হজরত
সুলাইমান (আ.) ছিলেন আল্লাহ তাআলার সম্মানিত একজন নবি। তিনি আল্লাহর নবি
দাউদের (আ.) সন্তান ও ইবরাহিম ও ইসহাকের (আ.) বংশধর ছিলেন। আল্লাহ তাআলা
তাকে একইসাথে নবুয়্যত ও বাদশাহি দান করেছিলেন। তিনি মানুষ ছাড়াও জিন ও অন্য
পশুপাখিদের ভাষা বুঝতে পারতেন এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারতেন। তার
কর্মচারী ও সেনাবাহিনীতে জিন ও পাখিরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পবিত্র কোরআনে
আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি দাউদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দান করেছিলাম। তারা
বলেছিলেন, আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আমাদেরকে তার অনেক মুমিন বান্দার ওপর
শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সুলাইমান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। বলেছিলেন,
হে লোক সকল, আমাকে উড়ন্ত পক্ষীকূলের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং আমাকে সব
কিছু দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব। সুলাইমানের সামনে তার
সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হলো। জিন-মানুষ ও পক্ষীকুলকে, অতঃপর তাদেরকে
বিভিন্ন ব্যূহে বিভক্ত করা হল।
যখন তারা পিঁপড়া অধ্যূষিত উপত্যকায়
পৌঁছল, তখন এক পিঁপড়া বলল, হে পিঁপড়ার দল, তোমরা তোমাদের ঘরে প্রবেশ কর।
অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে। তার
কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমাকে
সামর্থ্য দিন দাও যেন আমি আপনার এই নেয়ামতের শোকর আদায় করতে পারি যা আপনি
আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছেন এবং যেন আমি আপনার পছন্দনীয় সৎকর্ম
করতে পারি এবং আমাকে আপনার অনুগ্রহে আপনার সৎকর্মপরায়ন বান্দাদের
অন্তর্ভুক্ত করুন। (সুরা নামল: ১৫-১৯)
হজরত সুলাইমান (আ.) ছিলেন অসাধারণ
বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার অধিকারী। অনেক সময় বিচক্ষণতায় তিনি বাবাকেও ছাড়িয়ে
যেতেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা এ রকম একটি বিচারকাজের দিকে ইশারা
করেছেন যেটাতে তার রায় ছিল তার বাবার চেয়ে বেশি প্রজ্ঞাপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা
বলেন, আর স্মরণ কর দাউদ ও সুলাইমানের কথা, যখন তারা শস্যক্ষেত সম্পর্কে
বিচার করছিল। যাতে রাতের বেলায় কোন কওমের মেষ ঢুকে পড়েছিল। আর আমি তাদের
বিচার কাজ দেখছিলাম। অতঃপর আমি এ বিষয়ের ফয়সালা সুলাইমানকে বুঝিয়ে
দিয়েছিলাম। আর আমি তাদের প্রত্যেককেই দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। (সুরা
আম্বিয়া: ৭৮, ৭৯)
মুফাসসিররা বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা যে ঘটনার দিকে
ইশারা করেছেন সেটি হলো, একবার হজরত দাউদের শাসনাধীন এলাকায় এক ব্যক্তির
ছাগল অন্য ব্যক্তির ক্ষেতে রাতে ঢুকে ফসল নষ্ট করে ফেলে। ছাগল ও ক্ষেতের
মালিক দাউদের (আ.) কাছে ফয়সালার জন্য এলে তিনি ফায়সালা করলেন যে, ক্ষেতের
মালিক ছাগলগুলো ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিয়ে নিক। কিন্তু সুলাইমান (আ.) এই
ফায়সালায় একমত হলেন না। বরং তিনি ফায়সালা করলেন যে, ছাগলগুলো ক্ষেতের
মালিককে কিছু দিনের জন্য দেওয়া হোক, সে সেগুলো দিয়ে উপকৃত হতে থাকবে এবং
তার ক্ষেত ছাগলের মালিকের হাতে তুলে দেওয়া হোক, সে ক্ষেতের সেচ-যত্ন ও
দেখাশুনা করে ক্ষেত ঠিক করুক। যখন ক্ষেত আগের অবস্থায় ফিরে যাবে, তখন ক্ষেত
ক্ষেতের মালিককে ও ছাগলগুলো ছাগলের মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
এ ঘটনায়
হজরত দাউদের ফয়সালা ভুল ছিল না। কিন্তু হজরত সুলাইমানের ফয়সালা ছিল বেশি
প্রজ্ঞাপূর্ণ যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন। (ফতহুল কাদির)
হাদিসে দাউদ (আ.)
ও সুলাইমানের (আ.) এ রকম আরেকটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। আবু হোরায়রা (রা.)
থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, (একবার দাউদের
(আ.) শাসনাধীন অঞ্চলে) দুইজন নারী তাদের দুই শিশু সন্তানকে সাথে নিয়ে বের
হলো। পথে নেকড়ে বাঘ তাদের ওপর আক্রমণ করলো এবং একটি শিশু নিয়ে গেল। এরপর
বেঁচে থাকা শিশুটিকে দুইজন নারীই নিজের সন্তান বলে দাবি করতে লাগলো। এক
পর্যায়ে তারা বিষয়টি নিয়ে হজরত দাউদের (আ.) কাছে উপস্থিত হলো। তিনি তাদের
মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ নারীর পক্ষে রায় দিলেন। তারা যখন চলে যাচ্ছিল, তখন হজরত
সুলাইমান (আ.) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের ব্যাপারে কী ফয়সালা করা হয়েছে? তাকে
জানানো হলো হজরত দাউদ (আ.) কী ফয়সালা করেছেন। তখন হজরত সুলাইমান (আ.)
বললেন, একটি ছুরি নিয়ে এসো, আমি এই শিশুটিকে দুই ভাগ করে তাদের মধ্যে বণ্টন
করে দেই। এ কথা শুনে বয়োজ্যেষ্ঠ নারী নির্বিকার রইলো। কিন্তু কনিষ্ঠ নারী
বললো, আল্লাহ তাআলা আপনার ওপর রহম করুন! এ কাজ করবেন না। আমার অংশ আমি তাকে
দিয়ে দিলাম! তখন সুলাইমান (আ.) বললেন, এই শিশুটি আসলে তোমার সন্তান। তিনি
কনিষ্ঠ নারীর পক্ষে রায় দিয়ে শিশুটি তাকে দিয়ে দিলেন। (সহিহ বুখারি, সুনানে
আবু দাউদ)