মানবপাচার আমাদের বড় সমস্যাগুলোর একটি। বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে কিংবা কিছুটা উন্নত জীবন পেতে প্রতিবছর বহু তরুণ অবৈধভাবে বিদেশে যেতে চায় এবং পাচারকারীদের শিকারে পরিণত হয়। এসব তরুণ বা তাদের পরিবার শুধু আর্থিক ক্ষতিরই মুখোমুখি হয় না, অনেককে বেঘোরে প্রাণও দিতে হয়। পত্রিকান্তরে উপকূলীয় এলাকায় মানবপাচার সংক্রান্ত তিনটি আলাদা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনগুলোতে পাচারকারীচক্রের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি উঠে এসেছে তাদের খপ্পরে পড়া অসহায় মানুষের আর্তি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফ সীমান্তেই মানবপাচারে জড়িত আছে ১৫টি চক্র। এসব চক্রের তিন শতাধিক সদস্য রয়েছে। তারা শুধু রোহিঙ্গা নয়, বাংলাদেশিদেরও নানা কৌশলে পাচার করছে।
নৌবাহিনী গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগর থেকে ‘এফভি কুলসুমা’ নামের মাছ ধরার একটি নৌকা জব্দ করেছে। মালয়েশিয়াগামী ওই নৌকা থেকে মোট ২২১ জনকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ১৬৭ জনই ছিল রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি ছিল ৪২ জন, ১২ জন ছিল দালাল। সূত্র জানায়, পাচারকারীচক্রে যেমন বাংলাদেশিরা জড়িত আছে, তেমনি আছে রোহিঙ্গারাও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন পাঁচটি স্থান মানবপাচারের অন্যতম পয়েন্ট। উদ্ধারকৃত অনেকে পুলিশকে জানিয়েছে, বাহারছড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কচ্ছপিয়া গ্রামে পাচারকারীচক্রের বিশাল আস্তানা আছে। আছে কমপক্ষে ছয়টি বন্দিশালা। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজনকে এনে এখানে আটক করে রাখা হয়। টেকনাফ থানার পুলিশ গত জানুয়ারিতে অভিযান চালিয়ে বন্দিশালা থেকে পাচারের জন্য আটকে রাখা কয়েকজন রোহিঙ্গাসহ ১৬ জনকে উদ্ধারও করেছিল।
জানা যায়, কচ্ছপিয়া গ্রামের সংঘবদ্ধ পাচারকারীদের হাতে গত তিন মাসে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
মানবপাচার প্রতিরোধে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো খুব একটা সফল নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানবপাচার নির্মূলে বাংলাদেশ ন্যূনতম মানও অর্জন করতে পারেনি, তবে কিছু ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত পদক্ষেপ রয়েছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার জানান, গত দুই বছর তিন মাসে ১৫৫ জন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং উদ্ধার করা হয়েছে পাচারের শিকার ৫০০ জনকে। অভিযোগ রয়েছে, ছোটখাটো মানবপাচারকারী গ্রেপ্তার হলেও রাঘব বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। আবার বিচারকাজে দীর্ঘসূত্রতাও রয়েছে। জামিনে বেরিয়ে এসে অনেকে আবার একই কাজ করে।
মানবপাচার একটি গুরুতর অপরাধ। এর সঙ্গে রাষ্ট্রের মর্যাদার প্রশ্নও জড়িত আছে। তাই মানবপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। জড়িতদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ পথে বিদেশে না যাওয়ার জন্য ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালাতে হবে।