প্রকাশ: বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫, ৫:৪৬ পিএম আপডেট: ২৩.০৪.২০২৫ ৬:০৮ পিএম |

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল ইউনিয়নের মাধবপুর এলাকায় রেললাইনের উপর থেকে উদ্ধার হওয়া নিহত তিন যুবকের মধ্যে একজনের পরিচয় মিলেছে। নিহত সাইফুল ইসলাম তার বাবা মায়ের সাথে কুমিল্লা রেল স্টেশনেই থাকতেন। সাইফুল রংমিস্ত্রির কাজ করলেও সে মাদকাসক্ত হয়ে পরে টোকাই হয়ে যায় বলে জানিয়েছে কুমিল্লা রেল স্টেশনের কয়েকজন।
সাইফুলের বাবা মোখলেছুর রহমান ও মা আসমা বেগম দুই জনই কুমিল্লা রেলস্টেশনে একটি অস্থায়ী জায়গায় বসবাস করে। তাদের নির্ধারিত কোন পেশা নেই।
কুমিল্লা রেলস্টেশন পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক সোহেল মোল্লা জানান, রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটায় সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ওই তিন যুবকের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছি। সাইফুল ছাড়াও লোকোমুখে আমরা অপর একজনের নাম তুহিন বলে জেনেছি। তবে বাকি দুইজনের কোন ঠিকানা পাওয়া যায়নি। মরদেহ গুলো ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

মরদেহ কুমিল্লা রেলস্টেশনে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সাইফুল এর বাবা ও মা তার ছেলেকে দাফনের জন্য সহযোগিতার টাকা তুলছেন। সাইফুলের মা আসমা বেগম জানান, ছেলেটাকে যে দাফন করবো সেই খরচের টাকাও নেই। তার বাবাও বাউন্ডুলে। কোনরকম কাজকর্ম করে আমি সংসার চালাই। ছেলেটা কথা না শুনে রংমিস্ত্রির কাজ ছেড়ে দিয়েছে। গতকাল দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়েছে তারপর শুনি রেললাইনে তার মরদেহ পড়ে আছে।
সাইফুলের বাবা মোখলেছুর রহমান বলেন, ময়নাতদন্তের পরে মরদেহ দিলে আমরা দেবিদ্বার নিয়ে ছেলেকে দাফন করবো।
এদিকে ঘটনাস্থল কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাক্সিমুলের মাধবপুর রেল লাইনের উপরে গিয়ে দেখা গেছে, রেলের স্লিপার ও লাইনের উপর ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। বেশ কয়েক টুকরা টি শার্ট ও দুই জোড়া জুতা পড়ে আছে সেখানে। ঢাকা চট্টগ্রাম রেল পথের বুড়িচংয়ের মাধবপুর এলাকায় ১৬২ নম্বর পিলারের কাছ থেকে সাইফুল ইসলাম সহ তিন যুবকের মরদেহ গুলো উদ্ধার করা হয়।
মাধবপুর গ্রামের বাসিন্দা ইজিবাইক চালক শাহেদ মিয়া কুমিল্লার কাগজকে বলেন, আমি ভোর ছয়টা পাঁচ মিনিটে রেল লাইনের পাশে হাঁটতে আসি। এ সময়ে এসে দেখি একজনের মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে আর দুইজনের পা বিচ্ছিন্ন। যাদের পা বিচ্ছিন্ন হয়েছে তাদের মধ্যে একজন তখনও জীবিত ছিল সে আমার কাছে পানি চায়। কিন্তু গ্রাম দূরে হওয়ায় সে সময় পানি আনার কোন সুযোগ ছিল না। এর মধ্যেই সে মারা যায়। ধারণা করছি ভোর সাড়ে চারটা একে ছয়টার মধ্যে কোন ট্রেন তাদের উপর দিয়ে গিয়েছে।

ফকির বাজার জঙ্গলবাড়ি গাড়ী চালক মেহেদী হাসান কুমিল্লার কাগজকে বলেন, যে তিনজন ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুবরণ করেছে তারা আশেপাশের গ্রামের কেউ নয়। অনেকেই এসেছেন কিন্তু কেউই তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। সকাল সাড়ে দশটায় পুলিশ এসে মরদেহ গুলো নিয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় সংবাদকর্মী আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয় কুমিল্লার কাগজকে বলেন, যেখানে তিনজনের মরদেহ পাওয়া গিয়েছে সেখানে একটি পরিত্যক্ত ডাকবাংলো আছে। এখানে অনেকেই মাদক সেবনের জন্য এসে বলে আমরা বিভিন্ন সময়ে খবর পাই। ধারণা করছি তারা এখানে হয়তো ঘুরতে এসেছিল কিংবা মাদক সেপানোর জন্য এসেছিল। এসে রেললাইনে ঘুমিয়ে পড়লে তাদের উপর দিয়ে ট্রেন চলে যায়।
বুড়িচং থানার ওসি আজিজুল হক কুমিল্লার কাগজকে জানান, মাধবপুর এলাকায় রেল লাইনে ৩ যুবকের কাটা মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। ধারণা করা হচ্ছে- ট্রেনের নিচে পড়ে নিহত হন। এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে লাকসাম থেকে জিআরপি পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌছায়।