শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫
৬ বৈশাখ ১৪৩২
ক্রীড়া অঙ্গনের আরেকটি উইকেটের পতন
শাহজাহান চৌধুরী
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১:২০ এএম আপডেট: ১৭.০৪.২০২৫ ২:২৭ এএম |

   ক্রীড়া অঙ্গনের আরেকটি উইকেটের পতন
কুমিল্লার ক্রীকেট, ব্যান্ডমিন্টন অঙ্গনের এক সময়কার কিংবদন্তি প্লেয়ার, তবে আমার চোখে ক্রিকেট খেলায় তাঁর আম্পেয়ারিং এর দৃশ্যটি এখনো জ্বল জ্বল করছে। আর ব্যাডমিন্টন? স্যাটেল কখন কোথায় আাছে তা দেখতে হলে অভিজ্ঞ চোখেরপ্রয়োজন হতো।তিনি ছিলেন অনন্য। ব্যাডমিন্টনে প্রায়ই তাঁর পার্টনার থাকতেন জনান্তিক নাট্য সম্প্রদায়ের সদস্য রুহুল আমিন টুনুভাই। টুনু ভাই একটু ভারী ছিলেন কিন্তু খেলতে নেমে তার টেকনিকের কাছে অনেককেই হার মানতে হতো। কারণ তাকে কাভার দেওয়ার জন্যত বিজনদা আছেন। তখন ব্যাডমিন্টন অঙ্গনে যাদের খেলা মনকেড়েনিত তাদের মধ্যে শক্তি ঔষধালয়ের কানুদা। যিনি একাধারে ছিলেন ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার সৃষ্টির কারিগর, রতন কর, আরেক ক্রীড়া সংগঠক ফজিলত খান  সার্জেন্ট নিলু, ত্রীদীপ সাহা ঝিন্টু প্রমুখ।

বিজন দাকে চিনতাম সেই ছোট কাল থেকেই, তাঁর ছোট ভাই সঞ্জীব ছিল আমার বন্ধু, তাদের বাবা বিনোধ বিহারী রায় ছিলেন খুবই রাসভারি লোক। তাঁদের বাড়িটা ছিল দক্ষিণমুখি পুবে পশ্চিমে লম্বা এবং পুরো বাড়ির সমান ছিল ঢেউ খেলানো সিঁড়ি। সেই শিঁড়িতে শুয়ে বসে কত আড্ডা দিয়েছি। মাঝে তিনি চলেযান লন্ডন, আবার ফিরে আসেন। তার সেই ইনকরা সাদা প্যান্ট, সাদা শার্ট পরা ছীপ ছীপে শরীর ও হাঁটার স্টাইল আমাকে মোহিত করতো। তিনি আমার নাট্যকর্মের একজন এডমায়ার ছিলেন। এক সময় আমিও তাঁর মতো সাদা শার্ট পেন্ট পরা শুরু করলাম যা এখোন আমার ফেবারেট ড্রেস।
   ক্রীড়া অঙ্গনের আরেকটি উইকেটের পতন
বিজন দার সাথে আমার পরিচয় হওয়ার আরো কারণ ছিলো তিনি ক্রিকেট খেলতেন ইউনিয়ন ক্লাবে। একসময় তিনি ইউনিয়ন ক্লাবে সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। তাঁর সাথে বিজন দা’র বাড়ির অদূরেই আরেক ক্রিকেটের কিংবদন্তি সংগঠক গিয়াস উদ্দীন বাবুল ভাইয়ের বাসা। তিনিও ইউনিয়ন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিজনদাকে ইউনিয়ন ক্লাবের পাশাপশি আলোকিত বজ্রপুরের ইয়ং ব্রাদার্স ক্লাবের হয়েও খেলতে দেখেছি। আমাদের পাড়ার রতন কর ছিল তাঁর ভালো বন্ধু, রতন করও ছিলেন একজন দারুন ষ্টাইলিষ্ট। এছাড়া বজ্রপুর এলাকা ছিল ক্রিকেটারদের ডিপু নাজিম উদ্দীন খসরু, শেরই আবাদের আত্মীয় ছানাম ভাই, নওশাদ ভাই, মাসুদুল আমিন, আমাদের বন্ধু স্বপন কর, জিন্না চৌধুরী ভুলু সাহা, কাজী ছোটন প্রমুখ। আর বজ্রপুর এলাকার বিখ্যাত সাধন বাবুর মিষ্টি দোকান ছিল তাদের আড্ডা খানা। আমার বন্ধু বদরুল হুদা জেনুকে বিজনদা তাঁর উত্তরসুরী হিসাবে বিবেচনা করতেন। বিজনদা একজন তুখোড় ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন। সকল বয়সী খেলোয়াড়রাই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট  হতো। সে সময় ইউনিয়ন ক্লাবের ক্রিকেট প্রেকটিস হতো টাউন হল মাঠে। আমরা ফাঁকে ফোঁকড়ে সে মাঠে ক্রিকেট খেলতাম। তবে একবার বেক্সিম ব্যাঙ্কের পরিচালক স্বপনের বলে মাথায় আাঘাত পেয়ে আর ওমুখো হই নি। বেছে নিয়েছি নিরাপদ খেলা ভলিবলকে এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি থেকে ভলিবল প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স শেষ করে অলিম্পিক সলিডারিটি কোর্সও করেছি।
বিজনদা দেশকে প্রাণের অধিক ভালোবাসতেন। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর একা একা ফুল দিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে  বিড় বিড় করে দেশ মাতৃকার সৈনিকদের শ্রদ্ধা জানাতেন। তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি লন্ডন থেকে চলে আসলেন কেন? তিনি দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বললেন আমার দেশ আমার শহর ছেড়ে আমি বাঁচবো না। কথাটা কতটুকু সত্য এ উপলব্ধির ব্যাপার, এক কণ্যা ও স্ত্রী কে নিয়ে উনি অন্য কোথাও স্যাটেল হতে পারতেন কিন্তু আমৃত্যু তিনি কুমিল্লাই থেকে গেলেন। দেশীয় কৃষ্টি দেশীয় সংস্কৃতিকে তিনি ভালোবাসতেন। তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী কুমিল্লার সাথে জড়িত ছিলেন। সুইট হোমের আড্ডায়ও বিজনদাকে আমরা মাঝে মাঝে পেতাম। আমার নাটক তিনি খুব ভালোবাসতেন। কারণ আমার যৌবনকালের নাটকের চরিত্রগুলোই ছিল প্রতিবাদী তরুণের।
বিজনদা কুমিল্লা ক্লাবের মেম্বার ছিলেন। তাঁর বাবাও এ ক্লাবের মেম্বার ছিলেন। এক সময় কুমিল্লা ক্লাবের সদস্য হওয়ার আমার ইচ্ছা জাগলো আমি দাদাকে ধরলাম, তিনি বললেন নিশ্চই হবি, তবে সময় আসলে আমি বলবো। ঠিকই ১৯৯২ সালে ক্লাবের সদস্য ফর্মনিয়ে তাঁর হাতে ফিলাপ করে আমাকে কুমিল্লা ক্লাবের সদস্য করে নিলেন। বিলিয়াড খেলায় তার স্টাইল অনুকরণীয়, মনছুর হায়দারের সাথে ছিল তাঁর খুনসুটির সম্পর্ক আমরা তা উপভোগ করতাম। এক সময় দাদা অভিমান করেই ক্লাবে যাওয়া ছেড়ে দিলেন।
১০ এপ্রিল সারাদিন বাসায় ছিলাম। বিকেলে আলোকিত বজ্রপুরের সংগঠক মোঃ রফিকুল ইসলাম সোহেলের শিশুর আনন্দ শিক্ষা ঘর এর শিশুদের সাথে কাটিয় বাসায় এসেই ফেসবুক খুলে দাদার মৃত্যুর খবর পেলাম, দুঃখ হলো শেষ দেখাটাও হলো না। দাদাকে রাত ৮ টায় মহাশ্বশানে নেওয়া হবে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু মনে হলো আমি সহ্য করতে পারবো না দাদার অন্তোষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান। তাই দাদার সাথে আমার ভালো বাসার স্মৃতি গুলো লিখতে বসলাম। 
অনন্তলোকে ভালো থেকো দাদা।
লেখক : নাট্যকার ও নাট্য সংগঠক













সর্বশেষ সংবাদ
ঘোষিত ডেট লাইনের মধ্যেই সংস্কার শেষে নির্বাচন দিতে হবে
কুমিল্লার ৪ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল জামায়াত
কমিটি করলে ওয়ার্ডের সবাইকে আসামি করে দিতো, আপনাদের নিরাপত্তার জন্যই কমিটি করিনি -হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন
কুমিল্লায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
চুরির অপবাদ সইতে না পেরে শরীরে আগুন দেওয়া সেই অটো চালকের মৃত্যু
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সাবেক গাড়ি চালককে হত্যার হুমকি দিলেন সূচি
কুমিল্লায় ২২ পরীক্ষার্থী বহিষ্কার; দুই পরিদর্শককে অব্যাহতি
আজ লাকসামে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন
মুরাদনগরের বীভৎস অবস্থা দেখে আহত হয়েছি
সন্তান বিক্রি করে জুয়েলারি ও মোবাইল কিনেছেন মা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২