
ডাকাত সন্দেহে কুমিল্লার মুরাদনগরে দুই যুবককে পরিকল্পিত ভাবে পিটিয়ে হত্যার
ঘটনায় আরো দুইজনকে আটক করেছে সিআইডি। বুধবার দুপুরে উপজেলার দারোরা
ইউনিয়নের পালাসুতা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে
স্থানীয় জাহাঙ্গীর মার্কেট থেকে পালিয়ে পশ্চিম বিলের একটি ভুট্টাক্ষেতে আশ্রয় নিয়েছিল
তারা।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, পালাসুতা গ্রামের আবদুল বারেকের ছেলে রবিউল হোসেন (৩৪)
ও সুন্দর আলীর ছেলে পারভেজ মিয়া (২৫)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদকালে ধৃত রবিউল হোসেন এ
ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তবে তার কাছ থেকে উক্ত ঘটনার বিস্তারিত তথ্য
পাওয়া গেছে বলে সিআইডি পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় দারোরা
ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রামে ডাকাত সন্দেহে শ্বশুর নাবু মিয়ার ঘর থেকে তার মেয়ের স্বামী ও
দুই বন্ধুকে ধরে এনে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই কাজিয়াতল গ্রামের আব্দুস
ছালামের ছেলে নুরু মিয়া (২৮), পালাসুতা গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ইসমাইল
হোসেন (২৭) মারা যায়।
এলাকাবাসী জানায়, ওই রাতে অন্য এলাকায় যেভাবে ডাকাত এসেছে বলে প্রচার হয়েছে
সেটা আসলে পুরোপুরি গুজব ছিল। ডাকাতির ঘটনায় গণপিটুনি শুধু পালাসুতা গ্রামেই
হয়েছে। যারা মারা গেছে তাদের কেউ চুরি বা ডাকাতি করতেও দেখেনি। এমনকি তাদের কাছে
কোন অস্ত্রও পাওয়া যায়নি।
উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত নুরু মিয়ার বাবা আব্দুস ছালাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা
৮-১০ জনসহ নামধারী ২৪ জন এবং নিহত ইসমাইল হোসেনের ভাই লিটন শিকদার বাদী হয়ে
অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জনসহ নামধারী ২৭ জনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে কুমিল্লার আমলী আদালতে পৃথক
দু’টি হত্যা মামলা রুজু করেন। আদালতের বিজ্ঞ সিনিয়র ম্যাজিষ্ট্রেট মামলাগুলো তদন্তের জন্য
মুরাদনগর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়। পরে মামলার বাদী নারাজি দিলে সিআইডিকে তদন্ত করার
নির্দেশ দেয়। সিআইডি তদন্তের কিছুদিনের মধ্যেই মামলা অগ্রগতি হওয়ায় স্বজন হারানো
দুই পরিবারের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে।
দারোরা ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন খন্দকার বলেন, ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে
দুই যুবক মারা যাওয়ার ঘটনাটি সঠিক। ভিডিও ফুটেজ ও স্বাক্ষী প্রমানের ভিত্তিতে
হত্যাকারীদের সনাক্ত করছে সিআইডি। পুলিশী তদন্তে কারো কোন প্রকার অভিযোগ নেই।
প্রকৃত হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক এলাকাবাসীর দাবি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির এসআই মো. ফরহাদ আলী দৈনিক কুমিল্লার
কাগজকে বলেন, কোথায় ও কার বাড়িতে ডাকাতি বা ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল সুনির্দিষ্ট
ভাবে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনাটি যে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড এটা নিশ্চিত। এ
ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার মুল রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা চলছে।