সকালে এসএসসি পরীক্ষা। সেদিনই রাত দেড় টায় নাহিদের বাবা আক্তার হোসেন (৪৫) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।কিন্তু বাবার মৃত্যুর কষ্ট বুকে নিয়েই পরীক্ষ দিলেন নাহিদ।
পরীক্ষা শেষে হল থেকে বের হয়েই বাবার লাশের খাটিয়া কাঁধে তুলে নিলেন ছেলে নাহিদ। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার হরিশ্চর ইউনিয়ন হাই স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে বের হয়ে তিনি নিজ গ্রাম বড় হাড়গিলায় গিয়ে বাবার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করেন। তিনি এবছর স্থানীয় মাতাইনকোট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন।
এর আগে বুধবার রাত দেড় টায় নাহিদের বাবা আক্তার হোসেন (৪৫) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে দাফনের সম্ভাবনা থাকলেও নাহিদ এসএসসি পরীক্ষার হলে যাওয়ায় দাফনের সময় পিছিয়ে দুপুর ২টায় দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল কাদের ও রনি জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে পরীক্ষার হল থেকে ফিরে নাহিদ জোহরের নামাজ আদায় করেন। এরপর বাবার লাশের খাটিয়া কাঁধে নিয়ে বাড়ি থেকে বড়হাড়গিলা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে যান। জানাজা শেষে আবারও খাটিয়া কাঁধে নিয়ে শরীয়তের নিয়ম মেনে নিজের বাবার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন।
জানাজার নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা জাকির হোসেন। জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করেন মোস্তফা কামাল খোকনসহ মাতাইনকোট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বড় হাড়গিলা গ্রামবাসী।
মাতাইনকোট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের স্কুল থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্র নাহিদ এর বাবা বুধবার রাতে ইন্তেকাল করেছেন। ছেলের পরীক্ষার কারনে সকাল থেকে পিছিয়ে দুপুরে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আমি তার বাবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তার শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
হরিশ্চর ইউনিয়ন হাই স্কুল এন্ড কলেজ এর অধ্যক্ষ ও এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব ইলিয়াছ কাঞ্চন বলেন, আজকে (১০ এপ্রিল) এসএসসির বাংলা বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। আমাদের কেন্দ্রে ৫শ ৮৬জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫শ ৮০জন অংশগ্রহণ করেছেন। ৬জন ছাত্রী অনুপস্থিত ছিল। ছাত্রদের মধ্যে নাহিদ নামের একজন পরীক্ষার্থী বাবার মৃত্যুর পরও মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষার হলে এসেছেন। শুনেছি পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে বাবার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করেছেন। আল্লাহ তার বাবাকে জান্নাত দান করুক।
এসএসসি পরীক্ষার্থী নাহিদ বলেন, আমার বাবা ৪মাস ধরে টিবি রোগে আক্রান্ত। ঋণ করে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বাবার চিকিৎসার চেষ্টা করেছি। গত মঙ্গলবার বিকেলে নাকে মুখে রক্ত বের হতে থাকলে বাবাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। বুধবার সকাল থেকে আমি বাড়িতে থেকে এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু রাত দেড়টায় বাবার মৃত্যুর খবর পাই। এরপর থেকে আর পড়তে পারিনি।
কান্নাজনিত কন্ঠে তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে বাবার নিথর দেহ বাড়ির উঠোনে একা রেখে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। পরীক্ষার হলে বসেও বাবাকেই ভাবছিলাম। কিছু লিখতে গেলেই খাতা দেখা যায় না, সাদা কাপড়ে মোড়ানো বাবার লাশ চোখে ভাসছিল। তারপরও কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। পরিবারে আমার মা রয়েছে। একমাত্র বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। আমার ছোট ভাইটি মাতাইনকোট উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। বাবাহীন একটি অস্বচ্ছল পরিবার কিভাবে সামনে পথ চলবে সেটাই ভাবছি। সবাই আমাদের পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।