আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। একদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্রুত সময়ে নির্বাচনের তাগিদ, অন্যদিকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা মানতে রাজি নয় দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ কিছু দল। দলটির দাবি, ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হোক জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে তারা নানামুখী চাপেও রেখেছে। এদিকে নির্বাচন নিয়ে সরকারের সুস্পষ্ট ঘোষণা না থাকা এবং ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আগে সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসির তৎপরতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতারা।
একই সঙ্গে তারা পুরোনো ব্যবস্থায় নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কথাও বলেছেন। গত ২০ এপ্রিল ইসির সঙ্গে বৈঠকে সংস্কার নিয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার আগে ইসিকে সব ধরনের নির্বাচনি তৎপরতা বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে এনসিপি। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ইসিকে সরকারি রোডম্যাপের ওপর নির্ভর করতে হবে, এটাই বাস্তবতা। তবে তাদের উচিত নির্বাচন উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া। এ জন্য সরকার ও ইসির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, এ প্রেক্ষাপটে ইসির উচিত হবে চলমান ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে কথা বলা এবং নির্বাচনের জন্য নিজেদের প্রস্তুতি যতটা সম্ভব এগিয়ে নেওয়া। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে আইনি কিছু সংস্কারের সুপারিশ রয়েছে সংস্কার কমিশনের। এ নির্বাচনের আগে সেগুলো বাস্তবায়ন হবে কি না, আর হলেও তা কীভাবে সম্ভব, সেসব বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ দেশের ভেঙে পড়া নির্বাচনব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো আসছে। সেসব পরামর্শ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করে আগের পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে আগামী সংসদ নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য ও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। কাজেই আমি মনে করি, নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেই নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে হবে।
বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসির ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে ইসিকে ঐকমত্য কমিশন থেকে চূড়ান্ত হওয়া সংস্কারের পরামর্শ ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দল, ইসি ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো জরুরি। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাব এসেছে।
সেই সঙ্গে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য জনপ্রত্যাশাও বেড়েছে। কিন্তু সব অংশীজনের মধ্যে সমন্বয় সঠিকভাবে না হওয়ার কারণে বারবার আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। তাই দেশের বৃহত্তর কল্যাণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি এবং নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে নির্বাচনি সময়সীমা নিয়ে জটিলতা অচিরেই কেটে যায়। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।