দেশজুড়ে ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি শুরু হলেও উৎসবের আমেজ নেই কুমিল্লায় জুলাই আন্দোলনে প্রাণ হারানো ৩৮ জনের পরিবারে।
গত
বছরের এ দিনে পরিবারগুলোতে ঈদের আনন্দ থাকলেও আজ তা শুধুই স্মৃতি। তাদের
পরিবারে এবারের ঈদ যেন বিষাদের ঈদ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রাণ হারানোদের
অনেকেই ছিলেন সংসারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তি। তাদের হারিয়ে দিশেহারা
পরিবারগুলো। তাদের কেউ হারিয়েছেন বাবা, কেউবা সন্তান আবার কেউ স্বামী।
জুলাই
ছাত্র আন্দোলনে কুমিল্লা জেলায় ৩৮ শহীদের মধ্যে দেবিদ্বারেই শহীদ হয়েছেন
১৩জন। এছাড়াও বরুড়ায় ৩ জন, চান্দিনায় ২ জন, চৌদ্দগ্রামে ২ জন,
দাউদকান্দিতে ৩ জন, হোমনায় ১ জন, লাকসাম ২ জন, মনোহরগঞ্জে ১ জন, মুরাদনগরে ৪
জন, নাঙ্গলকোটে ৩ জন, সদর দক্ষিণে ২ জন ও তিতাসে ১ জন শহীদ হয়েছেন।
গত
৪ আগষ্ট ছাত্রআন্দোলন চলাকালে কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌরসভায় আওয়ামী
লীগ-যুবলীগ কর্মীদের গুলিতে নিহত হোন আবদুর রজ্জাক রুবেল। সংসারের একমাত্র
উপর্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। স্বামীকে হারিয়ে এখনও শোকে স্তব্ধ স্ত্রী
হ্যাপী আক্তার। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে এবারের ঈদ তার কাছে যেন বিষাদ।
হ্যাপী
আক্তার বলেন, আমাদের কিসের ঈদ! ৭ বছরের নৌফা বারবার বাবাকে খুঁজে। সে এখনও
জানেনা তার বাবা নেই। কোলে ৫ মাসের মো. রাইয়ান বাবাকে দেখেনি। গত বছর ঈদে
সবার জন্য নতুন জামা-কাপড় নিয়ে আসছিল নৌফার বাবা। প্রতিবেশীদের ঘরে নতুন
জামা কাপড় দেখে ঘরে এসে কান্না করছিল। ওর বাবা বেঁচে থাকলে কিনে দিতেন।
পাষণ্ডরা আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমাদের জীবনে আর কোনদিন সেই
ঈদের আনন্দ আসবে না।
বাড়ির পাশের একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে ২০
জুলাই নিহত দেবিদ্বারের সূর্যপুর গ্রামের শহীদ কাদির হোসেন সোহাগকে। কবরের
পাশে প্রায় সময়ই দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করেন সোহাগের মা নাসিমা বেগম। কাদির
হোসেন সোহাগের বাড়ি দেবিদ্বারের ভানী ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামে। সোহাগের মা
নাসিমা বেগম বলেন, স্বামীকে হারিয়েছি ২০ বছর আগে। মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ
করে দুই সন্তানকে বড় করেছি। কাদির হোসেন সোহাগ কুরিয়ার সার্ভিসের
ডেলিভারীম্যান হিসেবে কাজ করে সংসার চালাত। আর ছোট ছেলে শহীদুল লেখাপড়া
করত। গত ২০ জুলাই রাতে সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার গোপীবাগ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে
মারা যায় সোহাগ। এরপর থেকে সংসারে আনন্দ বলতে কিছুই নেই। গত বছর ঈদে আমাকে ও
তার ছোট ভাইকে কাপড় কিনে দিয়েছে সোহাগ। এই ঈদে আমার বুকে ধন কাছে নেই। আমি
কিভাবে সন্তান ছাড়া ঈদ করব !
চৌদ্দগ্রামের শহীদ সাখাওয়াত হোসেন
সাদাতের বাবা আব্দুল মজিদ বলেন, ছেলে হারানোর শোকে পুরো পরিবার স্তব্ধ। ঈদ
বলতে কিছু নেই। সাদাতের মা এখনও ছেলের জন্য কান্নাকাটি করে। তাকে সান্তনা
দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো.আমিরুল
কায়ছার বলেন, কুমিল্লার ৩৮ শহীদ পরিবারের মাঝে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ঈদ উপহার ও খাদ্য সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও
সরকারি অনুদানের সঞ্চয়পত্র প্রথম কিস্তির ১০ লক্ষ টাকা এসেছে আমি নিজে
এগুলো বিতরণ করেছি এবং যারা আহত আছেন তাদের জন্য দুই ক্যাটাগরিতে ২ লাখ ও ১
লাখ করে বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যারা জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহত
হয়েছেন আমরা তাদের পরিবারের সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর রাখছি। ভবিষ্যতেও তা
অব্যহত থাকবে।