রোববার ১৩ এপ্রিল ২০২৫
৩০ চৈত্র ১৪৩১
কুমিল্লা সদরসহ তিন আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন মনির চৌধুরী
জহির শান্ত / তানভীর দিপু
প্রকাশ: রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ১:৩২ এএম আপডেট: ১৩.০৪.২০২৫ ২:১৪ এএম |


কুমিল্লা সদরসহ তিন আসন থেকে  মনোনয়ন চাইবেন মনির চৌধুরী
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লার তিনটি আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ¦ মনিরুল হক চৌধুরী। এর মধ্যে কুমিল্লা-৬ সদর আসন এবং কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট, লালমাই, সদর দক্ষিণের একাংশ) সংসদীয় আসনে মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও অন্য কোন আসনে মনোনয়ন চাইবেন তা এখনো স্থির করে উঠতে পারেননি। তবে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচনের ইচ্ছা আপাতত তাঁর নেই বলেও জানান বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদ।
দৈনিক কুমিল্লার কাগজের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে আলহাজ¦ মনিরুল হক চৌধুরী এসব কথা বলেন।
‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন আসন থেকে প্রার্থী হবেন’- এমন প্রশ্নে বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, আমাদের বিধানে আছে তিনটি আসন থেকে নির্বাচন করা যায়। আমি তিনটাই চাইবো। একটি হচ্ছে কুমিল্লা সদর আসন, অপর একটি আমি যেখানে আছি (কুমিল্লা-১০ নাঙ্গলকোট, লালমাই, সদর দক্ষিণের একাংশ)। এছাড়াও আরো একটি আসনে মনোনয়ন চাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। তবে সর্বোপরি এই সিদ্ধান্ত নিবে দল। 
‘কুমিল্লা কোতয়ালীর আদি বাসিন্দা হিসেবে অনেকেই মনে করছেন আপনি সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হবেন, আপনার সেই ইচ্ছে আছে কি না?’- এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, এক সময় এমন চিন্তা করেছিলাম। এখন বয়স হয়েছে এখন আর তা চিন্তা করি না। এখন আমি কুমিল্লার জন্য কিছু করতে চাই এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। সুযোগ কোথাও পাবো, আল্লাহ যখন যেখানে দেবেন সেখানেই। আমি কুমিল্লাকে বাঁচাতে চাই, কুমিল্লার জন্য কিছু করতে চাই। 
সংসদ নির্বাচন নিয়ে মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হয় তত ভালো। আমরা অবিলম্বে নির্বাচন চাই। ড. ইউনুস নিজেই বলেছেন, ডিসেম্বর নির্বাচনের ভালো সময় । তাই সরকার সিদ্ধান্ত নিলেই হয়। আর যদি সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না করে তাহলে বিএনপি তা মোকাবেলা করার ক্ষমতা রাখে। 
আগামী নির্বাচন বিএনপির নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, চ্যালেঞ্জ আগেও ছিলো। আগে ছিলো আওয়ামী লীগ। কিন্তু এখন যাদেরকে চ্যালেঞ্জ করবো তাদেরকে চিনি না। তাদের কতটুকু শক্তি আছে তাও জানি না। 
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি সম্পর্কে বলেন, আমি তাদের মাঝে ভবিষ্যত দেখছি। গত একমাস হয়েছে কমিটি হয়েছে, কিন্তু তারা এরই মধ্যে প্রতি উপজেলায় দুই তিনবারে বারের মত বসেছে। ছোট আকারে বসেছে। তারা এম মাঝে সব জায়গায় আহ্বায়ক কমিটি করে ফেলেছে। তারা যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে এই প্রজন্মের নেতা জাকারিয়া তাহের সুমন দলীয় সাংগঠনিক শক্তিতে ব্যাপক ভূমিকার রাখবে।  
কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চের মাধ্যমে কুমিল্লা সদর আসনে অবস্থান তৈরি করতে চাচ্ছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, আমি কুমিল্লা সদরের লোক, কোতয়ালীর লোক। আমার পূর্ব পুরুষ ৫শ বছর থেকেই এখানে বাস করি বলে জেনেছি। সুতরাং আমার মূল ঠিকানা কোতয়ালী কুমিল্লা। নির্বাচনি এলাকা হিসেবে যখন কোতয়ালীর অংশ এবং লাকসামের অংশ নিয়ে কুমিল্লা-০৯ ছিলো সেখানে আমার সংসদের রাজনীতি শুরু। মানুষ এটাকে আমার এলাকা হিসেবে জানে। এটাতে যখন একটি উপজেলা করে দেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আমাদের ঠিকানরা করে দেন।কিন্তু এরপরেই চক্রান্ত করে আমার উপজেলা বিলুপ্ত করে দুই ভাগ করে, তিন ভাগ করে। আমি যখন বলেছিলাম দুই ভাগ করলেও আমি নির্বাচন করবো তখন ১/১১ নির্বাচন কমিশন এটাকে তিন ভাগ করে। আমাকে তখন কুমিল্লা সদর আসন থেকে নির্বাচন করতে নেত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন, বলেছিলেন। এর আগেরবার তিনি এখান থেকে নির্বাচন করেছেন, তিনি যেহেতু আর করতে পারবে না বলেছিলেন। আমি তখন বলেছিলাম- সদর আসন থেকে নির্বাচনের আমার প্রস্তুতি নেই। ওই বছর আমি নির্বাচন করিনি। এরপরই আমার উপর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র নেমে আসে।সেই থেকে আমি ঐক্য সংহতি করে ম্যাডামের নির্দেশে নির্বাচনি এলাকা পুনর্বহালের আন্দোলন করি। পরবর্তীতে আমার নির্বাচনি এলাকা তিন ভাগ থেকে দুই ভাগ হয়। পরবর্তী পর্যায়ে ২০১৪ তে আমাদের এলাকা দুই ভাগ থেকে তিনভাগ হয়। একভাগ দিয়ে দেয় নাঙ্গলকোটের সাথে, পরে আবার লোটাস কামাল নাঙ্গলকোট আসনটি বিলুপ্ত করে। ২০১৮ তে আমি দুইটি আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবং বাছাইও হয়েছিলাম। কারাগার থেকেও দুইটিতেই নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। আমাদের নেতা তারেক জিয়া নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে বার্তা দিয়ে আমাকে নাঙ্গলকোট থেকে নির্বাচন করতে বলেন। তখন নাঙ্গলকোট থেকে প্রার্থী ছিলো না। তখন নাঙ্গলকোটে প্রার্থী ছিলাম। সে হিসেবে নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ, লালমাই এটা আমার আসন। আর আমার পৈতৃক আসন সদর। সুতরাং সেখানে আমি প্রার্থী হতে পারি এমন ধারনা স্বাভাবিক। আমি প্রার্থী হয়েছিলাম। কিন্তু কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চ নামে আমি যে কাজটি শুরু করেছি, তা সত্যিকার অর্থে কুমিল্লাকে বাঁচাবে। আমার নেত্রী তার শ্লোগানে বলেছিলেন, দেশ বাঁচাও। আমি বলেছি কুমিল্লা বাঁচাও, দক্ষিণ বাঁচাও, বাংলাদেশ বাঁচবে।   কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চের উদ্দেশ্য হলে- কুমিল্লার মানুষ স্বাধীনতার পরে কাঙ্খিত কিছু পায় নি। একটি মেডিকেল কলেজ, এটিও করেছে বিএনপি। কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ও করেছেন বেগম খালেদা জিয়া, আমি যখন এমপি। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশ, এটি কুমিল্লা দক্ষিণ পৌরসভা হবার পরে ৩৫ বর্গ কিলোমিটার হবার পরে- কুমিল্লরা ১৭ কিলোমিটার মিলে ৫২ বর্গ কিলোমিটার হবার পরে- আমাদের দক্ষিণের রাজস্ব যখন ৯ কোটি টাকা, তখন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন হওয়ার মত উপাদন সৃষ্টি হয়। এরপর সরকার উদ্যোগ নিয়ে ১/১১ থেকে পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ সিটি কর্পোরেশন করে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য দুই টি পৌরসভা একত্রিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই হয় নাই। কুমিল্লার পর ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন হয়েছে - সেটা আজকে বিভাগ। রংপুর , চট্টগ্রাম গিয়ে দেখেন। আর কুমিল্লা গিয়ে দেখেন, আমাদের দক্ষিণের প্রবেশ পথটি বন্ধ। পদুয়ারবাজার একটি ওভারপাস লুট হয়ে গেছে। এখন কুমিল্লা-নোয়াখালী রাস্তার উপর একটি প্রতিবন্ধকতা দিয়ে মামনুষের জন্য জীবন আর মরনের ফাঁদ সৃষ্টি করেছে। ঢাকা -চট্টগ্রাম মহাসড়কে চারলেন নির্মানের নামে আশে পাশের মানুষকে বিভক্ত করেছে, আন্ডারপাস ওভারপাস ছাড়া এখন মরনফাঁদ হয়েছে ডিভাইডার। কুমিল্লায় পরবর্তী পর্যায়ে যে ইপিজেড হলো- ইপিজেডের বর্জ্যরে কারণে ইতিমধ্যে দক্ষিণের ১ হাজার গ্রাম বিলুপ্তির পথে। কুমিল্লায় বিভাগ চাওয়া, মহানগরীর মানুষের যানজট নিরসন এবং নাগরিক পরিষেবা নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে তা নিয়ে আমরা সমাধানের চেষ্টা করি। ভেবেছিলাম সরকার পরিবর্তনের পর আমাদের এই কাজ হবে। আমরা এপর্যন্ত সকারকে দুইবার স্মারকলিপি দিয়েছি, কোন উন্নতি ঘটে নাই। কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চের সাথে কোন রাজনীতি নাই। কুমিল্লার জন্য রাজনীতি আছে। সুতরাং এটা যদি কেউ আমার আসন মনে করে এটা অন্যায় কিছু না। দল চাইলে আমি সেখানে যাইতে হবে। 
কুমিল্লা-০৯ নির্বাচনি আসন পুনর্বহাল নিয়ে আন্দোলনের সর্বশেষ সম্পর্কে মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ২০০৮ সালের তৎকালীন নির্বাচন কমিশন ৪৭টি আসন কেটে খান খান করে দেয়। ২০০৮ সালে নির্বাচনে বিএনপিকে পরাজিত করার জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিলো। সেই থেকে ম্যাডাম আমাকে আন্দোলন করতে বলেছেন, আমি আন্দোলন করছি। এই আন্দোলন অব্যাহত আছে। আমরা নির্বাচন কমিশনে বিরাট স্বারকলিপি দিয়েছি। আন্দোলন করেছি রোডমার্চ করেছি। এখনো অব্যাহত আছে। 
দীর্ঘ দিন কুমিল্লার মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত, এর কারণ কি ? এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা  জেলা ঘুরে ঢাকা থেকে ট্রেনে কুমিল্লায় এসে রাতে নামি। কেন ৫ জেলা ঘুরতে হবে? এই দাবীটা কেন উঠে না ঢাকা-কুমিল্লা সরাসরি রেললাইন। আমরা রাজনৈতিক নেতারা কেন এই দাবীটা তুলি নাই। কুমিল্লা বিমানবন্দর ছিলো ব্রটিশ আমল থেকে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ^ যুদ্ধের পর বিমানবন্দর না থাকলেও পরে এই বিমানবন্দরের জায়গা সদর দক্ষিণের মানুষ ফেরত পায় নাই। পরে শেখ হাসিনা সেখানে ইপিজেড করলো। কিন্তু এই ধান খেতে বিমানবন্দর হয়ে যেতে পারতো। নদী সাগর দিয়ে রেললাইন হয়েছে, কুমিল্লা-ঢাকা রেললাইন হয় নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক। সবচেয়ে জনবহুল এলাকা দিয়ে গেছে এই মহাসড়ক। কুমিল্লার মানুষের উপকারে আসে ওভারপাস আন্ডার পাস কিংবা ফ্লাইওভার দিয়ে একটি একটি মহাসড়ক হয়নি। 



















সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লা সদরসহ তিন আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন মনির চৌধুরী
বিজয়পুরে মৃৎশিল্পেররপ্তানি সম্ভাবনা আটকে আছে জ্বালানি গ্যাসে
নববর্ষকে ঘিরে কুমিল্লায় বাইন্ডিং প্রতিষ্ঠানে হালখাতা তৈরির ধুম
দাউদকান্দিতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার
দাউদকান্দিতে ছিনতাইকারী গ্রেফতার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা সিটির মেয়র পদে আবুর প্রার্থীতার খবরে আলোড়ন
কুমিল্লা সদরসহ তিন আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন মনির চৌধুরী
বাঁশির গ্রাম কুমিল্লার শ্রীমদ্দী
কুমিল্লা মহানগরী জামায়াতের গণসংযোগ পক্ষ উদ্বোধন
বিজয়পুরে মৃৎশিল্পেররপ্তানি সম্ভাবনা আটকে আছে জ্বালানি গ্যাসে
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২