জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের স্নাতকের চূড়ান্ত ফলাফলে তৃতীয় হয়েছিলেন
ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। কিন্তু তার আগেই তিনি আত্মহননের পথ বেঁচে
নিয়েছিলেন। অবন্তিকার বাবা অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দীনকে পদায়ন করা
হয়েছে কুড়িগ্রামের এক কলেজের অধ্যক্ষ পদে। কিন্তু তার দুই বছর আগেই তিনি
পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।
স্বামী ও মেয়ের কৃতিত্বপূর্ণ এই অর্জনের কথা
উল্লেখ করেও আক্ষেপ ঝরছে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনমের কণ্ঠে। কারণ যখন তার
স্বামী ও মেয়ের জীবনে এসব সাফল্য হাজির হয়েছে তখন তারা কেউ আর বেঁচে নেই।
স্বামী-সন্তান হারা এই নারী বলেন, “আমার প্রাপ্তিগুলো সব কবরে... কেউই পৃথিবীতে নেই।”
মঙ্গলবার
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মাহবুব
আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ৩৭ জনকে
অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলি/পদায়ন করা
হয়।
ওই তালিকায় ১৩ নম্বরে রয়েছেন- কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল
উদ্দীন। তাকে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় সরকারি মীর ইসমাইল হোসেন কলেজে
অধ্যক্ষ পদে পদায়ন করা হয়েছে।
তবে অধ্যাপক জামাল দুই বছর আগেই প্রয়াত হয়েছেন। ৫৩ বছর বয়সে মারা যাওয়া এই অধ্যাপকের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়।
এ
বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় বসবাস করা
তাহমিনা শবনম বলেন, “২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে
দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী বাহিনীর রাম দার কোপে আমার স্বামী
বাম হাত ও পিঠে আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার
চিকিৎসা চলে।
“এছাড়া তিনি হার্টের রোগী ছিলেন। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন এবং ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল মারা যান।”
তিনি
আরও বলেন, “২০২৩ সালের মে মাসের দিকে সরকারি গোয়েন্দা শাখার লোকজন আমার
কাছে তার পদায়নের বিষয়ে যোগাযোগ করলে আমি তাদের জানিয়েছিলাম যে- আমার
স্বামী মারা গেছেন।
“এছাড়াও আমি আমার স্বামীর পেনশনের টাকাও উত্তোলন করেছি। এতো দিন পর মাউশি তাকে পদায়ন করলো। পদায়ন হলে তার অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল।”
মোহাম্মদ
জামাল উদ্দীন ও তাহমিনা শবনম দম্পতির একমাত্র মেয়ে ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা
(২৪) ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। গত বছরের ১৫
মার্চ রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কুমিল্লার বাসায় আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা।
তার
আগে তিনি ফেইসবুক পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী
প্রক্টর (সাময়িক বরখাস্ত) দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে হয়রানি ও উৎপীড়নের নানা
অভিযোগ করেছিলেন।
আত্মহত্যার প্ররোচনার প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পেয়ে এই দুজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। বর্তমানে উভয়ে জামিনে মুক্ত।
এ
সব বিষয়ে বুধবার সকালে তাহমিনা শবনম সাংবাদিকদের বলেন, “আমার স্বামী
অসম্ভব মেধাবী ছিলেন। তিনি জানতেন অধ্যক্ষ হবেন, কিন্তু সেই অধ্যক্ষের
প্রজ্ঞাপন পেলেন মৃত্যুর দুই বছর পর।
“মেয়েও তার শিক্ষা জীবনের সুখবরটি
জানতে পারেনি। গত বছরের ১৯ মে অবন্তিকার স্নাতকের (এলএলবি অনার্স) চূড়ান্ত
পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে সিজিপিএ ৩ দশমিক ৬৫ পেয়ে আইন বিভাগে তৃতীয়
স্থান অর্জন করে অবন্তিকা। কিন্তু কেউই পৃথিবীতে নেই।”
এদিকে প্রয়াত অধ্যাপককে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়নের বিষয়টি জানাজানি হলে কুড়িগ্রাম জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
সরকারি
মীর ইসমাইল হোসেন ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ.টি.এম শওকত আকবর
বলেন, “গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কলেজ অধ্যক্ষ আ ন ম আজিজুর রহমান অবসরে যাওয়ার
পর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ
করি।
“মাউশি থেকে এখন এখানে অধ্যক্ষ নিয়োগ হলে আমি পূর্বের পদে বহাল
থাকব। মৃত ব্যক্তির পদায়নের বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমে জানলাম।
”
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব
মো. মাহবুব আলমের মোবাইলে কল করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।