দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পর আনন্দের
বার্তা নিয়ে এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের
অন্যতম এই ঈদুল ফিতর। প্রতিবছর ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ,
ধনী-দরিদ্র-নির্বিশেষে সবাই শরিক হয় এই আনন্দ উৎসবে। যে যার সাধ্যমতো এই
দিনটি আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করে থাকে।
হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি ভুলে
মানুষে-মানুষে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। ঈদের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে
পথের বিড়ম্বনা অগ্রাহ্য করে সবাই ছুটে যায় পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের কাছে।
ঈদুল ফিতর আসে সুশৃঙ্খল আচার-আচরণের শিক্ষা নিয়ে। আসে কৃচ্ছ্র ও শুদ্ধতার প্রতীক হয়ে।
দীর্ঘ
এক মাসের সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মুসলমান নৈতিক, আত্মিক ও
সামাজিক পরিশুদ্ধির শিক্ষায় পরিশীলিত হয়। তাকওয়ার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নতুন
জীবন শুরুর উদ্দীপনা পায়। তাই ঈদ আসে শত্রুতা ও বৈরিতার প্রাচীর ডিঙিয়ে,
বন্ধুত্ব ও মিত্রতার হাত বাড়িয়ে। ঈদ আসে মহামিলনের মহোৎসবে মনকে মাতিয়ে
তুলতে।
পরিশোধিত হৃদয়ে পরিতৃপ্তির ছোঁয়া লাগাতে। তাই ঈদের আনন্দ
সংক্রমিত হতে থাকে হৃদয় থেকে হৃদয়ে। দুস্থ, হতদরিদ্র, এতিম, নিঃস্ব ও
ছিন্নমূল মানুষের মুখেও এই পবিত্র দিনে হাসির ফোয়ারা দেখা যায়। মুসলমানদের
এই খুশির দিনটিকে পরম আনন্দে ভাগাভাগি করে নেয় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও। আর
এভাবেই সর্বজনীন হয়ে ওঠে ঈদ।
ঈদুল ফিতর একাধারে আনন্দ উৎসব ও ইবাদত। এই
আনন্দ আল্লাহর অশেষ রহমত ও ক্ষমাপ্রাপ্তির, জাহান্নাম থেকে মুক্তির। এই
আনন্দ সিয়াম-কিয়ামের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতার। এই আনন্দে নেই কোনো
পাপ-পঙ্কিলতা, আছে কেবলই উন্নত জীবনের এবং জীবনবোধের আবাহন। ঈদ মুসলমানদের
জন্য শুধু একটি ধর্মীয় উৎসবই নয়, সম্প্রীতি-সৌভ্রাতৃত্ব শেখারও একটি
গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। এই উৎসবের মাধ্যমে প্রত্যেক মুসলমান একে অপরের আরো
কাছাকাছি আসে। ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয় অন্যান্য ধর্মের মানুষের
সঙ্গেও।
পবিত্র রমজান আমাদের চিত্তশুদ্ধির যে শিক্ষা দিয়েছে, ঈদুল ফিতর
হচ্ছে সেই শিক্ষা কাজে লাগানোর দিন। ধনী-গরিব সবাই দাঁড়াবে এক কাতারে। ভুলে
যাবে সব বৈষম্য, সব ভেদাভেদ। হিংসা, বিদ্বেষ ও হানাহানি থেকে নিজেদের
মুক্ত করতে হবে। শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে সারা বিশ্বে মুসলমানদের মর্যাদা
ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে। ইসলাম যে প্রকৃত অর্থেই শান্তির ধর্ম, সেটি প্রমাণ
করতে হবে।
এবার ঈদের ছুটি দীর্ঘ হয়েছে। পর পর দুটি উৎসব। প্রথমে ঈদুল
ফিতর এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে উপস্থিত হয় খুশির এই দিন। এরপর পহেলা বৈশাখ।
আমাদের অর্থনীতিতে ঈদের এবং পহেলা বৈশাখের প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশের
অর্থনীতির সামনে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধির ফলে ঈদ অর্থনীতি বিস্তৃতি লাভ
করতে যাচ্ছে। উৎসবের অর্থনীতির অন্য এক উজ্জ্বল দিক হলো রেমিট্যান্সপ্রবাহ
বৃদ্ধি পাওয়া।
ঈদের সামাজিক দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। রোজা ও ঈদের সময়
দরিদ্রদের প্রতি সমবেদনা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে
বেরিয়ে আসার কথা বলে ঈদ। ঈদ মানে পারিবারিক বন্ধন বৃদ্ধি। সবার ঘরে ঘরে
পৌঁছে যাক ঈদের সওগাত। ঈদ মানে কোলাকুলি, ঈদ মানে একে অপরকে হাসিমুখে বরণ
করা। আলিঙ্গনের ভেতর দিয়ে সবাই ভুলে যাক হিংসা-বিদ্বেষ। আমাদের ঘরে ঘরে
ফিরে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি। বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য। আমাদের
অসংখ্য পাঠক, গ্রাহক, বিজ্ঞাপনদাতা, বিপণনকর্মী, শুভানুধ্যায়ীসহ সবাইকে
ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।