এবার
একই সাথে লাইলাতুল ক্বদর ও জুমাতুল বিদা। আগের রাতে লাইলাতুল কদর ও
পরেরদিন জুমাতুল বিদা। বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাসের অন্যতম রামাদ্বান। দিনের
মধ্যেও শ্রেষ্ঠতম দিনের মধ্যে জুমা'র দিন। আর রামাদ্বার মাসের শ্রেষ্ঠতম
দিন হলো জুমা'তুল বিদা। রামাদ্বান মাসের শেষ দশকে নাজাত বা জাহান্নাম থেকে
মুক্তির শেষ জুমাতে আপামর মুসলিম জনগণ উৎসাহ ও উদ্দিপনার সহিত ঈমানী চেতনা
নিয়ে ক্ষমা ও নাজাত পাওয়ার আশায় মসজিদে আসেন। তাই এ জুমাতে সারা দেশের সব
জামে মসজিদে বছরের সবচেয়ে বেশি মুসল্লিদের সমাগম হয়। কুমিল্লা কান্দিরপাড়
কেন্দ্রিয় জামে মসজিদেও তার ব্যাতিক্রম হয়না। পুরো পাঁচতলা মসজিদ পূর্ণ হয়ে
যায়। শুধু তাই নয়। মসজিদ সংলগ্ন পূর্বদিকের রাস্তা উত্তরে প্রায় সিটি
মার্কেটের শেষ প্রান্ত, দক্ষিণে ভিক্টোরিয়া কলেজের কাছাকাছি, পূর্বে
সাত্তার খান কমপ্লেক্স ও খন্দকার হক টাওয়ারের কাছাকাছি চলে যায় ধর্মপ্রান
মুসুল্লিদের জামা'ত। মোনাজাতে কান্নার রোল পড়ে যায়। আমিন আমিন ধ্বনির সঙ্গে
সঙ্গে মুহুর্মুহু উচ্চারিত হয় আল বিদা আল বিদা। মসজিদের ইমাম ও খতিব
সাহেবগণ খুঙ্খাতেও বলতে থাকেন আল বিদা আল বিদা ইয়া শাহরার রাহমাহ, আল বিদা
আল বিদা ইয়া শাহরাল কুরআন, আল বিদা আল বিদা ইয়া শাহরান নাজাহ। মাহে
রামাদ্বানের বিদায়ে অন্তর ফেটে যায়। আল্লাহু আকবার ও আমিন ধ্বনিতে আকাশ
বাতাশ প্রকম্পিত হয়ে উঠে। মহান আল্লাহ তায়ালাকে পাওয়ার সেকি এক আকাঙ্খা যা
ভাষায় বলা যাবেনা। সে এক ঈমানী চেতনার অভিনব দৃশ্য। এই চেতনা ও ঐক্য যদি
মুসলমান ধরে রাখতে পারতো তাহলে কতইনা সুন্দর হতো। কেউ তাঁদের উপর আর
খবরদারী করতে পারতনা। পারতনা কোন প্রকার নির্যাতন করতে। বরং সারা বিশ্ব
শাষন করতো মুসলিম জাতি। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, আমরা তা ধরে রাখতে পারিনা।
দুই ভাবে আমরা তা হারিয়ে ফেলি। এক. তারাবীহ নামাজে কুরআন খতম শেষ হওয়া সাথে
সাথে। তাইতো দেখা যায় পরের দিন তারাবীহ এর নামাজের জামাতে মুসুল্লির
সংখ্যা নেমে আসে অর্ধেকে। দুই. ঈদের নামাজ আদায় করার পর। যে মসজিদগুলো ছিল
প্রতিটা নামাজের জামাতে পরিপূর্ণ, সে মসজিদ গুলোতে ঈদের পরে দেখা যায়
শুণ্য। গুটিকয়েক সব সময়ের মুসুল্লি ছাড়া অন্যদের তেমন একটা দেখা যায়না।
আমাদের খেয়াল রাখতে হবে- নামাজ ফরজ নিঃশ্বাস যতদিন আছে ততদিনের জন্য।
রামাদ্বানের মধ্যে ছাওয়াব বেশি। সেটা ঠিক আছে। কিন্তু রামাদ্বান মাসকে
নামাজের জন্য নির্দিষ্ট করা যাবেনা। শয়তান আমাদের পিছনে সর্বশক্তি নিয়োগ
করবে আমাদেরকে মহান আল্লাহ ও তাঁর হাবিব নূর নবিজী দঃ এর কাছ থেকে দুরে
সরানোর জন্য।। কেননা সে একটি মাস বন্দি ছিল ঠিকই কিন্তু সে দেখেছে বান্দার
প্রতি মহান আল্লাহর অহরহ ক্ষমা ও দয়া যা তার জন্য জঘন্য আযাবের কারণ ছিল।
তাই সে এর প্রতিশোধ নিতে চাইবে বান্দাকে শয়তানি প্রবঞ্চনা দিয়ে গুনাহের
কাজে লিপ্ত করার মাধ্যমে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং কোন ক্রমেই শয়তানকে
সফল হতে দেওয়া যাবেনা। তাই আমাদের নামাজ, ইবাদত বন্দেগী, কুরআন তেলাওয়াত
অন্যান্য সকল আমল যাতে চলমান থাকে সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। হয়তবা
রামাদ্বান মাসের মত বেশি পালন করা হবেনা। কিন্তু বাদ যাতে না যায়। অল্প
হলেও যাতে আমরা কুরআন তেলাওয়াত করি প্রতিদিন। তবে নামাজের ব্যাপারে কোন
প্রকার ছাড় দেওয়া যাবেনা কোনক্রমেই। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেন চালু থাকে
জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। হিংসা বিদ্বেষ, লোভ লালসা, পরশ্রীকাতরতা,
স্বার্থপরতা পরিহার করে পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, স্নেহ মায়া মমতা
ও ভালবাসা দিয়ে গড়ে তুলি এই পৃথিবীকে। জাতীয় কবি নজরুলের ভাষায় “ ভুলে যা
তোর দোস্ত দুশমন হাত মিলাও হাতে, তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে
মুরিদ।" এই হোক জুমাতুল বিদার অঙ্গিকার। সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের অগ্রিম
শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
প্রধান ইমাম ও খতীব, কান্দিরপাড় কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ ও কেন্দ্রিয় ঈদগাহ, কুমিল্লা।