গত রবিবার গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। দেশের শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা থাকলেও নতুন করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে এ খাত এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ সব ক্ষেত্রেই খরচ বহুগুণ বাড়বে। এমনিতেই বছরখানেক ধরে ডলারসংকটের ফাঁদে আটকে আছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। কিছুদিন ধরে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের তীব্র আপত্তির পরও বাড়ানো হলো গ্যাসের দাম। নতুন শিল্পের ক্ষেত্রে এই দাম বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। ফলে শিল্পে প্রতি ইউনিটে ১০ টাকা বাড়তি দিতে হবে। পুরোনো শিল্পগ্রাহকদেরও কিছু ক্ষেত্রে নতুন দাম পরিশোধ করতে হবে। অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি এই দাম। যারা গ্যাস সংযোগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন, তাদের অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আগের দাম দিতে হবে। এর বেশি ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি দাম।
দাম বাড়ানোয় সরকার কত টাকা বাড়তি আয় করবে তা জানে না কমিশন। শিল্প খাতের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। দাম বাড়ানোয় নতুন শিল্প-বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। খরচ বাড়ার আশঙ্কায় পুরোনো শিল্পেও আশানুরূপ বিনিয়োগ বাড়বে না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোয় গোটা শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা অর্থনীতির গতি কমাবে।
গ্যাসের এমন মূল্যবৃদ্ধি বিনিয়োগের পরিবেশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। নতুন শিল্প স্থাপনের সম্ভাবনা কমবে এবং বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করবে। রপ্তানিমুখী শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবচেয়ে বেশি। কারণ এ খাতগুলো মূলত গ্যাসনির্ভর। ছোট ও মাঝারি শিল্প বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে দুর্বল করে তুলবে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোয় শিল্প ও ব্যবসাসংশ্লিষ্ট সবাই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। কিন্তু গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে সচল অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াতে পারে যে, কেউ আর হয়তো নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হতে চাইবে না।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ঘোষিত গ্যাসের নতুন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, নতুন গ্রাহক, প্রতিশ্রুত গ্রাহক ও বিদ্যমান গ্রাহকদের জন্য আলাদাভাবে গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকার যখন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করবে। ভবিষ্যতের বিনিয়োগকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। সরকার যখন ইনভেস্টমেন্ট সামিটের মতো ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কথা ভাবছে, তখন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে পণ্যমূল্যও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে ভোক্তারা মূল্যবৃদ্ধির বাড়তি চাপে পড়তে পারে।
অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা, নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন এবং শিল্প খাতকে সচল রাখার স্বার্থে গ্যাসের দাম কমানোর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। আশা করছি, সরকার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখবে।