বহুমাত্রিক লেখক প্রয়াত শান্তনু কায়সারের স্মৃতিতে প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য এবং শান্তনু কায়সার স্মৃতি পাঠাগার ও চর্চা কেন্দ্র প্রবর্তন করেছে ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার। কবিতা, কথাসাহিত্য এবং প্রবন্ধ-গবেষণা বিভাগে প্রথমবারের মতো ২০২৪ সালের পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন যথাক্রমে হাসিন এহ্সাস লগ্ন, সালমান সাদিক এবং জাকারিয়া প্রীণন। তাঁদের নির্বাচিত পাণ্ডুলিপিগুলো অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এ ঐতিহ্য থেকে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
আজ ১১ এপ্রিল ২০২৫ শুক্রবার অধ্যাপক শান্তনু কায়সারের ৮ম প্রয়াণবার্ষিকীতে বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ প্রদান অনুষ্ঠানে’ সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন শান্তনু কায়সার স্মৃতি পাঠাগার ও চর্চা কেন্দ্র'র পরিচালক এবং শান্তনু কায়সারের কনিষ্ঠপুত্র রাসেল রায়হান। প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী। বিচারকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান করেন কবি ও গবেষক অধ্যাপক ড. দিলারা হাফিজ। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ঐতিহ্য’র প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাইম।
শুরুতে শান্তনু কায়সার এবং পুরস্কার বিজয়ী তিন লেখককে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে হাসিন এহসাস লগ্নকে তার সঙস্ অব দ্য মিউজেস কবিতা পাণ্ডুলিপির জন্য ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর ক্রেস্ট, সনদ এবং ৫০, ০০০ টাকা অর্থমূল্যের চেক হস্তান্তর করা হয়।
সালমান সাদিককে তারএকুরিয়াম গল্প-পাণ্ডুলিপির জন্য ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর ক্রেস্ট, সনদ এবং ৫০, ০০০ টাকা অর্থমূল্যের চেক হস্তান্তর করা হয়।
জাকারিয়া প্রীণনকে তার কবির সোনালি অন্ধকার প্রবন্ধ-পাণ্ডুলিপির জন্য ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর ক্রেস্ট, সনদ এবং ৫০, ০০০ টাকা অর্থমূল্যের চেক হস্তান্তর করা হয়।
সূচনা বক্তব্যে রাসেল রায়হান বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আমি আবেগাপ্লুত। আজ বাবার মৃত্যুবার্ষিকী কিন্তু আবার তরুণদের মাঝে তার নতুন জন্মেরও সূচনা হচ্ছে আজ। সারাজীবন তিনি তারুণ্যদীপ্ত ছিলেন, তরুণদের সঙ্গ পছন্দ করতেন এবং তারুণ্যের ইতিবাচক উত্থান প্রত্যাশা করেছেন। আমি ও আমার পরিবার গভীরভাবে কৃতজ্ঞ ঐতিহ্য-এর কাছে, কারণ তারা আমাদের সহযোগী হয়ে ‘ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ প্রবর্তন করেছেন।
বিচারকদের পক্ষ থেকে ড. দিলারা হাফিজ বলেন, আমি ঐতিহ্য’কে ধন্যবাদ জানাই এমন একজন গুণী লেখকের নামে প্রবর্তিত পুরস্কারের প্রথমবারের আয়োজনে আমাকে সম্পৃক্ত করায়। তিনি বলেন, সাহিত্যের বিচারকার্য খুবই কঠিন ও স্পর্শকাতর বিষয়। ভালোমন্দের তারতম্য বা মাত্রা নির্ধারণ শিল্পের ক্ষেত্রে অতি জটিল বিষয়। আমরা এই পুরস্কারের বিচারকাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে দেখেছি, বাংলাদেশের তরুণরা খুবই ভালো লিখছে।
অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী বলেন, শান্তনু কায়সার বাংলা সাহিত্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক। তিনি প্রথার বাইরে ভাবতেন, লিখতেন এবং প্রান্তের মানুষের জন্য কাজ করতেন। তিনি সেই অর্থে জনপ্রিয় লেখক নন কিন্তু আমাদের সাহিত্যকে নানা মাত্রায় সমৃদ্ধ করতে তাঁর অবদান অসাধারণ। তাঁর মতো গুণী লেখকের নামে পুরস্কার প্রবর্তন করে ঐতিহ্য একটি সাধুবাদযোগ্য কাজ করেছে। আমরা আশা করি এই উদ্যোগ সাময়িক নয় বরং তা স্থায়ী কর্মসূচিতে পরিণত হবে এবং এই পুরস্কারের মধ্য দিয়ে সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীল নবীন লেখকদের সনাক্ত করা সম্ভব হবে।
শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শান্তনু কায়সার একজন ব্যতিক্রমী লেখক। তিনি মানুষের প্রতি অপার দায়বদ্ধতা থেকে সাহিত্যচর্চা করেছেন, সংস্কৃতির সাধনা করেছেন এবং মানবমুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। শান্তনু কায়সার তরুণদের সাহিত্যকর্মের উৎসাহী পাঠক ও বিশ্লেষকও ছিলেন। তাই তাঁর স্মরণে ঐতিহ্য এবং শান্তনু কায়সারের পরিবারের উদ্যোগে প্রবর্তিত পুরস্কারটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা আশা করি এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের তরুণ লেখকরা উৎসাহ পাবে এবং তাদের সাহিত্যিক অভিযাত্রা আরও বেগবান হবে। তিনি বলেন, সাহিত্য এবং মানবতা আজ হুমকির মুখে। বৈশি^ক পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ গাজায় নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে এবং একই সঙ্গে সাহিত্যের মানবিক সুরকেও হত্যা করে চলেছে। এর হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে ব্যক্তিমালিকানার পৃথিবীকে পাল্টে ফেলে সামাজিক বিপ্লব সংঘটিত করতে হবে; মানুষ ও সাহিত্য উভয়ই তাহলে নিরাপদ থাকবে।
পুরস্কারবিজয়ী তিনজন লেখক হাসিন এহ্সাস লগ্ন, সালমান সাদিক ও জাকারিয়া প্রীণন তাদের পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি জানিয়ে বলেন, প্রিয় প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য প্রবর্তিত ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ অর্জন করায় আমরা আনন্দিত। এ পুরস্কার সাহিত্যজগতে ভবিষ্যৎ পথচলায় প্রেরণা সঞ্চার করবে এবং একই সঙ্গে মানবলগ্ন শিল্প সৃষ্টিতে দায়বদ্ধতা তৈরি করবে।
ধন্যবাদ বক্তব্যে আরিফুর রহমান নাইম বলেন, এ বছর ঐতিহ্যের ২৫ বছর পূর্তি রজতজয়ন্তী বর্ষ।এই রজতজয়ন্তী বছরে বহুমাত্রিক লেখক শান্তনু কায়সারের নামে পুরস্কার প্রদান করতে পেরে আমরা আনন্দিত।ঐতিহ্য বরাবর তরুণদের মেধাবী উচ্চারণকে ধারণ ও লালন করে আসছে। এদেশে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত বহু লেখকের প্রথম বইয়ের প্রকাশক আমরাই। এবছরও বইমেলায় আমরা ২৫ বছর উপলক্ষে ২৫ তরুণের প্রথম বই প্রকাশ করেছি। ‘ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ বিজয়ী তিন লেখকÑ হাসিন এহ্সাস লগ্ন, সালমান সাদিক ও জাকারিয়া প্রীণনকে আবারও অভিবাদন জানাই। আমরা আশা করি একজন গুণী লেখক শান্তনু কায়সারের নামে প্রবর্তিত পুরস্কার তাদের সৃজনশীল অভিযাত্রা আরও বেগবান করবে। তিনি বলেন, ২৫ বছরে উপনীত হয়ে আমরা বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের ২৫ টি রচনাবলি প্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছি, বাংলা প্রকাশনার ক্ষেত্রে তা একটি রেকর্ড। আমাদের পরবর্তী রচনাবলি কর্মসূচির মধ্যে ‘শান্তনু কায়সার রচনাবলি’ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন সাদিয়া রশ্নি সূচনা।