নিজস্ব
প্রতিবেদক : রাজধানীর বনানীতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে হত্যার ঘটনায় নাম আসা দুই তরুণীকে খুঁজে বের করতে
বলেছে আদালত। এ মামলায় গ্রেপ্তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার
যুগ্ম সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজীর রিমান্ড শুনানিতে বুধবার এ আদেশ দেন ঢাকার
অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্যাহ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা
বনানী থানার পরিদর্শক এ এস এম মাঈন উদ্দিন এদিন হৃদয়কে আদালতে হাজির করে ১০
দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চান।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা
মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।
তিনি বলেন, “জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলায় এর আগে এজাহারনামীয় তিনজন
আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ আসামি এজাহারনামীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিডিও
ফুটেজ ও সিসি ক্যামেরা দেখেই এ মামলার সঙ্গে আসামির সংশ্লিষ্টতার কথা জানা
যায়। পরে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ নৃশংস হত্যার পেছনে রাজনৈতিক কারণ
থাকতে পারে বা অন্য কোনো কারণ আছে কি না সেটা জানার জন্য আসামিকে রিমান্ডে
নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।”
আসামিপক্ষের আইনজীবী তাসলিমা মিনু
রিমান্ডের বিরোধিতা করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, “হৃদয় ফার্মাসি
ডিপার্টমেন্টের, এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অন্য ডিপার্টমেন্টের। এ হত্যার
সঙ্গে আমার মক্কেলের কোনো সম্পর্ক নেই। পারভেজ তার ডিপার্টমেন্টের কেউ না।
মেয়েদেরও তিনি চেনেন না।'
পরে বিচারক মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাস করেন, “মেয়েরা কোথায়? তাদের ধরেননি কেন?”
তদন্ত
কর্মকর্তা বলেন, “এ মামলায় মেয়েদের সন্দেহ করার মত যৌক্তিক কারণ খুঁজে
পাইনি। সিসি ক্যামেরায় তাদের দেখা যায়নি। আবু জর পিয়াস নামে একটা ছেলে
সবকিছু অর্গানাইজ করেছে। আমরা তাকে খুঁজছি।”
এরপর বিচারক বলেন, “মামলার সঙ্গে মেয়েদের সংশ্লিষ্টতা আছে। তারা স্পটে ছিল, মেয়েগুলোর ভূমিকা ছিল। তাদের খুঁজে বের করুন।”
এরপর
আসামি পক্ষের আইনজীবী বলেন, “এ মামলার আসামি কে কে–সেটা এজাহারে স্পষ্ট
বলা আছে। এক, দুই ও তিন নম্বর আসামি কে কী ভূমিকা রেখেছে, সেটাও দেওয়া
হয়েছে। তাদের ধরা হয়েছে। রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ
আলামত সিসি ক্যামেরায় তার (হৃদয় মিয়াজীর) কোনো ভূমিকার কথা বলা নাই।
রাজনৈতিকভাবে তাকে এ মামলায় জড়িত করা হয়েছে। তাকে রিমান্ড না দিয়ে জেল
গেইটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিন।”
শুনানি শেষে আদালত ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে হৃদয় মিয়াজীকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
গত
১৯ এপ্রিল বিকালে রাজধানীর বনানীতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের
ক্যাম্পাসে কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে বিবাদের জেরে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
বিভাগের ২২৩ ব্যাচের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের
ভাষ্য অনুযায়ী, ক্যাম্পাসের পাশে একটি দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে সিঙ্গারা
খাচ্ছিলেন পারভেজ। তাদের পাশে সদ্য ভর্তি হওয়া ইংরেজি ও ইন্টারন্যাশনাল
হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের বন্ধু ইউনিভার্সিটি
অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী ছিলেন। এক পর্যায়ে দুই ছাত্রী অভিযোগ করেন পারভেজ
তাদের উত্যক্ত করেছেন। তারা বিষয়টি প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির প্রক্ট্ররকে
জানান।
এরপর প্রক্টর পারভেজকে ডেকে নেন। প্রক্টর অফিসে পারভেজ দাবি
করেন, তিনি বন্ধুদের সঙ্গে নিজেদের আলাপের বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছিলেন,
কাউকে উত্ত্যক্ত করেননি। এক পর্যায়ে ওই দুই ছাত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে বলা
হলে পারভেজ ক্ষমাও চান।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন,
সেখানেই ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা পারভেজকে হুমকি দেন। প্রক্টরের অফিস
থেকে বেরিয়ে আসার পর কিছু বহিরাগত এসে আক্রমণ করেন। একপর্যায়ে ধারালো কিছু
দিয়ে পারভেজের বুকে আঘাত করে তারা পালিয়ে যান।
পরে রক্তাক্ত পারভেজকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক আগেই মৃত্যু হয়ে বলে জানান।
এ
ঘটনায় নিহতের মামাত ভাই হুমায়ুন কবীরের করা মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের
দুই নেতাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া নাম না দিয়ে আরও ২৫-৩০ জনকে
আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারের আসামিরা হলেন- মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবু
জর গিফারী পিয়াস (২০), মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয়
মিয়াজী (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)।
গত ২১ এপ্রিল রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এর
আগের দিন আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল
আমিন সানি (১৯) নামে তিন জনকে ঢাকার মহাখালী ওয়ারলেস গেইট এলাকা থেকে
গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এজাহারে তাদের নাম না থাকলেও সিসিটিভি ভিডিওতে
তাদের ঘটনাস্থলে দেখা যাওয়ার কথা বলা হয় পুলিশের তরফ থেকে। পরে তাদের
আদালতে হাজির করে রিমান্ডেও নেয় পুলিশ।