
কুমিল্লা প্রতিনিধি।।
ইট কংক্রিটের দালানের মাঝে যেন প্রাণের স্পন্দন। সন্ধ্যার পর কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্র
টাউন হল মাঠে গ্রামীন ঐতিহ্যবাহী হাডুডু ও বলি খেলার আয়োজন। মাঠের চারপাশে উৎসুক দর্শকের
ভিড়। চাকচিক্যপূর্ণ শহরে গ্রামীণ এই খেলার আয়োজন মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। মাঠের চারপাশে
উঁচু দালানে ঘেরা, খুব বেশি মানুষের বসার জায়গা নেই- তারপরও দাঁড়িয়ে থেকেই হাজার দর্শক খেলার
পড়তে পড়তে উত্তেজনায় ঠাসা আয়োজন উপভোগ করেছেন করতালি ও হইহুল্লোড়ের মাধ্যমে।
নববর্ষ কে রাঙিয়ে তুলতে এই ভিন্নধর্মী আয়োজন করেছে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর
বিএনপি। বৈশাখের তৃতীয় দিনে বুধবার বিকেল থেকেই কুমিল্লা টাউন হল মাঠে শুরু হয় খেলা। গ্রামীন
এসব খেলা শহরে খুব আয়োজন নেই বলে- এবারের আয়োজন সচক্ষে উপভোগ করতে নানান বয়সী
মানুষের উপচে পরা ভিড়।
আয়োজনের প্রধান অতিথি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হাজী আমিনুর রশিদ
ইয়াছিন বলেন, চর্চার মাধ্যমে এসব গ্রামীণ খেলাধুলা আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। শুধু গ্রামের
মানুষ নয় শহরেও এসব আয়োজন যে করা যায় সে চেষ্টাই আমরা করেছি। আশা করছি, এ আয়োজন
দেখে শহরের মানুষ ও নতুন প্রজন্ম দেশী ঐতিহ্যের খেলাধুলায় আরো বেশি আগ্রহী হবে।
বুধবার বিকেলে কুমিল্লা জেলা হাডুডু (কাবাডি) দলের খেলোয়াড় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও
উপজেলা থেকে আসা খেলোয়ারদের নিয়ে লাল ও সবুজ নামে দুটি দল করা হয়। দুই পর্বের খেলায় সবুজ
দলকে ২৯- ২১ পয়েন্টে হারায় লাল দল। টানটান উত্তেজনাপূর্ন খেলায় দর্শকদের বেশির ভাগে ছিলেন
স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং শহরে নানান কাজে আসা নানান শ্রেণী পেশার মানুষ। খেলার
প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ মুহূর্তগুলোতে করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো টাউন হল মাঠ। খোলা মাঠে
খেলতে পারে এবং খেলা দেখে খুশি খেলোয়ার ও দর্শকরা।
সবুজ দলের খেলোয়ার কুমিল্লা জেলা দলের খেলোয়ার তানভীর আহমেদ বলেন, এর আগে আমরা
কুমিল্লা স্টেডিয়ামের ইনডোরে কাবাডি খেলেছি। এবার নিজের শহরে উন্মুক্ত মাঠে কাবাডি খেলে খুবই
ভালো লাগছে। খোলা মাঠে মানুষের সমর্থন থাকে অন্যরকম।
কান্দিরপাড় এলাকার বস্ত্র ব্যবসায়ী নূর নবী বলেন, ছোটবেলায় স্কুলে কলেজে কাবাডি খেলেছি।
এরপর সময়ের অভাবে আর খেলাও হয়নি দেখাও হয়নি। আজ আবার খেলা দেখে ভালো লাগলো।

সন্ধ্যার পরই শুরু হয় বলি খেলা। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের কুস্তি খেলা বলি খেলা নামে পরিচিত। মামা
ভাগিনার বলি খেলার শিরোনামে ম্যাচগুলোতে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন উপজেলার থেকে আসা
খেলোয়াররা। ১০ মিনিটের প্রতিটি ম্যাচে যে বলি বিজয় হয়েছেন তিনি পেয়েছেন অর্থ পুরস্কার। সদর
দক্ষিণ উপজেলার সোনাগাজী থেকে বলি খেলায় অংশ নিতে এসেছেন মীর হোসেন জনি। জনি বলেন, এর
আগে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বলি খেলায় অংশ নিয়েছি। শীতের সময় বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে এ খেলা বেশি
হয়। এবারে প্রথম শহরে এসে খেলছি। এত পরিমাণ দর্শক দেখে ভালো লাগছে।
বলি খেলার দর্শক কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, এর আগে
চট্টগ্রামের বলি খেলার নাম শুনেছি। টেলিভিশনে পত্রিকায় বলি খেলার খবর দেখেছি। এই বাড়ি
প্রথম বলি খেলা সামনাসামনি দেখছি। এ ধরনের খেলা আয়োজন করলে ক্রীড়া প্রেমিরা সবসময়ই
আনন্দ পাবে।
খেলার অন্যতম আয়োজক কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন,
খেলায় যারা বিজয়ী হচ্ছেন তাদেরকে বিএনপি'র পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এবার আমরা যে
সারা পেয়েছি বিভিন্ন উৎসবে এ ধরনের গ্রামীণ খেলার আয়োজন আমরা আবারো করবো।