বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল ২০২৫
৪ বৈশাখ ১৪৩২
বাঁশির গ্রাম কুমিল্লার শ্রীমদ্দী
নববর্ষ ঘিরো বাঁশিতে তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা
শাহীন আলম ।।
প্রকাশ: শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ১:৩৩ এএম আপডেট: ১২.০৪.২০২৫ ২:০১ এএম |


বাঁশির গ্রাম কুমিল্লার শ্রীমদ্দী
ষাটোর্ধ্ব মো. আবুল কাশেম। যার বাঁশিতেই জীবন বাঁশিতেই জীবিকা। ১০ বছর বয়স থেকে বাবা সোলেমান মিয়ার হাত ধরে বাঁশি তৈরীর কাজ শুরু হয় তাঁর। এভাবে চলছে ৫০ বছর। এখনও ধরে রেখেছেন এ পেশা। তাঁর তৈরী বাঁশি দেশ ছাড়িয়ে ভারত, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ যাচ্ছে নানা দেশে। কাশেম মিয়া যেমন বাঁশির কারিগর তেমনি তাঁর বাঁশির সুর ঢেউ তুলে হৃদয়ের পরতে পরতে। রাখালিয়া বাঁশির সুরও যেন হার মানে তার কাছে। কাশেম মিয়া কুমিল্লার হোমনা উপজেলার শ্রীমুদ্দী গ্রামের বাসিন্দা। তার মত এ গ্রামে অন্তত ৩০টি পরিবার বাঁশি তৈরীর কাজ করেন। তবে এই সংখ্যা দুইশোরও বেশি ছিল। বর্তমানে তা কমে এখন ৩০ টি পরিবার এ কাজ করছেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে বাঁশ কেটে বাঁশি বানান একই গ্রামের মো.আবদুল করিম। বাপ-দাদা থেকে শেখানো কাজ তিনি শিখিয়েছেন তাঁর নিজের ছেলে মেয়েকেও। অবসরে বাঁশি বানাতে সাহায্য করেন তাঁরা। বৈশাখ উপলক্ষে তার বাড়ি গিয়ে দেখা যায় সবাই ব্যস্ত বাঁশি বানানোর কাজে। 
বুধবার (৯ এপ্রিল) হোমনার শ্রীমুদ্দি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বৈশাখ উপলক্ষে ঘরে ঘরে চলছে বাঁশি তৈরীর কাজ।  কেউ মাপমতো মুলিবাঁশ কাটছেন, কেউ আগুনে পুড়িয়ে নকশা করছেন, কেউ খুন্তি দিয়ে ছিদ্র করছেন। এই কাজ গ্রামের নারী পুরুষ ও শিশুরাও করছেন। বাঁশি কিনতে দূরদূরান্ত থেকে আসছেন ক্রেতরাও। 
কুমিল্লার গৌরীপুর থেকে বাঁশি কিনতে আসা লিটন মিয়া বলেন, আমি একটি বাউল সংঘে বাঁশি বাজানোর কাজ করি। বাঁশির প্রয়োজন হলে শ্রীমুদ্দি গ্রামে আসি। এখানকার বাঁশির নামডাক আছে। আমার পরিচিত অনেকেই এই গ্রামে আসেন।       
বাঁশির কারিগর মো. আবুল কাশেম মিয়া বলেন, শ্রীমুদ্দী একটি বাঁশির গ্রাম। এই গ্রাম ছাড়া এত বাঁশি আরও কোথাও বানানো হয় না। এই গ্রামের মানুষের রাতে ঘুমায় বাশির সুর শুনে ভোরে ঘুম ভাঙে বাশির সুর শুনে। বৈশাখ এলে বাশির চাহিদা বাড়ে। এ বছর আগের বছরের তুলনায় বেশি। একটা বাঁশি বানাতে ২৪ জন লোকের দরকার। এই ২৪ জন লোকের কাজ আমরা ৫/৬ জন মিলে করি। পরিশ্রম ও খরচ বেশি হয়।  মাঝে মধ্যে বাহির থেকে লোক এনেও কাজ করাতে হয়। শ্রীমুদ্দী গ্রাম বাঁশির গ্রাম নামে পরিচিত। আমার বানানো বাঁশি ভারত, আমেরিকা,  সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সৌদিআরব,কাতার, ওমান,লন্ডন, জাপান, কানাডা, জার্মান, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। বড় বড় সংগীতের ব্র্যান্ড দলের বাঁশি বাদকরা এই গ্রামে এসে বাঁশি নিয়ে যায়।  
কাশেম মিয়া আরও বলেন, ময়মনসিংহ, গৌরীপুর, চট্টগ্রাম থেকে বাঁশি তৈরীর চিকন জাতের মুলিবাঁশ সংগ্রহ করা হয়। পরে এই মুলিবাঁশ পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় অন্তত দুই বছর। দুই বছর পর পানিতে থেকে তুলে তা মাপ অনুযায়ী কেটে শুকানো হয় আরও দুই বছর। এরপর কাঁদা লাগিয়ে আগুনে পুড়িয়ে কালো রঙের নকশা করা হয়। গরম খুন্তি দিয়ে মাপে মাপে বাঁশিতে ছিদ্র করা হয়। আড়, বীন, বেলুন, ধ্রুপদী, খানদানি, তোতা, ফেন্সি, মোহন সানাই, ছোট নাগিন, বড় নাগিন, গ্রেনেট এরকম ১৪ আইটেমের বাঁশি বানানো হয় শ্রীমুদ্দি গ্রামে। 
বাঁশির কারিগর মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এই কাজ আমার দাদা করেছে আমার বাবা করছে আমরাও করছি এভাবেই চলছে। এই গ্রামে প্রায় দেড়শো বছর ধরে বাঁশি বানানোর কাজ চলে আসছে। বৈশাখে এলে এর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তখন সবাই  মিলে কাজ করে। তবে আগে ঘরের বাঁশি বানানোর কাজ করা হতো এখন তা কমে গেছে। মানুষ অন্য পেশায় কাজ করছে। আমি নিজেও অন্য পেশায় কাজ করি। অবসর সময়ে বাঁশি বানানোর কাজ করি। চট্টগ্রাম থেকে ট্রাকে করে মুলি বাঁশ আনতে পুলিশের হয়রানির শিকার হন বলেও জানান তিনি।  
বাঁশির কারিগর বৃদ্ধ আবদুল করিম মিয়া বলেন, বাঁশি তৈরীর কাজ দাদা করেছে, বাপ করেছে, আমিও করছি আমার ছেলে মেয়েরাও করছে। এভাবেই সংসার চালিয়ে আসছি। শ্রীমুদ্দি বাঁশির সুরের গ্রাম। ঘরে ঘরে বাঁশি তৈরী হয়। বৈশাখ এলে চাহিদা বাড়ে। ভালোভাবে বাঁশি বানাতে একটু ১৯/২০ হলেই তাল, লয় লড়ে যাবে। তাই সুর ঠিক রাখতে আমরা খেয়াল রাখি।         
 এ বিষয়ে জানতে কথা হয় হোমনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ক্ষেলালিকা চাকমা বলেন,  শ্রীমদ্দি একটি এতিহ্যবাহী গ্রামে। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্পটাকে টিকিয়ে রেখেছে।  অনেক পরিবার এই শিল্পের ওপর জীবিকা নির্বাহ করছে।  তাদের সাথে আমাদের সার্বক্ষনিক যোগাযোগ থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন পহেলা বৈশাখসহ অন্যান্য যে দিবস আছে আমরা তাদের আমন্ত্রণ করি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করে আসছে।












সর্বশেষ সংবাদ
অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িতদের বিচারে কমিটি হবে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
ওয়েবসাইটের তথ্য হালনাগাদ রাখার নির্দেশ
জিম্মি মুক্তি দিলেই গাজা যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হবে: যুক্তরাষ্ট্র
বৈঠকের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন, আবার আন্দোলনের ঘোষণা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের
গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা কমলো
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
লালমাইয়ে ছিলোনিয়া দিঘি থেকে মানুষের মাথার খুলি ও হাড় উদ্ধার
ক্রীড়া অঙ্গনের আরেকটি উইকেটের পতন
কুমিল্লায় বোরো ধান কাটার উৎসব কৃষকের মুখে হাসি
দে‌বিদ্বা‌রের বিএনপির দুই নেতা‌কে শোকজ
কুমিল্লায় যৌথবাহিনীর অভিযানে বিদেশি রাইফেল, শটগান উদ্ধার
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২