১ এপ্রিল ড. আলী হোসেন চৌধুরীর ফোনে মনটা ভরাক্রান্ত হয়ে গেল। আমাদের জিন্না, মোঃ আলী জিন্না আর নেই।
জিন্না,
চৌধুরী মোহাম্মদ আলী জিন্না আমাদের সমসময়িক কিন্তু আমাদের চেয়ে চলনে বলনে
খেলাধূলায়, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে কয়েক ধাপ এগিয়ে, আর হবে নাই বা কেন
কুমিল্লার আলোকিত বজ্রপুর এলাকার ঐতিহ্যবাহী মৌলভী পাড়ায় ১৮৪৯ সালে জানে
আলম চৌধুরীর দাদা খান বাহাদুর আশরাফ আলী খান চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত জামে মসজিদ
সংলগ্ন চৌধুরীর বাড়িতে জানে আলম ওরফে জানুমিয়া কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে
গানে তবলা সংগত করতেন, তার উত্তরসুরী জিন্না।
চোখ বন্ধ করলেই ভেসে
ওঠে কুমিল্লা ক্রিকেট অঙ্গনের প্রয়াত কতগুলো পরিচিত মুখ, সৈয়দ আহমেদ বাকের,
বুদ্ধ সিংহ, ত্রীদিব সাহা ঝিন্টু, নাজিম উদ্দিন আহম্মদ খসরু, এয়ছানুর
রহমান, মাসুদুল আমিন,যোগ হলো মোঃ আলী জিন্না। তার মাঝে জিন্না, খসরু, রতন
কর, স্বপন কর, নওশাদ, মো: ছোটন প্রমুখ ছিল আলোকিত বজ্রপুর এর বাসিন্দা
আমাদের গর্ব, আমাদের গৌরব। স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসের গালিচায় ধূসর পীচের
চারিদিকে ছড়িয়ে ব্যাটিং ও ফিল্ডিং রত একঝাঁক সারস পাখির মতে ডানা মেলে,ডানা
গুটিয়ে স্থির চোখে মধ্য মাঠে শার্দুলের মত খৃপ্ত ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে থাকা
এরাছিল আমাদের আইডল।
জিন্না ছিল একটু ব্যতিক্রম তাঁর মৃদু কথাবলার
ভঙ্গী সংগীতচর্চার গুনে গান রচনা, সুরকরা, গান গাওয়া তাঁকে করেছিল আমাদের
মাঝে হিরো। কেতাদুরস্ত পোশাক হাঁটার ভঙ্গী,কথাবলার ঢং আমাকে বিশেষ ভাবে
মোহিত করতো, সমবয়সী হয়েও তাঁকে আমি সম্ভ্রমকরে ডাকতাম জিন্না ভাই। অধ্যক্ষ
আমীর আলী চৌধুরীর ছোট ভাই হিসাবে পরিচয় দিতে জিন্না স্বাচ্ছন্দ বোধ করতো এ
ছিল পরিবার থেকে প্রাপ্ত বিনয়ের বহিঃপ্রকাশ।
এক সময় লেখাপড়া শেষ করে
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডএ চাকুরী করে অবসরে চলে
আসেন। চাকুরী কালীন বিয়ে করেন আয়শা রহমান পাঁপড়ীকে। রাজ জোটক, পাপড়ী ছিলেন
তাঁর শেষ পরানের কাড়ি, সোনায় সোহাগা জিন্নার বেঁচে থাকার প্রেরণা, দীর্ঘকাল
অসুস্থ দেহ নিয়ে পাঁপড়ীর সেবা, ভালোবাসা তাঁকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আগলে
রেখেছিল। পাঁপড়ি সম্পর্কে আমার ভাতিজি, আমার ফুফাত বোন ফরিদার স্বামীর বড়
ভাইয়ের মেয়ে,তাদের বাড়ি চৌদ্দগ্রমে। জিন্না পাঁপড়ীর ঘর আলো করে এসেছে
দু’পুত্র তারাও বাবা মা দুজনের মতই সুন্দর,জিন্নার আনন্দ জিন্নার দু ছেলেই
প্রতিষ্ঠিত তাদের কোল জুড়ে এসেছে জিন্নার উত্তরসুরী জিন্নার নাতি।
জিন্না
ভাইয়ের সাথে আমার শেষ দেখা তাঁর বাসায় তাঁর আমেরিকা যাওয়ার প্রাক্কালে,
তাঁর বাসায় ঘরোয়া সঙ্গীতানুষ্ঠানে।যেখানে ছিলাম আমি, আলী ভাই, অধ্যক্ষ
শফিকুর রহমান, অনিমাদি, জামিল ভাই, দীপা সিনহা, মিঠু সিনহা, বদরুল হুদা
জেনু, মনি, বেবী, খিজির হায়ত খান টিপুসহ আরো অনেকে। জিন্নার লেখা সুর করা
গান আর সমবেত সংগীতের শেষে পাঁপড়ীর তৈরী উপাদেয় ডিনারের শেষে আমরা ফিরে
এসেছিলাম। নিজ বাড়িটিকে শৈল্পিকভাবে সাজিয়েছেন এই দম্পতী, চোখ জুড়ে যায়। এর
পর আমি চলে যাই আমার মেয়ের কাছে অস্ট্রেলিয়ায়। ফিরে এসে শুনি জিন্নাও ফিরে
এসেছে আমেরিকা থেকে। পাঁপড়ীর সাথে দেখা হয়েছে দুবার কিন্তু জিন্নাকে দেখতে
যাব যাব করেও আর যাওয়া হয় নি।
আজ শুনলাম আমাদের জিন্না আমাদের ছেড়ে চলে গেছে পরপারে। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
শৈল্পিক শুভেচ্ছা বন্ধু, জিন্না ভাই।