জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্তবর্তী সরকারের কাছে জুলাই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন কুমিল্লার তিন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, একটি দল ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। যাঁরা রক্ত দিয়ে দেশ শত্রুমুক্ত করল তাঁদের হত্যার বিচারের কথা তারা বলছেন না। অথচ তাঁরা নির্বাচন নির্বাচন করছেন। তাদেরকে আমরা চিনি তারা কারা। তাঁরা ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামীলীগকে পুর্নবাসন করতে চায়। অন্তবর্তী সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি ‘জুলাই-আগষ্টে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার নিশ্চিত করে এরপর জাতীয় নির্বাচন দিন’
আজ মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) দুপুরে শহীদ জাহিদ হোসেন রায়হান (রাব্বি)র বাবা ফজর আলী, মা আয়শা বেগম, বিকালে শহীদ আবদুর রাজ্জাক রুবেলের বৃদ্ধা মা হোসেনে আরা বেগম ও স্ত্রী হ্যাপী আক্তার এবং শহীদ জহিরুল ইসলাম রাসেলের মা মোর্শেদা বেগম এমন দাবি করেন।
শহীদ আবদুর রাজ্জাক রুবেলের স্ত্রী হ্যাপী আক্তার বলেন, যারা হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত জড়িত পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না। তাঁরা প্রকাশ্যে কিভাবে ঘুরাঘুরি করছে, ইউএনও-ওসির সাথে মিটিং করছে। আর যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁরা আবার জামিনে চলে আসছে। তাদের কোন বিচারক জামিন দেয়। আমার এক সন্তান ৯ মাসের পেঠে থাকতেই বাবাকে হারাল। ৭ বছরের মেয়ে বাবাকে ছাড়া এই প্রথম ঈদ করল। তাঁরা আমার দুই সন্তানকে এতিম করেছে, আমাকে অল্প বয়মে বিধবা করেছে। এই অপরাধীদের বিচার হওয়া ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন চাই না।
শহীদ জাহিদ হোসেন রায়হান (রাব্বি)র বাবা ফজর আলী বলেন, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে এর বিচার হবে রাষ্ট্রীয় গণহত্যার বিচার। তৎকালীন সময়ে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, সরকারের আমলা ছিলেন যাদের নেতৃত্বে এসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে সকলকে বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি দিতে হবে। যারা রাষ্ট্রীয় গণহত্যার মামলার আসামী তাঁরা আদালত থেকে জামিন পায় কিভাবে ? অপরাধীদের জামিন দেয়া অগ্রহণযোগ্য।
বাবা ফজর আলী আরও বলেন, শুধু দৃষ্টন্তমূলক শাস্তি দিলেই হবে না আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।যারা আওয়ামী লীগকে পুর্নবাসন করতে চায় তাঁরাও একই অপরাধে অপরাধী। এখন তো কোন দল নেই। ড. ইউনুছ ক্ষমতায় থেকেই আগে বিচার নিশ্চিত করে তারপর নির্বাচন দিক। আমার রাজনীতি করার ইচ্ছে নেই যারা রাজনীতি করে গাড়ি বাড়ি করার ইচ্ছা তাঁরাই নির্বাচন দাও-নির্বাচন দাও করে। আমরা নির্বাচন চাই না বিচার সম্পন্ন করার শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ওনি থাকবে, প্রয়োজন আমরা তারপর নির্বাচন। আমরা সহযোগিতা করব, আমার এক সন্তান (শহীদ) গেছে দরকার হলে আমিও (শহীদ) যাব। তবুও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।
রায়হান (রাব্বি)র মা আয়শা বেগম বলেন, আমি চাই আমার সন্তান হত্যার বিচার। বিচার শেষ হওয়া ছাড়া কোন নির্বাচন চাই না। গত ঈদে আমার রাব্বি বাড়িতে খেলাধুলা করেছে। ঢ্কাা থেকে এসে ব্যাগ রেখে বলছে মা কি আছে দাও পিঠে ক্ষিধা লাগছে এই বছর আমি পথ চেয়ে বসে আছি কখন আমার রাব্বি এসে ডাক দিয়ে খানা খুঁজবে।
শহীদ জহিরুল ইসলাম রাসেলের বৃদ্ধা মা মোর্শেদা বেগম বলেন, আমার একমাত্র ছেলে হারিয়ে শোকে কাতর আমরা। আমার সংসার তছনছ হয়ে গেছে। সাড়ে তিন বছরের মেয়ে ঝুমা বারবার বাবার কবরের পাশে বসে বাবাকে ডাকে ‘বাবা ওঠো ওঠো’। এই শোক জুলাইয়ে যারা শহীদ হয়েছে প্রতিটি পরিবারে রয়েছে। অথচ একটি দল ক্ষমতায় যেতে নির্বাচন চায়। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই আগে। বর্তমান সরকার যিনি আছেন তিনি দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করে তারপর নির্বাচন দিক।
গত বছরের ৫ আগষ্ট ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয় দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের খয়রাবাদ গ্রামের জাহিদ হোসেন রাব্বি। পরদিন ৬ আগষ্ট গ্রামের একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। রাব্বি এসএসসি পরীক্ষার পর খিলগাঁও এলাকার একটি মার্কেটের পাঞ্জাবি দোকানে কাজ করতেন। গত ৪ আগষ্ট দেবিদ্বারে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের গুলিতে নিহত হয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রাজ্জাক রুবেল। তিনি কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রোডে বাস চালক ছিলেন। পরদিন ৫ আগষ্ট তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। একই দিন ৪ আগষ্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার গুলিস্থান এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয় জহিরুল ইসলাম রাসেল। রাসেল একটি জুতার ফ্যাক্টরিতে কাজ করত।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লার দেবিদ্বারে নিহত শহীদদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের একটি প্রতিনিধি দল। তাঁরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক রুবেল, শহীদ জহিরুল ইসলাম রাসেল ও শহীদ রায়হান রাব্বির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং খোঁজ খবর নেন।। এক পর্যায়ে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো.জাহিদুল ইসলাম নিহত রায়হান রাব্বির বাবা ও মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন এবং ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারকে যেকোন সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনিপরে শিবিরের প্রতিনিধি দল শহীদদের কবর জিয়ারত করেন।