দেশের
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। মানুষ
শান্তি প্রিয়, নিরাপদে ও মানসম্মান নিয়ে বাঁচতে চায়। সেই পরিবেশটুকুই মানুষ
রাষ্ট্রের নিকট চায়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই সারাদেশে পুলিশ কর্মকান্ড দ্রুত
স্বাভাবিক করতে হবে। যৌথ অভিযানের পরিধি আরও বাড়াতে হবে। নিরাপদে বসবাস করা
মানুষের মৌলিক অধিকার। সকলেরই চাওয়া হচ্ছে দ্রুততম সময়ে মাপে অবৈধ
আগ্রেয়াস্ত্র উদ্ধার করা। পুলিশি কার্যক্রম জোরদার করা হোক। মানুষের
প্রত্যাশা ও সরকারের জোরদার উদ্যোগ দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত
উন্নতি হবে। দূর্বত্তদের দমনে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এটাই সকলের
কামনা।
অভ্যুত্থানের সময় দেশের অনেক থানায় হামলা হয়েছে। অস্ত্র,
গোলাবারুদ লুট হয়েছে। কয়েকটি কারাগারেও হামলা হয়েছে। অস্ত্র লুটের পাশাপাশি
অনেক অপরাধীও বের হয়ে গিয়েছে। অনেক ঘটনা বলে দেয় সন্ত্রাসীদের অনেকের নিকট
অস্ত্র রয়েছে, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গণ অভ্যুত্থানে লুট হওয়া অস্ত্র। এর
মধ্যে কিছু অস্ত্র উদ্ভার হয়েছে। অনেক অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি। কারাগার
থেকে পালিয়ে যাওয়া কিছু অপরাধী এখনও গ্রেপ্তার হয়নি।
আইন-শৃঙ্খলা
পরিস্থিতির অবনতি এখনও বিদ্যমান। বাড়ছে খুনখারাবি, চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজী,
অপহরণ, লুটতরাজের মত ঘটনাসমূহ। পথে-ঘাটে হানা দেয়ার পাশাপাশি বাসায়ও হানা
দিচ্ছে দূর্বৃত্তরা। এবার ঈদে ঢাকা শহর ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রাস্তায় পুলিশি
নিরাপত্তা বাড়ানোর কারণে হাইজ্যাক ও লুটতরাজ কমেছে। সারাদেশকে এ নিরাপত্তার
বলয়ে ঢাকতে পারলে জনতা হবে নিরাপদ। মিডিয়া মারফত জানা যায়, দেশজুড়ে একের
পর এক নানা ধরনের অপরাধ ঘটে চলছে। চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি থেকে খুন, ধর্ষণও
হচ্ছে অবলীলায়। সারাদেশে চলমান ‘ডেভিল হান্ট’ কর্মসূচীর মধ্যেও থেমে নাই
অপরাধচক্রের এসব কর্মকাণ্ড। প্রকাশ্যে জনাকীর্ণ অবস্থানেও এসব ফৌজদারী
অপরাধ ঘটছে। অপরাধীরা কাউকেই তোয়াক্কা করছে না। বরং দিনে দিনে আরো বেপরোয়া
হয়ে উঠেছে। অব্যাহত এমন কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্কের
সম্ভাবনা বিরাজ করছে। সন্ধ্যার পর থেকে যৌথ পেট্রোল শুরু করা দরকার।
আইন-শৃঙ্খলার অবনতিতে সকল স্থানে পেট্রোল বাড়াতে হবে। প্রয়োজন ভেদে তল্লাশী
চৌকী বসাতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য সিকিউরিটিজ এর নজর দারী
বাড়াতে হবে।
বিশাল বিশাল অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে
উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে অর্থ। রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়েছে। উন্নয়ন
প্রকল্পের টাকা চলে গেছে সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠীর হাতে, স্থানীয়
জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের স্বার্থে প্রকল্প প্রণয়ন করে টাকা ভাগবাটোয়ারা করে
নিয়ে গেছেন, এমন অভিযোগ অনেক পুরনো। জনপ্রতিনিধিরা নিজের পকেট ভারী করতে ও
দলের লোকদের কর্মসংস্থান করতে গিয়ে নানা প্রকল্প দেখিয়ে উন্নয়ন বরাদ্দের
টাকা লুটপাটে অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ অতীতে বরাবরই শোনা গেছে। বাস্তবে কোন
উন্নয়ন কাজ হয়নি। ভূয়া উন্নয়ন প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প
বাস্তবায়নে দলের নেতাকর্মীসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তল্পিবাহকদের যুক্ত
করা হয়েছে। গত ১৫ বছর ধরে এভাবেই দলীয় নেতাকর্মী ও নির্বাচিত
জনপ্রতিনিধিদের পকেট ভারী হয়েছে। কোন প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি।
দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে আর তাতে ব্যয়ও বেড়েছে। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা,
অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ও অর্থপাচার দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
ব্যাংকিং সেক্টর ও নানা অবকাঠামো নির্মাণে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে।
আগের
সরকারের সময় অর্থপাচার নিয়ে গুরুতর অভিযোগ ও আলোচনা হওয়া স্বত্তে¦ও এ
অপরাধ বন্ধ করতে সেই সরকারের তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি। গত দেড়
দশকে লুট পাটের চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। অন্তবর্তী সরকার বিদেশে
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাধান্য দেয়া
উচিত। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে হলে, মুদ্রা পাচাররোধে কঠোর ব্যবস্থা ও
উন্নয়ন প্রকল্পে লুটপাট বন্ধ করতে হবে। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে এটাই উত্তম
সোপান।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ