ঈদের
দীর্ঘ ছুটিতে দর্শনার্থীদের ঢল নামে কুমিল্লার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে।
ঐতিহাসিক নিদর্শন কুমিল্লার শালবন বিহার থেকে শুরু করে, বাংলাদেশ পল্লী
ইউনিয়ন একাডেমি বার্ড, ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, নগর উদ্যান, ধর্ম সাগর পাড়
হয়ে গোমতী নদীর তীর ভেসে গড়ে ওঠা বিনোদন কেন্দ্রগুলো মুখর হয়ে ওঠে নানা
বয়সী বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের পদচারণায়। সকাল থেকে রাত অব্দি জমজমাট
হয়ে থাকে কুমিল্লার বিনোদন কেন্দ্রগুলো। ঈদের পঞ্চম দিন শুক্রবার (৪
এপ্রিল) কুমিল্লার দেড় ডজন বিনোদন কেন্দ্রের প্রায় সবগুলোই ছিল
দর্শনার্থীতে ঠাসা। কোথাও কোথাও অবস্থা এমন হয়েছে- যেন তিল ধারণেরও ঠাঁই
নেই। ঈদের ছুটিতে পরিবার-পরিজন সহ আত্মীয়-স্বজনদের সাথে নিয়ে এসব স্থানে
আনন্দে মেতেছেন নানা বয়সী মানুষ।
শুক্রবার কুমিল্লার বিনোদন
কেন্দ্রগুলো ঘুরে সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে কুমিল্লা
ধর্মসাগর পাড় এবং গোমতী নদীর পাড়ে গড়ে উঠা বিভিন্ন রিসোর্ট গুলোতে। ঈদের
দিন থেকে শুরু করে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ধর্মসাগর পাড়ে তিল ধারণের ঠাঁই
ছিল না। এছাড়া নদীর পানি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করছে
কুমিল্লা নগরীসহ আশেপাশের উপজেলা দর্শনার্থীরা। বরাবরের মতোই ময়নামতি ওয়ার
সিমেট্রি এবং শালবন বিহারে দর্শনার্থী বেড়েছে কয়েকগুণ।
শিক্ষা সংস্কৃতি
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পাদপীঠ কুমিল্লার 'পর্যটন জেলা' হিসেবেও বেশ খ্যাতি
পেয়েছে। ঈদ ঘিরে কুমিল্লা নগরীর ধর্মসাগর পাড় , কুমিল্লা শালবন বিহার,
ময়নামতি জাদুঘর, ম্যাজিক প্যারাডাইস, রুপসাগর, ফান টাউন, ব্লু ওয়াটার
পার্ক, ম্যাজিক প্যারাডাইজ, গোমতী নদীর পাড় ঘিরে গড়ে উঠা গোমতী টাচ, গোমতী
বিলাস, কফি হাউজ সহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়, মনের আনন্দে নানা
পোষাকে সেজে শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ এসেছেন ঘুরতে। কেউ এসেছেন অটো
রিকশায়, কেউ এসেছেন মোটরসাইকেলে, কেউ এসেছেন প্রাইভেটকার ও বাস ও
মাইক্রোবাসে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিশেষ করে যারা সরকারি চাকরি
করেন তাদের ক্ষেত্রে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ঘোরাফেরা করা একেবারেই সম্ভব হয়
না। তাই ঈদের ছুটিগুলোতে বাচ্চাদের নিয়ে যথেষ্ট সময় নিয়ে বেড়ানো সম্ভব হয়। এ
কারণেই পবিত্র ঈদ বা বিশেষ দিনগুলোতে ঘোরাঘুরি করেন তারা।
কুমিল্লা
ধর্মসাগর সাগরপাড়ে ঘুরতে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, এবছর তুলনামূলক অনেক লম্বা
ছুটি পেয়েছি। তাই পরিবারের ছোট বড় সবাইকে নিয়ে ঘুরতে আসলাম। শহরের ভিতরে
একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র হওয়ায় ধর্মসাগর পাড় ও নগর উদ্যান মানুষের ভিড়ে
মুখরিত । ঈদের আনন্দে মানুষের কোলাহল দেখতে ভালো লাগে এজন্যই সবাইকে নিয়ে
বের হয়েছি ।
কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে
গোমতী নদীর তীরে ঘুরতে আসা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান মনির বলেন,
শহরের কাছাকাছি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য গোমতী নদীর রিসোর্ট
গুলো পছন্দনীয় জায়গা। ঈদের সময় বাচ্চাদের ঘুরতে ভালো লাগে এজন্য ঘুরতে
আসা।
ধর্মসাগর পাড়ে বেলপুড়ি ও ফুচকা বিক্রেতা মোল্লা বলেন, এবারের ঈদ
উদযাপন করার জন্য মানুষ হুমরি খেয়ে পড়েছে। সব মানুষের মনে কেমন জানি একটা
আনন্দের উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে । মানুষের সমাগম বেশি হওয়ায় বিক্রিও
বেড়েছে।
কুমিল্লার কোটবাড়ি শালবন বিহারে ঘুরতে আসা স্কুল শিক্ষক আব্দুল
হক বলেন, ঈদসহ বিশেষ দিনগুলোতে কুমিল্লার বিনোদন কেন্দ্র গুলো এমনিতেই
মানুষের পথচারনায় মুখর থাকে। এবার ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় মানুষ যেন প্রাণ
খুলে ঘুরতে বের হয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। আবহাওয়া
অনুকূলে থাকায় এবারের ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে
বিনোদনকেন্দ্রগুলো। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ
বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন। আমরাও ঘুরতে বের হয়েছি পরিবারের সকল
সদস্যদের নিয়ে।
কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্কের
পরিচালক মোদাব্বির হোসেন নাসির বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিন থেকে চার
গুণ বেশি মানুষ এখানে ঘুরতে আসছেন। মনের আনন্দে পরিবারের সদস্যরা মিলে
এখানে একটু আনন্দঘন সময় কাটান। আমরাও চেষ্টা করেছি যেন দর্শনার্থীদের
বিনোদনের সার্বিক চাহিদা মিটানো যায়।
ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো.
শাহীন আলম বলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে আবহাওয়া ভালো থাকায় দর্শনার্থীদের
উপচে পড়া ভিড় লেগে রয়েছে। ঈদের দিন দর্শনার্থীদের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে
যায়। বর্তমানেও দর্শনার্থীর উপস্থিতি ভালো। প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ হাজার মানুষ
আসছেন শালবন বিহারে। দর্শনার্থীদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে পর্যাপ্ত
প্রস্তুতি রয়েছে।