নিজস্ব
প্রতিবেদক: সকাল ১০টায় পরীক্ষা ছিল এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. হাসানের। এর
আগেই সকাল সাতটার দিকে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে বাড়িতে আসে প্রবাসী
বাবার নিথর দেহ। বাবার লাশ দেখে বারবার মূর্ছা যায় হাসান।প্রায় দুই মাস ছয়
দিন আগে হাসানের বাবা হানিফ মিয়া সৗদি আরবে মারা যান। শনিবার বাড়িতে পৌঁছায়
লাশ। বুকে পাথর চেপে বাড়ির আঙিনায় বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়
হাসান।
গতকাল আজ রোববার কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ইউছুফপুর গ্রামে এ
ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া ওই প্রবাসী মো. হানিফ মিয়ার ছেলে হাসান স্থানীয়
ইউছুফপুর আইডিয়াল হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা
দিচ্ছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে হানিফ
মিয়া ২০০৮ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে দেশটির হাবুনা অঞ্চলে একটি
পুলিশ স্টেশনের খাবার রান্নার কাজ করতেন। দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাসজীবন শেষে
আজ রোববার লাশ হয়ে তিনি বাড়িতে ফিরেছেন।
স্বজনেরা জানান, চলতি বছরের ২০
ফেব্রুয়ারি ৪৫ বছর বয়সী হানিফ মিয়া কর্মরত অবস্থায় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ২৬
এপ্রিল দিবাগত রাতে হানিফ মিয়ার লাশ ঢাকার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। সকালে
মরদেহ দেখে পুরো পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়ে। বাবার লাশ দেখে বারবার মূর্ছা
যায় হাসান। এমন অবস্থার মধ্যে তার চাচাতো ভাই আরেফিন তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে
নিয়ে যায়। আরেফিনও হাসানের সঙ্গে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। আজ
পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা ছিল হাসানের। পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে ফেরার পর জোহরের
নামাজের পর জানাজা শেষে হানিফ মিয়াকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
হাসান
বলে, ‘বাবা আমাদের মানুষ করার জন্য বিদেশে অনেক কষ্ট করেছেন। আমরা
ভাইবোনেরা এতিম হয়ে গেলাম। আমার বাবা খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। আমি বাবার
জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, প্রবাসী
বাবার লাশ বাড়িতে রেখে শোকাবহ মন নিয়ে ছেলেটা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
হানিফের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।