১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্ষমা চাওয়া, ক্ষতিপূরণ, সম্পদ ভাগাভাগি, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠানোসহ বেশকিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশ মনে করে, এসব অমীমাংসিত বিষয়গুলো মীমাংসা হওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা বিষয়টি উত্থাপন করেছি— নায্যতা ও ঔচিত্যের দিক থেকে। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, আমরা পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলকে বলেছি যে, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে– সাম্প্রতিককালে উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতার কারণে সেটিকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে গেলে আমাদের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর মীমাংসা আশু প্রয়োজন। আমরা বৈঠকে একটি শব্দ ব্যবহার করেছি শক্ত ভিত্তি। আমরা বলেছি, একটি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য এই বিষয়গুলোর মীমাংসা হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের এখন যে সম্পর্ক– এই সময়ে এই বিষয়গুলো সমাধান করার জন্য একটি উপযুক্ত সময়।’
জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আজকে তাদের কাছ থেকে শুনতে চেয়েছি যে, তারা আলোচনা চালিয়ে যাবে। এ বিষয়ে গত দেড় দশকে কোনও আলোচনা হয়নি। কাজেই আমাদের লক্ষ্য ছিল তাদের নজরে আনা। আমাদের প্রত্যাশা— সামনে যেসব আলোচনা হবে, বৈঠক হবে– সেখানে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার একটি সুযোগ পাবো।’
‘আমি মনে করি, আমরা যেভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি, সেটার ভিত্তি হচ্ছে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক লাভ। আমরা আমাদের লাভ পুরোপুরি দেখছি। কাজেই এটি কোনোভাবে একটি বিশেষ দেশের প্রতি ঝুঁকে পড়ার বিষয় নয়’, বলে তিনি জানান।
পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ‘আমরা স্থবির সম্পর্ককে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি এবং সেটি আমরা সম্পূর্ণরূপে আমাদের জাতীয় স্বার্থ মাথায় রেখে করছি।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আগামী ২৭ এপ্রিল ঢাকা আসছেন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের তারিখ চূড়ান্ত করেছি, এ মাসের ২৭-২৮ তারিখে তিনি ঢাকা আসবেন। আজকের এ বৈঠকে দুদেশের মধ্যে যেসব সমঝোতা স্মারক নিয়ে আলোচনা হয়েছে– পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরকে মাথায় রেখে চূড়ান্ত করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পাকিস্তান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করছি। যাতে করে আমাদের লাইন মিনিস্ট্রিগুলোর সঙ্গে বসে সমঝোতা স্মারকগুলো পর্যালোচনা করতে পারি এবং চূড়ান্ত করতে পারি।’
ক্ষমা চাওয়ার কৌশল
বৈঠকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বাংলাদেশি গণহত্যার বিষয়টি তুলে ধরেছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা আমাদের বিষয় তুলে ধরেছি এবং কূটনীতির কাজ হচ্ছে— বিষয়টি তুলে সেটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। এখানে বিষয়টি এরকম নয় যে, আমরা বিষয়টি তোলার পরে তারা সেটিকে আলোচনার মধ্যে রাখতে চাননি। তারা বলেছে যে, তারা এটি নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা অব্যাহত রাখতে চান। কাজেই আমি এ আলোচনার প্রেক্ষিতে ভবিষ্যৎ আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নেবো।’
ক্ষতিপূরণ
১৯৭১ সালে সম্পদের হিসাবে ৪৫২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমাদের কাছে যে হিসাবটি আছে, প্ল্যানিং কমিশনের সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যানের হিসাব অনুযায়ী ৪০০ কোটি ডলারের। অন্য আরেকটি হিসাবে বলা আছে ৪৩২ কোটি ডলার। আমরা আজকের আলোচনায় পরের সংখ্যাটি বলেছি। এছাড়া ১৯৭০ সালে নভেম্বরে যে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়, সেখানে বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র ও এজেন্সি ২০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দান করেছে। সেটাও আমরা এ বৈঠকে হিস্যা চেয়েছি।’
আটকে পড়া পাকিস্তানি
আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠানোর বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত এক লাখ ২৬ হাজার ৯৪১জন আটকে পড়া পাকিস্তানি নাগরিক সেখানে ফিরে গেছেন। বাকি আছে ৩ লাখ ২৪ হাজার ১৪৭ জন, যারা ১৪টি জেলায় ৭৯টি ক্যাম্পে বসবাস করছে।’
সরাসরি বিমান চলাচল
পাকিস্তানের বেসরকারি বিমান কোম্পানি ‘ফ্লাই জিন্নাহ’কে সরাসরি বিমান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, ‘ফ্লাই জিন্নাহ’ আমাদের কাছে অনুমতি চেয়েছে এবং আমরা সেটি দিয়েছি। পরবর্তী সময়ে আরও একটি এয়ারলাইন্স আমাদের কাছে অনুমতি চেয়েছে। সেটি বিবেচনাধীন আছে।