যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। এর প্রভাবে চলতি বছর বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমতে পারে। মূল্যস্ফীতিও অস্বাভাবিক থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ এটি কমতে সময় লাগবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউট লুকের (এপ্রিল ২০২৫) সর্বশেষ সংস্করণের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ২ দশমিক ৮ শতাংশে, যা গত বছরের চেয়ে ৫ শতাংশীয় বিন্দু কম। আর এশিয়ার গড় জিডিপি হতে পারে ৪ শতাংশ।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউট লুকের প্রাপ্ত উপাত্ত ধরে দেশভিত্তিক তথ্য হালনাগাদ করেছে আইএমএফ। সেখানে বাংলাদেশের জন্য চলতি অর্থবছরে জিডিপির নতুন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে। তবে আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে প্রবৃদ্ধি বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ হওয়ার কথা বলা হয়েছে সংস্থাটির পূর্বাভাসে। বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় কিছুদিন আগে চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সংশোধন করে ৫ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। আইএমএফ আরও বলছে, চলতি বছরে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ হবে। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত মার্চে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এক বছর ধরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ।
বিশ্বব্যংক আইএমএফের বসন্তকালীন সভা ২১ এপ্রিল শুরু হয়ে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল এ যৌথ সভায় অংশ নিচ্ছে। সভা চলাকালে বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। আইএমএফ মিশন সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরেও এসেছিল।
আইএমএফ বলছে, শুল্কের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বড় ধরনের সংকটে পড়তে যাচ্ছে। চীনের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। পাল্টা পদক্ষেপ চীনও নিয়েছে। এতে আর্থিক বাজারে আরও অস্থিরতা দেখা দেবে। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ বৈশ্বিক বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং গভীর সংকট তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন প্রশাসনের শুল্কনীতির কারণে একটি বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হতে পারে। এমন শঙ্কায় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে মার্কিন মুদ্রা ডলার। ফলে ডলারের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। বাড়তি শুল্ক আরোপের অর্থ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে তার দাম বেড়ে যাবে।
আমদানিকারকরা চেষ্টা করবে, যে দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা হচ্ছে, বাড়তি শুল্কের চাপ তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত বাড়তি শুল্কের চাপ ভোক্তাদের কাঁধে গিয়ে পড়বে। বাজারে কোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট পণ্যের চাহিদা কমে যাবে। এতে রপ্তানিকারক দেশের রপ্তানির পরিমাণ কমে যাবে। এক কথায় ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরূপ প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে। এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আইএমএফের পূর্বাভাসকে আমলে নিয়ে সরকারকে অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।