শোনালেন তাঁর এক-রাতে-লেখা শাপমোচন নাটকটি। সেদিন পাঠের সময় অমিতা সেন ছাড়া উপস্থিত ছিলেন শান্তিদেব ঘোষ, নিত্রানন্দবিনোদ গোস্বামী, গীতা রায়, যমুনা বসু প্রমুখ অনেকেই।
মধুসূদন দত্ত প্রমুখ অনেকেই কবিতা পাঠ করে শোনাতেন। মধুসূদনের ক্ষেত্রে তো পাঠ আর রচনা ঘটত যুগপৎ। ইংল্যান্ড ইউরোপের প্রাচীন ও নবীন অনেক লেখকেরই এ অভ্যাস ছিল। চসার সম্ভবত লন্ডনের এক সম্ভ্রান্ত মহিলার বাড়িতে থাকবার সময়েই ঙারফ, ঠরৎমরষ এবং ফরাসি কবিদের বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হন। লেখার ইচ্ছে হলেও মনেই চেপে রাখতেন। কিন্তু গৃহকত্রী এলিজাবেথের তাগিদেই লিখলেন‘অ যুসহ ঃড় ঃযব ঠরৎমরহ,’পড়েও শোনালেন তাঁকে এবং তাঁর সহচরদের। পড়ে শোনানোর অভ্যাস রয়েই গেল। তাঁর লেখা ঞৎড়রষঁং ধহফ ঈৎরংবুফব’-পান্ডুলিপির ছবিতে দেখা যায় একটি লোক উঁচু আসনে, সামনে একটি খোলা বই। অভিজাত পুরুষ ও মহিলা শ্রোতাদের লেখা পড়ে শোনাচ্ছেন। পাঠক চসার স্বয়ং আর তাঁর সামনেই রাজা রিচার্ড ও রানি এবং অন্যান্য অভিজাত ব্যক্তিরা।
পরে ১৯ শতক জুড়ে ইংল্যান্ডে ও ইউরোপে এই বই পড়ে শোনানো ব্যাপারটা বেশ ছড়িয়ে পড়েছিল। ইংল্যান্ডে ডিকেন্সের বই পড়ে শোনানো ব্যাপারটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। পড়বার সময় শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া তিনি লক্ষ করতেন। স্ত্রী ক্যাথারিনকে লিখেছিলেন-‘ণড়ঁ যধফ ংববহ গধপৎবধফু (ডিকেন্সের একজন বন্ধু)ংড়ননরহম ধহফ পৎুরহম ড়হ ঃযব ংড়ভধ, ধং ও ৎবধফ ুড়ঁ ড়িঁষফ যধাব ভবষঃ (ধং ও ফরফ) যিধঃ ধ ঃযরহম রঃ রং ঃড় যধাব ঢ়ড়বিৎ.’ (চবঃবৎ অপৎড়ুবফ, উরপশহবংং)
এ তো হল সরব বই পড়া, নীরব পড়াও আর-এক ধরনের উপকার করে। নীরব পড়ায় পড়তে পড়তেই অনেক ছবি ফুটে ওঠে। সেইসব ছবির তাগিদেই ঘটে কিছু পরিমার্জন। বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন বই লেখা ফেলে রাখতে। কিছুদিনের ব্যবধানে দোষত্রুটিগুলো বেশি করে চোখে পড়ে বলেই হয়তো।

নিজের লেখায় পাঠের ব্যাপার প্রুফরিডিং-এর কথা স্বতই মনে হয়। প্রুফরিডিং এই নীরব বই পাঠের একটি সুযোগ দেয়। আর কেউ যদি পান্ডুলিপি পড়ে যায়, সরব আর নীরব পাঠ দুটো মিলে বিশেষ এক ধরনের ধঁফরড়-ারংঁধষ ধরফ-এর সৃষ্টি হয় পরিবর্তন বা পুনশ্চিন্তনের। একটা প্রুফ অন্তত লেখকের নিজে দেখা উচিত। পান্ডুলিপি পরিচ্ছন্ন থাকলে ভুলের সম্ভাবনাও কম থাকে, ফলে বিশেষ কোনও শব্দ যোজনা বা শব্দ পরিবর্তনের ব্যাপারে বেশি মনোযোগী হওয়া যায়। প্রুফ কথাটার মধ্যেই আছে পাঠযোগ্য করে তোলার ইঙ্গিত। চৎড়ড়ভমানে ঢ়ৎড়ঃবপঃরড়হ ধমরহংঃ ধিঃবৎ ড়ৎ ৎধরহ। মুদ্রণের ক্ষেত্রে প্রুফ মানে যেখানে পাঠক কোনও খুঁত দেখতে পাবে না। অনেকে বলেন কবিতার ক্ষেত্রটা অন্যরকম। কবিদের আছে রঙ্গময়ী কল্পনা, কল্পনার পাখা মেলেই কবিদের চলা, গ্রন্থাগারের গ্রন্থি কবিদের জন্যে নয়। আমার মনে হয় একথা তেমন সত্য নয়, লেখক হিসেবে কবিরাও শ্রমিক। সময়ও সময়ের তাৎপর্যটাকে বোঝার জন্য কবিকে অধ্যয়নের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আর শুধু তথাকথিত সমকালীনে কবির চলে না তাঁকে প্রাচীনেরও সমকালীন হতে হয়। শুধু কবিদের নয়, সারা পৃথিবীর রবীন্দ্রনাথের তাঁকে আপন করে নিতে হয়। কবিতার এক-একটি শব্দ বা শব্দগুচ্ছ কবিদের ধ্যানলব্ধ মন্ত্রের মতোই। বুকের ভিতর যাদের বাস তাদের বাইরে আনা, এক নাড়ি-ছেঁড়া দুঃসাধ্য ব্যাপার। হিরন্ময় পাত্রে সত্যের মুখ ঢাকা, সেই সত্যের মুখের অপসরণই তো কবিকর্ম। কাব্যজগৎ এক সোনার রাজ্য, সে রাজ্যে নিত্যচারী কবি বলতে পানের ঃ
‘গঁপয ড়ভ ঃযব ৎবধষসং ড়ভ এড়ষফ
যধাব ও ঃৎধাবষষবফ
অহফ সধহু মড়ড়ফষু ংঃধঃবং ধহফ
করহমফড়সং ংববহ’
শুধু কবিদের কেন সব ধরনের লেখকদেরই যদি নতুন নতুন ভূমি আবিষ্কার করতে হয় তা হলে বাঙ্ময় জগতে তাকে ভ্রমণ করতেই হবে। সেই ভ্রমণই তাকে দেবে মন-এমন মন যা অন্যের মনে দাগ কাটতে পারে। আর তা-ই যদি না হয় কাগজে আঁচড় কাটা কেন?
ওং রঃ হড়ঃ ধ ষধসবহঃধনষব ঃযরহম ঃযধঃ ড়ভ ংশরহ ড়ভ ধহ রহহড়পবহঃ ষধসন ংযড়ঁষফ নব সধফব ঢ়ধৎপযসবহঃ? ঃযধঃ ঢ়ধৎপযসবহঃ, নবরহম ংপৎরননষবফ ড়’বৎ ংযড়ঁষফ ঁহফড় ধ সধহ. (ঝযধশবংঢ়বধৎব : ঐবহৎু ওঠ, ওও)
আর-একটি বিষয়ে ভাববার আছে। কবি তো শুধু কবিতা লেখেন না। তিনি প্রবন্ধটি অন্য রচনাও লেখেন। তেমনই ঔপন্যাসিক হিসেবে তিনি চিহ্নিত তিনিও পাঠক, অন্য ধরনের রচনা লিখলেও তাঁদের পড়বার প্রয়োজন ও পরিধি বেড়েই যায়। ঈৎবধঃরাব ষরঃবৎধঃঁৎব-এ কল্পনার সঙ্গে অভিজ্ঞতার মিশ্রণ থাকলে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যায় ঠিকই, তবে ও দুটোর সঙ্গে অধ্যয়ন যুক্ত হলে তার ভিত্তি সুদৃঢ় হয়। তবে যে কোনও আঙ্গিকের লেখকই হোন না কেন লেখার দায়িত্বের সঙ্গে পড়ার দায়িত্বও তাঁর সমভাবেই বর্তায়। ‘লেখা-পড়া’ এই শব্দটা বোধ হয় সেই দিক দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। ঈৎবধঃরাব ৎিরঃরহম-এর সংজ্ঞাটিও একটু গোলমেলে। জীবনী, সমালোচনা, ডায়েরি, জার্নাল এ-সবই তো পৎবধঃরাব ৎিরঃরহম হয়ে উঠতে পারে। চিঠিও তো একটি আশ্চর্য আঙ্গিক। বিখ্যাত লেখকদের চিঠির কথা ছেড়েই দিলাম। সাধারণ চিঠিপত্রেরও একটি রস থাকে। তাকে বলতে ইচ্ছে করে মানব-রস। লেখকের মন গঠনে এই রস রসায়নের কাজ করে। ‘রহঃরসধঃব ফবঃধশরষং’ যেখানে, চিঠির মধুচক্র সেখানেই। ব্যক্তিগত জীবনে পুরনো চিঠির আলাদা রস আছে। চিঠি পড়ার ৎবপৎবধঃরড়হ পৎবধঃরড়হ-এর সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।
আঙ্গিক যাই হোক কোনওটিকে লঘু করে দেখা চলে না। তবে লেখক তাঁর রুচি অনুযায়ী নিশ্চয় পড়বেন। শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার মতোই লেখকদের পড়া।
‘তোরা একটু নিয়মিত পড়াশুনো করতে ভুলিস নে। নইলে মনের সুরটা ক্রমেই নেমে ষাটের।’ -এ কথা রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন মীরাদেবীকে (ফাল্গুন ১৩১৭)। (‘মনের সুরটা ক্রমেই নেমে যাবে’ এমন সুন্দর করে আর কে বলতে পারেন?)।














সর্বশেষ সংবাদ
মুসল্লিদের ঢল নেমেছিল কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহে। স্বস্তির ঈদ জামাত
কুমিল্লায় আইনজীবী আবুল কালাম হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার
কুমিল্লায় ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়
এলো খুশির ঈদ
কুমিল্লার ৩৮পরিবারে ‘বিষাদের ঈদ’
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা জিলা স্কুলে গ্র্যান্ড ইফতার মাহফিল
কুমিল্লায় আইনজীবী আবুল কালাম হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার
কুমিল্লায় ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়
কুমিল্লার ৩৮পরিবারে ‘বিষাদের ঈদ’
হরিশ্চর ইউনিয়ন হাই স্কুল এন্ড কলেজের চতুর্থ পুনর্মিলনী
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২