অতীতকে অস্বীকার করা যায় না, কিন্তু
অতীতের অপরাধ বা ভুলের জন্য, কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা ও অনুশোচনার প্রকাশ
আগামীর পথ তৈরি করে। না হলে সেই অতীতের কৃতকর্মের ভেতরই রুদ্ধ হয়ে থাকে
আগামীর পথচলা। বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা বর্বরোচিত
আক্রমণ চালিয়ে ৩০ লাখ নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করলেও সমানে ক্ষমা চাওয়ার
বিষয়টি বরাবরই এড়িয়ে গেছে। অথচ অতীতের ভুল স্বীকার করে দুনিয়ার বিভিন্ন
দেশের রাষ্ট্রনায়করা বিভিন্ন সময় যুদ্ধাপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন, যা
পরবর্তী সময়ে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে ভূমিকা রেখেছে।
বিশ্বযুদ্ধের সময়
পোল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হত্যাকাণ্ড চালানোর অপরাধ স্বীকার করে
ক্ষমা চেয়েছে জার্মানি। দক্ষিণ আফ্রিকাও রাষ্ট্র হিসেবে ক্ষমা চেয়েছে
নাইজেরিয়ায় অত্যাচারের জন্য। জাপান ক্ষমা চেয়েছে কোরিয়া ও মাঞ্চুরিয়ার
কাছে। এমনকি ভারতের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের জন্য ব্রিটিশরা ক্ষমা
চেয়েছে।
পত্রিকান্তরে প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় দুই
দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয় পর্যায়ের বৈঠকে ১৯৭১ সালে
পাকিস্তানের তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর সংঘটিত গণহত্যার জন্য দেশটিকে
আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের
পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান
ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়গুলো উত্থাপন করেছি-আটকে পড়া পাকিস্তানিদের
প্রত্যাবাসন, অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান, ১৯৭০
সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাঠানো বিদেশি সাহায্যের অর্থ
হস্তান্তর এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত
গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া।’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমরা
বলেছি, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা
পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুততম
সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির মাধ্যমে একটি মজবুত, কল্যাণমুখী ও সামনের দিকে
তাকানোর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করি এবং এই
লক্ষ্যে আমরা একযোগে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করি।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ পরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান
উপদেষ্টা পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা
অনুসন্ধানে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে কিছু
প্রতিবন্ধকতার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এসব কাটিয়ে ওঠার উপায় আমাদের
খুঁজে বের করতে হবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
অতীতের বিষয়গুলো স্বীকার
করে আমনা বালুচ বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে
সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে। তিনি আরো বলেন, “আমাদের
নিজেদের আয়ত্তে বিশাল আন্ত বাজার সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমাদের এটি ব্যবহার
করা উচিত। আমরা প্রতিবার ‘বাস মিস’ করতে পারি না।”
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে
বার্তা দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়। আমরা মনে করি,
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক যৌক্তিক অবস্থান ও দাবিগুলোর প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়ে
পাকিস্তানও দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে পদক্ষেপ নেবে।