বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারের। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ মানদণ্ডে যা ২১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিজার্ভ বাড়ায় আমদানি ব্যয় পরিশোধে চাপ কমেছে এবং ব্যাংকগুলো সহজে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রিজার্ভ বৃদ্ধির এই সাফল্যের পেছনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনায় কৌশলগত সিদ্ধান্তের পাশাপাশি কাজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের কঠোর অবস্থান ও বাস্তবমুখী নীতি। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা ও আমদানি ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আসায় ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে।
তাছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৫ থেকে ১২৮ টাকা হয়ে যাওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে ডলারের বিনিময় হার ১২৩ টাকায় স্থিতিশীল, এর ফলে আমদানি স্বাভাবিক ও মূল্যস্ফীতিও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রিজার্ভের উত্থান-পতন
অবশ্য এবারই প্রথম নয়, চলতি বছরেই এ নিয়ে দুবার ২৬ বিলিয়নের মাইলফলক ছুঁয়েছে রিজার্ভ। প্রথমবার ছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে। এর আগে ২০২১ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল সর্বোচ্চ, ৪৮ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার। এরপরে ধারাবাহিকভাবে পতন হয়ে ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ১৯ বিলিয়নে নেমে আসে। বিপিএম-৬ অনুযায়ী তা ছিল মাত্র ১৮ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূলত বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ও অভ্যন্তরীণ দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণেই রিজার্ভের এমন পতন ঘটে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সাল থেকে প্রতি মাসে গড়ে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার করে রিজার্ভ কমেছে।
যদিও ২০২৪ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অন্তত দুবার ২৬ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। প্রথমবার ২৭ জুন আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির ঋণ পাওয়ার পর রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। আর দ্বিতীয়বার ২৯ ডিসেম্বর, তখন রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার (বিপিএম ৬ অনুযায়ী ২১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন)।
২০২৪ সালের ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সপ্তাহে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার, আর আইএমএফের মানদণ্ড অনুযায়ী ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ৫ আগস্ট এক নাটকীয় রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন ঘটে এবং ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। সরকার পরিবর্তনের দিন, অর্থাৎ ৮ আগস্ট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং বিপিএম ৬ অনুযায়ী ২০ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।
চলতি বছর (২০২৫) সবশেষ রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় ২৬ ফেব্রুয়ারি। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, এই প্রবৃদ্ধির মূলে ছিল প্রবাসীদের আয়। ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স আসে ২ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। মার্চে রেমিট্যান্স রেকর্ড ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়ে রিজার্ভে বড় ভূমিকা রাখে। এছাড়া আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও হুন্ডি প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
অন্যদিকে সরকার পরিবর্তনের পর ডলারের বিনিময় হার কিছুটা ওঠানামা করলেও শেষে ১২৩ টাকায় স্থিতিশীল হয়।
গভর্নর পরিবর্তনে বদলে যায় দৃশ্যপট
পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পরিবর্তনের পর। আবদুর রউফ তালুকদারের স্থানে দায়িত্ব নেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি দায়িত্ব নিয়েই কঠোর অবস্থান নেন রিজার্ভ পুনরুদ্ধারে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রবাসীদের অনাগ্রহ, হুন্ডির দাপট ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপের মধ্যে গভীর সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার পালিয়ে যান এবং পদত্যাগ করেন। ঠিক তখনই দায়িত্ব নেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর।
দায়িত্ব নিয়েই তিনি বাস্তবমুখী নীতির প্রয়োগ শুরু করেন। এর প্রভাবও দেখা যায় দ্রুত—২০২৪ সালের ৮ আগস্টের পর থেকে রিজার্ভে ধীরে ধীরে উন্নতি শুরু হয়। ২০২৪ সালের আগস্টে প্রবাসী আয় দাঁড়ায় ২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি। এর ফলেই সাময়িক ঊর্ধ্বগতি দেখা যায় রিজার্ভে।
২০২৫ সালের মার্চ মাসের শেষে মোট রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৫
দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ সরকার পরিবর্তনের সাত মাস ২৩ দিন পর বাংলাদেশ ফিরে পায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ। এরপর এপ্রিলের মাঝামাঝি তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার, যা আবারও এই সীমা অতিক্রমের মাইলফলক।
ব্যবসায়ীদের জন্য স্বস্তির বার্তা
রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক খাতে ডলার সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ডলার সংকট অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। এতে আমদানিকারকদের জন্য এলসি খোলা আগের চেয়ে সহজ হয়েছে এবং আমদানিও বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৭ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। এ সময়ে ৪৫ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে, যা ৪ দশমিক ০৭ শতাংশ বেশি।
ব্যাংকগুলো এখন আমদানিতে আগ্রহী, কারণ রফতানি ও রেমিট্যান্স বাড়ার ফলে ডলার সরবরাহ তুলনামূলক বেশি। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই আমদানি এলসি খোলা হয়েছে ৬ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।
বাইরের অর্থ পরিশোধও বেড়েছে
২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়নে পৌঁছালেও এ সময়ে বৈদেশিক ঋণ ও সুদের অর্থ পরিশোধ কমেনি, বরং বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদেশি ঋণ পরিশোধ হয়েছে ২ দশমিক ৬৩৬ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে মূল ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ১ দশমিক ৯৬২ বিলিয়ন ডলার (৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি) এবং সুদ বাবদ ৯৪৪ মিলিয়ন ডলার (১৭ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি)। একই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ ও অনুদান মিলিয়ে ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ কম। অর্থাৎ, রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে ঋণ পরিশোধ কমার ভূমিকা নেই, বরং চাপ আরও বেড়েছে। তবে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশ সরকার বেশ কয়েকটি চীনা এবং বহুপাক্ষিক ঋণের কিস্তি পুনঃসমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়, যার ফলে তাৎক্ষণিক বৈদেশিক অর্থপ্রবাহের চাপ কমে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, সুদ ও ঋণ পরিশোধের একটি অংশ দ্বিতীয় প্রান্তিকে সরিয়ে আনার ফলে রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আহসান এইচ মনসুরের কঠোর অবস্থান ও প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ
রিজার্ভ ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার পেছনে মূল চালিকাশক্তি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত হস্তক্ষেপ ও প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবাসী আয় বাড়ানো ও আমদানি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া কার্যকর নীতিগুলোই রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব নিয়েই রিজার্ভ পুনরুদ্ধারে কঠোর অবস্থান নেন। হুন্ডি দমনে মোবাইল কোর্টের মতো ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রবাসী আয় দেশে আনতে বাড়ানো হয় প্রণোদনা। বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমদানি ব্যয়ের অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয় নজরদারিমূলক ব্যবস্থা। পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় আস্থা ফেরাতে চালু করা হয় নিরীক্ষা কার্যক্রম।
এসব পদক্ষেপের ফলাফলও দ্রুতই পরিলক্ষিত হয়। ২০২৪ সালের আগস্টে প্রবাসী আয় দাঁড়ায় ২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি। এর ফলেই সাময়িক ঊর্ধ্বগতি দেখা যায় রিজার্ভে। শুধু তাই নয়, তিনি দায়িত্ব নিয়ে ডলার বিক্রি বন্ধ করেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা নেন এবং এলসি নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি ও পুঁজি পণ্যের আমদানি কমিয়ে রিজার্ভ বাঁচান। তিনি ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন, কয়েকটি ব্যাংকের দুর্বল পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেন এবং রেমিট্যান্সে আস্থা ফেরাতে হুন্ডিবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করেন।
ফলে রেমিট্যান্স, রফতানি আয় এবং বৈদেশিক সহায়তা বাড়তে থাকে। শুধু তিন মাসেই রিজার্ভে হাত না দিয়ে ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয়। সব মিলিয়ে মাত্র সাড়ে ৭ মাসে রিজার্ভ ঘুরে দাঁড়ায়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রফতানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এতে ডলারের বাজারে চাপ কমেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সুশৃঙ্খল ডলার ব্যবস্থাপনাও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে। রিজার্ভ রক্ষা ও মুদ্রাবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে কর্মকর্তারাও সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।’
অন্যতম উদ্যোগ আমদানি নিয়ন্ত্রণ
রিজার্ভ বৃদ্ধির অন্যতম আরেকটি কারণ ছিল আমদানি ব্যয়ের ধারাবাহিকতা হ্রাস। ২০২৩ সাল থেকে বিলাসপণ্য আমদানি ও এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। নতুন সরকার এসে এলসিতে নজরদারি বাড়ায় এবং জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় পুনর্বিন্যাস করে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা কমে এবং রিজার্ভ চাপমুক্ত থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ছিল ৮২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার, যা পরের দুই অর্থবছরে কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬৮ দশমিক ৬০ ও ৬৩ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারে। মূল কারণ ছিল আমদানি নিয়ন্ত্রণনীতি। যেমন- এলসিতে কঠোরতা ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যে নিরুৎসাহ।
তবে রিজার্ভ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। রফতানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকে ডলারের সরবরাহ বাড়ে। ফলে আমদানিতে গতি ফেরে।
রেমিট্যান্সে নীতিগত পরিবর্তন ও আস্থা বৃদ্ধিতে মিলেছে ফল
বিশ্লেষকদের মতে, রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের পেছনে কাজ করেছে কয়েকটি সমন্বিত পদক্ষেপ। এর মধ্যে রেমিট্যান্সে নীতিগত পরিবর্তন ও আস্থা বৃদ্ধি অন্যতম। ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসেই দেশে এসেছে ৬ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স, যা আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। এটির পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে প্রণোদনার হার ২ শতাংশ ৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে উন্নীত করা। কিছু দিন কোনও কোনও ব্যাংক ৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্রাহকদের প্রণোদনা দিয়েছে। এছাড়া বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ এবং হুন্ডিবিরোধী কঠোর নজরদারি, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণে কূটনৈতিক উদ্যোগ বেশ কাজে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য প্রবাসী আয়ই এই মুহূর্তে সবচেয়ে কার্যকর রফতানি উপার্জনের উৎস। এই রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও বলছেন, প্রবাসী আয় ছিল রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের প্রধান চালিকাশক্তি। ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স আসে ২ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। মার্চে এই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার, যা এক মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত পরিবর্তন ও হুন্ডি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপের ফলে ২০২৪ সালে রেমিট্যান্স প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যা আগের বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের বছর এই অঙ্ক ছিল ১৬ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর থেকে রেমিট্যান্সে বড় উল্লম্ফন দেখা যায়। মার্চ ২০২৫-এ একক মাসে রেমিট্যান্স ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে নতুন রেকর্ড গড়ে। এই ধারাবাহিকতায় প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স ২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে থেকে অর্থনীতিকে শক্তিশালী ভিত্তি দেয়।