বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫
৩ বৈশাখ ১৪৩২
নববর্ষে কুমিল্লার রাজগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা
তানভীর দিপু:
প্রকাশ: বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ২:০০ এএম |



 নববর্ষে কুমিল্লার রাজগঞ্জে  ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে বসে দুই দিনব্যাপী ঐত্যিবাহী মাছের মেলা। নবর্ষের প্রথম দিন সোমবার শুরু হওয়া এ মেলা চলে পরদিন মঙ্গলবার পর্যন্ত। নতুন বছর ঘিরে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী এ মেলাটি ‘কাতলা মাছের মেলা’ হলেও এখানে অন্যান্য মাছও পাওয়া যায়। তুলনামূলক দাম সহনশীল হওয়ায় এ বছর বেচাকেনাও হয়েছে জমজমাট। মেলাকে কেন্দ্র করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে রাজগঞ্জ বাজারে; ছিলো উৎসুক জনতার ভিড়ও।
কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারের ঐত্যিবাহী এ মেলায় বিক্রি করতে নিয়ে আসা মাছের ৮০ শতাংশই কাতল। মাছ বিক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কাতলা মাছ বেশি এসেছে। কুমিল্লা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে মাছ নিয়ে আসেন শৌখিন বিক্রেতারা। ৩-২০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ মিলেছে মেলায়। মেলার পরিধি শুধু রাজগঞ্জ বাজার হলেও ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিনে মাছে দাম কিছুটা কম ছিলো বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে কাতলা মাছের মেলা বসে কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জে। এটি কুমিল্লার শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য। মেলা হয় দুই দিনের। বেচাকেনা হয় জমজমাট। আগে এ মেলাটি কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বসতো। বিগত কয়েক বছর ধরে তা স্থানান্তরিত হয়েছে রাজগঞ্জ বাজারে। 
গত দুই দিনে কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারের মাছের মেলা ঘুরে দেখা যায়, বাজারের স্থায়ী দোকানীদের পাশাপাশি সড়কের দুই পাশে বড় বড় ছাতা মেলে মাছ নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। তাদের ডালার মধ্যে বড় বড় কাতলা মাছের সঙ্গে সাজানো আছে বড় আকারের রুই, মৃগেল, আইড়, শোল ও কার্প মাছও। এছাড়াও বড় সাইজের টেংরা, শিং, পুটি, চিংড়ি মাছেরও পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতা। এসব মাছ দেখতে ও কিনতে সেখানে ভিড় জমিয়েছেন ক্রেতারা।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫-২০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২ শ টাকা কেজি দরে। আবার কিছুটা ছোটো আকারের কাতলা মাছ বিক্রি হয় ৩০০ টাকা কেজি দরেও। আকারভেদে ক্রেতারা দরদাম করছেন। রুই মাছ ৪০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। জীবিত মাছের দাম একটু বেশি। এর মধ্যে পুকুর-দিঘিতে চাষ হওয়া মাছের চাহিদা বেশি। আকারে খুব বেশি বড় না হলেও স্বাদ ভালো হওয়ায় এই মাছের দামও কিছুটা বেশি। মেলায় কুমিল্লা ছাড়াও চাঁদপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ফেনীসহ যশোর, সাতক্ষীরা, রাজশাহী থেকেও মাছ এসেছে।
রাজগঞ্জ বাজারের মাছ বিক্রেতারা আবুল হাশেম বলেন, ‘মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ৩০০ মাছ বিক্রেতা এসেছেন। আকার ও ওজন অনুযায়ী মাছের দরদাম নির্ধারিত হয়ে থাকে। এবারের মেলায় ১২ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ৮৫০-৯০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। ১০ কেজি ওজনের রুই মাছ বিক্রি করছি ৭৫০-৮০০ টাকা দরে। ১০ কেজি ওজনের কম হলে দাম নেমে আসে ৪৫০-৬৫০ টাকায়।
জেলার বরুড়া উপজেলা থেকে বড় আকারের কাতলা মাছ নিয়ে মেলায় হোসেন মিয়া বলেন ‘সোমবার পহেলা বৈশাখের দিন সকালে ২০০ টি কাতল মাছ নিয়ে আসি, সন্ধ্যার মধ্যে সেগুলো বিক্রি হয়ে যায়। পরদিন মঙ্গলবার মাছ এনেছি ২৫০টি। বিকেল পর্যন্ত ১৮০টি বিক্রি হয়েছে।’
তিনি বলেন,‘মাছ বড় হলে কেজিপ্রতির দাম বাড়তে থাকে। তবে মাঝারি সাইজের মাছের চাহিদা বেশি।’
বাজার ঘুরে মাঝ কিনতে আসা লোকজনদের কাছ থেকে দরদামের বিষয়ে জানা গেছে ভিন্ন তথ্য। কেউ বলছেন দাম বেশি, কেউ বলছে কম, আবার কেউ বলছেন- মেলা হিসেবে দাম ঠিকই আছে।
এবার মাছের দাম অনেকটাই বেশি বলে মন্তব্য করে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘গত পরশু যেই মাছ ৫৫০ টাকায় কিনেছি, সেই মাছ আজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। তবে এবার প্রচুর মাছ এসেছে, যার বেশির ভাগই কাতলা।’
শাহানুল হক নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘এই মেলায় এসে মাছ কেনা আমার শখ। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে পয়লা বৈশাখে এই মেলা থেকে মাছ কিনেছি। এবার ৩ হাজার ৪ টাকা দিয়ে প্রায় ৬ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনেছি।’
আরেক ক্রেতা আবদুল হালীম বলেন, সোমবার বাজার ঘুরে গেলেও মাছ কিনিনি। কেন যেনো মনে হয়েছে মঙ্গলবার দাম কমবে। আজকে বাজারে এসে দেখি দাম কিছুটা কমেছে। তাই ৫ কেজি ওজনের একটি কাতল মাছ কিনেছি দুই হাজার টাকায়। আরেকটু ছোটমাছ কিনলে আরো কমে পাওয়া যাচ্ছে।
রাজগঞ্জ বাজারের প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ী মোঃ বাদল জানান, বৈশাখী মেলা উপলক্ষে কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারের যে মাছের মেলা বসে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। শুধুমাত্র কুমিল্লা জেলার নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা এখানে মাছ নিয়ে আসেন। 
রাজগঞ্জ বাজারের এই মাঠে মেলাকে কুমিল্লার ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করে লালমাই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ লেখক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সফিকুর রহমান বলেন, আগে মেলাটি টাউন হল মাঠে বসতো। শহর ও শহরতলীর মানুষজনকে এখান থেকে মাছ কিনে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি পাঠাতেন, নিজেরা খাওয়ার জন্য নিয়ে যেতেন। পরবর্তীতে এটি রাজগঞ্জ বাজারে স্থানান্তরিত হয়। এবারও দুই দিন ব্যাপি মেলা বসেছে। মাছ কিনতে মেলায় ঢুকলেই আমরা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। আগে কতো বড় বড় মাছ আসতো মেলায়। এবারও কিছু বড় মাছ এসেছে। শুনেছি দামও নাগালের মধ্যেই ছিলো।













সর্বশেষ সংবাদ
বর্ষবরণে বর্ণিল আয়োজন
কলকাতায় ‘সেরা বাঙালি সম্মাননা’ পেলেন বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের প্রেসসচিব তারিক চয়ন
কুমিল্লায় যৌথবাহিনীর অভিযানে বিদেশি রাইফেল, শটগান উদ্ধার
লালমাইয়ে ছিলোনিয়া দিঘি থেকে মানুষের মাথার খুলি ও হাড় উদ্ধার
জায়গা দখল সংক্রান্ত বিষয়ে লাকসামের মজির আহমেদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
জায়গা দখল সংক্রান্ত বিষয়ে লাকসামের মজির আহমেদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
লালমাইয়ে ছিলোনিয়া দিঘি থেকে মানুষের মাথার খুলি ও হাড় উদ্ধার
তিতাসে প্রবাসী স্বপন হত্যা মামলার আসামি দুই সহোদর গ্রেপ্তার
‘মনে হচ্ছে, সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে’
ইরানে হামলায় ৮ পাকিস্তানি নিহত
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২