গ্রীষ্ম
এলেই হৃদয়ের দরজায় এসে কড়া নাড়ে কৃষ্ণচূড়া। কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিতে অদ্ভুত এক
সৌন্দর্যের নাম। গ্রীষ্মের প্রখর তাপে যখন জীবনপাত হচ্ছে, তখনই প্রকৃতিতে
চলছে অদ্ভুত এক সৌন্দর্যের প্রপাত। বাংলাদেশে এপ্রিল-জুন মাস পর্যন্ত
কৃষ্ণচূড়া গাছে চোখ ধাঁধানো লাল টকটকে উজ্জ্বল কৃষ্ণচূড়া ফুল দেখা যায়।
সৈন্দর্য বর্ধনকারী কৃষ্ণচূড়া ফুলের রূপ দেখে মুগ্ধ হয় মানুষ। পথের ধারে
সবুজ পাতার ফাঁকে যখন আগুন রঙের কৃষ্ণচূড়া উঁকি মারে তখন বিস্মিত হন
সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষ। বর্তমানে কুমিল্লার অলিগলি, গ্রামের পথঘাট,
স্কুল-কলেজের মাঠ কিংবা রেললাইনের পাশ সবখানেই আগুন রাঙা ফুলের এক অপরূপ
দ্যুতি ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকৃতি যেন নিজেই রঙ তুলি হাতে এঁকে ফেলেছে লাল-কমলার
ছায়া। নগরীর বেশ কয়কটি স্থানে এ দৃশ্যের দেখা মিলেছে।
শুক্রবার (১৮
এপ্রিল) সকালে কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলা
প্রশাসকের কার্যালয়, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, নগর উদ্যান, ধর্মসাগর পাড়,
প্রেসক্লাব, নগর ভবনের সামনে, পুলিশ লাইন, জেলা পুলিশ সুপারের বাংলো, রাণীর
দিঘির পাড়, নতুন চৌধুরী পাড়া, অশোকতলা খান বাড়ি ও নগরের রাজগঞ্জ রাজবাড়িসহ
বিভিন্ন সড়কের পাশে, অফিস, বাসাবাড়ির আঙ্গিনায় কৃষ্ণচূড়া গাছের ডালে ডালে
ফুটে আছে ফুল। নগরীর বাহিরের ময়নামতি সেনানিবাসের ওয়ার সিমেট্রির (যুদ্ধ
সমাধিক্ষেত্র) ভেতরের অন্তত ৯টি গাছে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া ফুল। এছাড়াও
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কোটবাড়ি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি,
বিশ্ববিদ্যালয় ও ভিক্টোরিয়া কলেজের ক্যাম্পাসে দেখা মিলেছে কৃষ্ণচূড়ার।
নগরীর
ধর্মসাগর পাড়ে ঘুরতে আসা নবদম্পতি শাহাদাত ও তিন্নি রহমান বলেন, ছুটির
দিনে ধর্মসাগর পাড়ে ঘুরতে এসেছি। এসে প্রাণ জুড়িয়ে গেল। চারদিকে শুধু লাল
আর লাল। কৃষ্ণচূড়ার রঙে যেন নিজেকে রাঙিয়ে তুলি। সারা বছর তো গাছে এ ফুল
দেখা যায় না। তাই গ্রীষ্মের এই সময়ে গাছে গাছে লাল কৃষ্ণচূড়া হঠাৎ দেখলে
মনে হয় গাছের ডগায় ডগায় আগুন লেগেছে।
বৃক্ষপ্রেমীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া
বা গুলমোহর একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া।
এই গাছ চমৎকার পত্র-পল্লব এবং আগুন লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলের জন্য প্রসিদ্ধ।
চৈত্র-বৈশাখ মাসে গাছগুলোতে কৃষ্ণচূড়ার ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। গাছের সবুজ
পাতার ফাঁকে উঁকি দেওয়া লাল-কমলা ফুলগুলো যেন আগুনের মতো জ্বলজ্বল করে।
শহরবাসীর কাছে এটি শুধু একটি ফুল নয়, বরং গ্রীষ্মকালের এক অনুভব, এক রকম
ভালো লাগার নাম।
কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রির কর্মচারী মো.আবুল
বাসার কালের কন্ঠকে বলেন, গ্রীষ্ম বর্ষার এ সময়ে কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার
সিমেট্রির ৯টি গাছে কৃষ্ণচূড়ার ফুলফুটে। এখানে দুপুর ২টার থেকে প্রচুর
দর্শনার্থী আসেন। তারা ছবি তুলেন। কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো ওয়ার সিমেট্রি র
সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।
ঢাকা থেকে ওয়ার সিমেট্রিতে ঘুরতে আসা শ্যামল রায়
বলেন, ওয়ার সিমেট্রিতে এস মন ভরে গেল। চারদিকে কৃষ্ণচূরার গাছ। মনে হচ্ছে
গাছে গাছে আগুন লেগেছে। এখানে যারাই ঘুরতে আসবে সবার মন জুড়াবে।
বাংলাদেশ
পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মোসলেহ উদ্দিন
আহমেদ বলেন, প্রতিটা গ্রীষ্মে আমি কৃষ্ণচূড়ার অপেক্ষায় থাকি। যখন রাস্তার
মোড়ে, পার্কে বা স্কুলের আঙিনায় যখন এই গাছটা মন ভরে ওঠে। কৃষ্ণচূড়া শুধু
রঙ নয়, এ এক আবেগ। আমি প্রায়ই এ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকি নিঃশব্দে। যেন সময়
থেমে যায় কিছুক্ষণের জন্য। পাখিরা ডাকছে, পাপড়ি ঝরছে এ এক অনির্বচনীয়
সৌন্দর্য। এই গাছটা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যত কষ্টই হোক, প্রকৃতি ঠিক
সময়মতো তার রঙ নিয়ে ফিরে আসে। আমরা শুধু অপেক্ষা করি।