স্বাস্থ্য
খাতের উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। সেই
সঙ্গে আছে ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা। ইউনিয়নভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন
করা হলেও সেগুলোর অবস্থা ভালো নয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোও
প্রত্যাশিত সেবা দিতে পারছে না।
বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে রোগীদের দীর্ঘ
সিরিয়ালে অপেক্ষমাণ থাকতে হয়। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক দেখানো গেলেও
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয় বাইরে থেকে। সরকারি বরাদ্দের ওষুধ রোগীরা ঠিকমতো
পায় না। ফলে রোগীদের চিকিৎসা খরচ অনেক বেড়ে যায়, যা অনেক রোগী বহন করতে
পারে না।
পাশাপাশি রয়েছে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা, আন্তরিকতার অভাব,
অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ভুল চিকিৎসা-এমনই অনেক দুর্বলতা। দুর্বলতার
এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে লন্ডনভিত্তিক ইকোনমিস্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান
‘ইকোনমিস্ট ইমপ্যাক্ট’-এর জরিপে। জরিপ অনুযায়ী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
(ডাব্লিউএইচও) ছয়টি অঞ্চলের ৪০টি দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্য সূচকে
বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিম্নে, স্কোর ৩০.৮। ৩৮.৫ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের
আগে রয়েছে আলজেরিয়া।
আর প্রথম অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্যের স্কোর হলো
৯০.৮। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের স্কোর হলো ৫২.৫ ও চীনের ৭০.৩। এমন
প্রেক্ষাপটে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য
দিবস ২০২৪’। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিতে কাজ
করি এক সাথে’।
সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণায়ই উঠে এসেছে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে
চিকিৎসাসেবা নিতে আসা ৯৩ শতাংশ রোগীই হাসপাতাল থেকে কোনো ওষুধ পায় না। ৮৫
শতাংশ রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ছুটতে হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তির নিজ পকেটের ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে। ২০২০ সালে এই
ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৯ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ৬৪ শতাংশ। অথচ
২০১২ সালে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের প্রণীত কৌশলপত্রে বলা হয়েছিল,
ক্রমান্বয়ে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় কমিয়ে আনা হবে এবং ২০৩২ সালে তা হবে মাত্র
৩২ শতাংশ। বাস্তবে হয়েছে উল্টোটা। ব্যয় বেশি হওয়ায় ১৬ শতাংশ খানা বা তিন
কোটিরও বেশি মানুষ অসুস্থ হলেও চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে যায় না। এমন
পরিস্থিতিই প্রতিফলিত হয়েছে ইকোনমিস্ট ইমপ্যাক্টের জরিপে। প্রতিবেদন
অনুযায়ী, জরিপে প্রধানত চারটি বিষয় বিবেচনা করা হয়। এগুলো হলো-১. একটি
দেশের কাছে জনস্বাস্থ্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। ২. রাষ্ট্রের সব নীতিতে
স্বাস্থ্য কতটুকু স্থান পায়। ৩. আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা
বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কি না। ৪. স্বাস্থ্যসেবা থেকে কোনো মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে কি
না।
সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে
আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত তো বটেই, ভুটান, শ্রীলঙ্কার থেকেও আমরা পিছিয়ে
আছি। এই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের আরো আন্তরিক হতে হবে। জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে
বাজেট বৃদ্ধিসহ নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য
ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়ন করতে হবে। অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় সফলভাবে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে
প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।