সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ঘাটতি বাণিজ্য আছে এমন দেশগুলো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নানা মাত্রায় শুল্ক আরোপ করেছে। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব পণ্য রপ্তানি হয় বা যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে, সেসবের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর গড়ে ৮৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শুধু তৈরি পোশাকই রপ্তানি হয় ৭৫০ কোটি ডলারের।
আর বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৯০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। তাই বিষয়টি সরকার, ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকদের কাছে বড় ভাবনার বিষয় হয়ে উঠেছে। অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে রীতিমতো বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ সে পথে না হেঁটে উল্টো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
পত্রিকান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫টি পণ্যে শুল্ক ছাড় দিতে পারে বাংলাদেশ। পাশাপাশি বাংলাদেশ বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কহার কমানোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি প্রধান প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য আমদানি করে, সেসব পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
বিষয়টি তাদেরও বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে। জানা যায়, ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিজেদের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ধরে রাখার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে বড় ধরনের শুল্ক ছাড় দিতে যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, তারা অনেক মার্কিন পণ্যে শতভাগ শুল্ক ছাড় দেবে। এরপর আলোচনা করে তাদের পণ্যে শুল্ক কমাবে। আর বাংলাদেশ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিযোগ্য কিছু পণ্যের ওপর শুল্কছাড়ের একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে।
এটি এখন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে রয়েছে অনুমোদনের জন্য। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের ঘোষণার পর শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পৃথক প্রস্তাব দিয়েছে এনবিআর ও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এনবিআর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ১০ থেকে ১২টি পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া বিডার পক্ষ থেকেও কিছু প্রস্তাব এসেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সরকারি দুটি সংস্থার কাছ থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি পণ্যের ওপর শুল্কহার কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারে। শ্রমঘন এই শিল্পে কাজ করে ৪০ লাখের বেশি মানুষ, যাদের বেশির ভাগই নারী। তাই তৈরি পোশাক খাতের ঝুঁকি মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব পদক্ষেপই নিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। যেহেতু এটি আলোচনাযোগ্য, তাই আমরা আলোচনা করব এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা সর্বোত্তম সমাধানে পৌঁছতে পারব।’ প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা শিগগিরই কিছু ব্যবস্থা নেব। ভয় পাওয়ার, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
আমরাও মনে করি, সরকার সময়মতো সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেবে, যাতে আমাদের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য বহুমুখী করতে হবে এবং আমাদের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিকল্প বাজার খুঁজে বের করার ওপর আরো জোর দিতে হবে।