শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫
১৩ বৈশাখ ১৪৩২
শিশুদের নাট্যচর্চা জরুরি কেন?
ড. আরিফ হায়দার
প্রকাশ: শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১:০৫ এএম |

শিশুদের নাট্যচর্চা জরুরি কেন?
কী বলা যায় আর আর কী বলা যায় না তা ভেবে কোনো লাভ নেই। মানুষ কোনো বাধাকে বাধা ভাবে না, সে তার গতিতেই অগ্রসর হয়। যেমন একটি শিশু তার সরলতা নিয়ে যে কাউকে দেখে হাসে, কাঁদে, কাছে এগিয়ে যায় এমনকি প্রকৃতির পশু-পাখিদেরও আপন ভেবে এগিয়ে যায়।
এমন শিশুদের নিয়ে যখন আমি আপনি কাজ করার কথা ভাবি তখন নিজেকে শিশু মনের কাছে যেতে হয়, যেমনটি আমি ছিলাম ছেলেবেলায়। এমন কিছু শিশু-কিশোরদের থিয়েটারের কাজ নিয়ে পাগলামির অনেক গল্প আছে। স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে যে শিল্প মাধ্যমের বিকাশ সবচেয়ে বেশি উন্নত হয়েছে তা হচ্ছে নাট্যকলা।
সবাই ভেবেছিল শিশু-কিশোরদের নিয়ে যে থিয়েটারের চর্চা হবে তা আগামী দিনে নাট্যচর্চার সোপান হবে। এবং বড়দের নাট্যচর্চার সাথে তৈরি হবে এক মেলবন্ধন। মেলবন্ধন তৈরি হয়নি তা বলা যাবে না, স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে, জেলা এমনকি গ্রামের মধ্যে তৈরি হয়েছে শিশু-কিশোরদের নাট্যসংগঠন।
সুখের বিষয় বাংলাদেশের গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্তি দলগুলোর মধ্যে প্রায় প্রতিটি দলেরই একটি শাখা ছিল শিশু-কিশোরদের নাট্যদল হিসেবে। কিন্তু এখন তা অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। শুধু শিশু-কিশোরদের নাট্যদল নয়, বড়দের নাট্যদল ও বিলুপ্তি হচ্ছে ক্রমশ।
আমরা কি বলতে পারি কেন বিলুপ্তি হচ্ছে? থিয়েটার সঠিকভাবে হচ্ছে না কেন? এক কথায় বলা যায়, ক্ষমতার লড়াই নাট্যাঙ্গনের মধ্যে। ক্ষমতার লড়াই করতে গিয়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের চোখে উঠেছে কালো চশমা। যে চশমায় দিন-রাতের কোনো পার্থক্য নেই। বাংলাদেশের মানচিত্রের শুরুতেই একটি সুন্দর সকাল নিয়ে বেশকিছু শিশু-কিশোর নাট্যদলসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানও তৈরি হয়।
প্রথমেই বলা যেতে পারে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি (সরকারি প্রতিষ্ঠান), শিল্পকলা একাডেমি (সরকারি প্রতিষ্ঠান) এছাড়াও বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় শিশু সংগঠন তৈরি হয়ে ওঠে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, লোক নাট্যদলের চিলড্রেন থিয়েটার, কিশোর থিয়েটার, টঙ্গী শিশু থিয়েটার, কেন্দ্রীয় কচি কাঁচার মেলা, চাঁদের হাট, লিটিল থিয়েটার, চয়ন নাট্যগোষ্ঠী এমন কতগুলো শিশু-কিশোর নাট্যদল বাংলাদেশে আছে। কারণ একটাই ছিল ছোটবেলা থেকে শিশুদের সংস্কৃতির মধ্যে থাকলে তাদের মন-মনন ভালো থাকবে।
জানতে পারবে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকুমার, অন্নদাশঙ্কর থেকে আজকের সুকুমার বড়ুয়া, লুৎফর রহমান রিটন, আনজির লিটন পর্যন্ত। ১৯৭০ সালে প্রথম কচিকাঁচার মেলার উদ্যোগে শিশুদের নাটক মঞ্চায়নের চিন্তাভাবনা শুরু হয়। কিন্তু ১৯৭৩ সালে এসে তা বাস্তবতায় রূপ নেয়, তখন অভিভাবকরা এসে বসে থাকতো মহড়া কক্ষের সামনে। বাড়ির সব কাজ শেষ করে তার বাচ্চাকে নিয়ে আসবে সংগঠনে, সেখানে নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক থেকে আরম্ভ করে উপস্থিত বক্তৃতা, গল্প বলা কত কিছুই না শেখার আকাক্সক্ষা।
সময় অনেকটা চলে গেছে, এখন ডিজিটাল যুগ। আমরা ডিজিটাল যুগ বলে দাবি করছি এই বাংলার মাটিতে বসে। কিন্তু একবারও কি হিসাব করে দেখেছি আমাদের শিক্ষার হার কত? কিছু বুঝে হোক আর না বুঝে হোক পশ্চিমাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে একটা শিশুর হাতে তুলে দিচ্ছি মেধাকে নিয়ন্ত্রণ করার যন্ত্র।
প্রথম প্রশ্ন হতে পারে আমি নিজে কতটুকু এ যন্ত্রের সাথে পরিচিত? দ্বিতীয় প্রশ্ন হতে পারে আমার পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অবস্থা কী? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যখন আজকের শিশুরা, তখন আপনি-আমি কোনদিকে যাবো? চোখ খুলে দেখুন আপনার বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ। আপনার শিশুকে মানুষ করে তুলতে নিজে কতটুকু মানুষ হয়েছেন সেটিই বিবেচ্য।
আজকের আধুনিক যুগে এসে বলবো না ডিজিটাল ডিভাইসটি খারাপ, শুধু এতটুকুই বলবো ওই ডিভাইস কীভাবে ব্যবহার করবো। কতটুকু আমার জন্য প্রয়োজন এবং আমার শিশুর জন্য প্রয়োজন, উদাহরণ দিয়ে বলা যেতেই পারে যে, ‘বাচ্চাদের হাতে মোবাইল দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে, অথবা তুমি তোমার পরীক্ষার ফলাফল ভালো করলে একটা দামি মোবাইল মানে এন্ড্রয়েড ফোন কিনে দেবো।’
এই হচ্ছে বর্তমানের অভিভাবক। কিন্তু এটা হওয়া উচিত ছিল না কি? ‘তোমার ভালো ফল হলে তোমাকে কোনো ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা দেখাতে নিয়ে যাবো? বা তোমার জন্য শিশু-সাহিত্য সমগ্র উপহার দেবো-কোন লেখকের বই তুমি নেবে?’ তা না হয়ে হচ্ছে উল্টোটা। মোবাইলের বদৌলতে বাংলাকে ইংরেজি অক্ষর দিয়ে লিখছে বাংলা, এ-যে বাংলা ভাষাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তার সীমা নেই।
এখনো অনেক সময় আছে আমাদের শিশুদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার। নিজস্ব সংস্কৃতি ছাড়া একটি জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। নিজের মাতৃভাষা সঠিক করে জানতে হবে। আমাদের সবারই ধারণা (বর্তমানে) তৈরি হয়েছে ভালো ইংরেজি বলতে না পারলে সে শিক্ষিত নয়। সে ক্ষেত্রে না পারছে ভালো ইংরেজি, না পারছে নিজের মায়ের ভাষা।
এক অদ্ভুত উটের পিঠে চলেছে স্বদেশের সন্তান। সাংস্কৃতিকচর্চা দিয়ে আগামী ভবিষ্যৎ-এর শিক্ষা ও সচেতনতার মাধ্যমে হতে পারে। যে দেশের নিরক্ষরের সংখ্যাই বেশি দেশের সচেতন মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। জাতিকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করার জন্য তার একটিই মাধ্যম সাংস্কৃতিক চর্চা। আর এই চর্চার মধ্যে উঠে আসবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতি, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, আইন, অধিকার, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ।
মৌলিক বিষয়ে সচেতন হতে গেলে গোষ্ঠী বন্ধ হওয়া খুব জরুরি। বাংলাদেশের সব নাট্যদল এবং সাংস্কৃতিক দলগুলোর এক হয়ে কাজ করতে হবে। বর্তমানে স্থবির হয়ে যাওয়া দলগুলোর আবার জাগ্রত হয়ে দলমত নির্বিশেষে সত্যভাষণ উপস্থাপন করতে হবে, সংস্কৃতি কর্মীদের।
আগামী প্রজন্মের সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে না পারলে ইতিহাস হারিয়ে যাবে কালের গহ্বরে। শিশুরা ফিরে পাক তাদের মায়ের কোলে। চিনতে শিখুক মোটা কাপড়, মোটা-চাল, সবুজ এঁকে-বেঁকে যাওয়া নদীর পানিতে কুলকুল করে ধ্বনি সৃষ্টি করে তার সুর বাজুক আগামী প্রজন্মের হৃদয়ে।
লেখক: অধ্যাপক, নাট্যকলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়














সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লা শহরজুড়ে অস্ত্র হাতে কিশোর গ্যাং গ্রুপের মহড়া
সরকার এনসিপি’কে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মূল্যায়ন করছে
সন্তানের ব্যাগ কাঁধে বাবাদের অপেক্ষা
জব্বারের বলী খেলায় এবারও ‘বাঘা শরীফের’ বাজিমাত
লালমাইয়ে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ইমাম গ্রেফতার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
জব্বারের বলীখেলায় ফের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা শরীফ’
গ্রেপ্তারের ২ মাস পর বরখাস্ত হলেন কুমিল্লার সাবেক এএসপি তানভীর
লালমাইয়ে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ইমাম গ্রেফতার
স্বামীই বালিশ চাপায় হত্যা করে স্ত্রীকে!
কুমিল্লা শহরজুড়ে অস্ত্র হাতে কিশোর গ্যাং গ্রুপের মহড়া
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২