বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫
১১ বৈশাখ ১৪৩২
শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী মনোভাব তৈরিতে সৃজনশীল কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে
অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন
প্রকাশ: সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ১:৩৯ এএম আপডেট: ২১.০৪.২০২৫ ২:১৩ এএম |


 শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী মনোভাব তৈরিতে সৃজনশীল কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে জ্ঞান অর্জন কখনো নির্দিষ্ট সীমানার গণ্ডিবদ্ধ নয়, এটি নির্দিষ্ট চিন্তার গন্ডিভুক্ত মানুষের চিন্তাশক্তি সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হয়, যেখানে শিক্ষার একেকটি স্তরে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে পাঠদানের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করা যায়। ফলে সেই জ্ঞান নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে আবদ্ধ থাকায় বিষয় ভিত্তিক জ্ঞানের বাইরে চিন্তা ভাবনার পরিসর বাড়ার সম্ভাবনা কম।
বৃহৎ পরিসরে তা প্রসারিত ও প্রতিফলিত হতে পারে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে জ্ঞানার্জন করার প্রশ্নে এখনো অনেকটা পিছিয়ে। এভাবে পাঠ্যবইয়ের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বই পাঠের আগ্রহ না থাকায় এটি সৃজনশীল ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা বই মানুষের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে। বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তাভাবনার উৎপত্তিস্থল হল বই।
ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন বা আত্ম-উন্নয়নমূলক বই পড়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নতুনভাবে চিন্তা করতে শেখে। বইয়ের মাধ্যমে একজন মানুষ নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ সম্পর্কে জানতে পারে। ধর্মীয় বই, গল্প-উপন্যাস, অনুপ্রেরণামূলক বই একজন মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করে।
বই একটি জ্ঞানের আলো, যা একজন মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। একটি ভালো বই একজন ব্যক্তির চিন্তাভাবনা ও জীবনধারাকে পরিবর্তন করতে পারে।
বর্তমানে ভালো ফলাফলের আশায় শিক্ষার্থীরা কতটা পাঠ্যবই কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে, তা দেশে কোচিং সেন্টার গুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এতে করে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে গবেষণা ও উদ্ভাবনী ভাবনা থেকে।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক 'টাইমস হায়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং-২০২৫-এর তালিকার সেরা এক হাজারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেস্থান পায়নি বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান তালিকার ৮০০-এর মধ্যে। এই র‌্যাংকিং থেকে বাংলদেশে গবেষণার গুণগতমান ও পরিবেশ সম্পর্কেও সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
গবেষণায় মৌলিক বিষয় ও প্রকাশনা পর্যাপ্ত না থাকায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। এই অবস্থার উত্তরণ জরুরি। জ্ঞান অর্জন যাতে কেবল পাঠ্য বইভিত্তিক হয়ে না পড়ে, সেজন্য জানার আকাক্সক্ষা, উপলব্ধি, অভিজ্ঞতা, যুক্তি ও তাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জ্ঞানের প্রসার ঘটানোর বিষয়ে জোর দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের নতুন বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করাতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও সঠিক দিক নির্দেশনার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করে তুলতে পারেন শিক্ষকরা। সেই সঙ্গে বাবা-মা সন্তানের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, তাই তারা শিক্ষার্থীর মেধা ও সৃজনশীল প্রতিভা অগ্রগতির পরিবেশ তৈরির কাজটি করতে পারেন।
খুব সহজেই প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক ও গবেষণামূলক মনোভাব তৈরি করতে বাবা-মা, তথা পরিবারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। বইমেলা, বিজ্ঞান মেলা, গণিত উৎসব, বির্তক, আবৃত্তি ও সকল বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিযোগিতাতে বাচ্চাদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে তা করা যেতে পারে, যা মেধা বিকাশে অত্যন্ত কার্যকরী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও মুখস্থবিদ্যা থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে শিক্ষার্থীর দক্ষতা বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও অনুপ্রেরণা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্ভাবনী মনোভাব তৈরিতে সাহায্য করবে।
শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই কেন্দ্রিকতা যেন তাদের মেধা বিকাশের পথে অন্তরায় হয়ে না ওঠে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একজন মানুষকে শিশুকাল থেকেই পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত জ্ঞানী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। শিক্ষার্থীদের দরকার পাঠ্যবইয়ের বাইরে নিয়মিত অন্যান্য বই পড়া।
বর্তমান এই বিশ্বে সৃজনশীলতার কোনো বিকল্প নেই। জ্ঞান চর্চার পাঠ্যপুস্তক থেকে হলেও শুধুই বইয়ের সীমিত জ্ঞানই যথেষ্ট নয়। কেননা জানার ক্রমাগত আগ্রহই নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটায়। পাঠ্য পুস্তকের সীমিত জ্ঞানে সীমাবদ্ধ থাকলে কখনোই নতুন কিছুর আবিষ্কার হতো না। নতুনত্ব, আরো উন্নত, আরো সহজ-সবকিছু করার ক্রমাগত চেষ্টাই আজ পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।
তাই জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বাস্তবিকভাবে তা মূল্যায়ন করা আবশ্যক। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চাকরির ভবিষ্যৎ ২০২৩ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে চাকরির বাজারে সর্বোচ্চ চাহিদার শীর্ষে যে দক্ষতাটি অবস্থান করবে তা হলো সৃজনশীলতা।
অন্যদিকে বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা অনেকাংশেই পাঠ্যপুস্তক কেন্দ্রিক, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করে, পাঠ্যক্রমের সীমিত জ্ঞানকেই বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়ার যে প্রবণতা, আর এর ঊর্ধ্বে চিন্তা না করতে দেওয়ার পারিপার্শ্বিক চাপ শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশকে ক্রমাগত বাধাগ্রস্ত করে। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার অবসান ঘটানোর জন্য শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের বাইরে মুক্ত চিন্তার সুযোগ দিতে হবে। সৃজনশীল কার্যক্রম ভিত্তিক পদ্ধতি ও প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে প্রত্যেকেই নতুন আবিষ্কার, নতুন চিন্তার, নতুন সম্ভাবনার অংশ হতে পারে।
বাংলাদেশে স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে যে কারনে ক্রমান্বয়ে তাদের  মধ্যে হতাশা কাজ করছে, হতাশা থেকে অনেক শিক্ষার্থী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে পড়ালেখার পাশাপাশি সৃজনশীল কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। 
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজ, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা।












সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লায় রেল লাইনের উপর ৩ যুবকের খণ্ডিত লাশ
ঘুম, নেশা নাকি ভাগ্য- কোনটি কেড়ে নিয়েছে এই তিন যুবকের প্রাণ?
সিলিন্ডারবাহী পিকআপ উল্টে পুকুরে গোসলরত এক কিশোরের মৃত্যু
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর খন্দকার দেলোয়ারের পাশে ইনসাফ হাউজিং এন্ড ডেভেলাপার্স
কুমিল্লা শহরের পূর্বাংশে শুক্রবার ও পশ্চিমাংশে সোমবার দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় রেল লাইনের উপর ৩ যুবকের খণ্ডিত লাশ
ঘুম, নেশা নাকি ভাগ্য- কোনটি কেড়ে নিয়েছে এই তিন যুবকের প্রাণ?
কুমিল্লা শহরের পূর্বাংশে শুক্রবার ও পশ্চিমাংশে সোমবার দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা
বুড়িচংয়ে বিএনপি’র কমিটি গঠন নিয়ে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ
মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২