নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লায় অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়ে আতঙ্ক তৈরি করা কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের গ্রেপ্তারে এবার অভিযানে নেমেছে যৌথবাহিনী। এরই অংশ হিসেবে দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্রসহ ৯ কিশোর গ্যাং সদস্যকে আটক করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এদের মধ্যে কিশোর গ্যাং গ্রুপকে ‘অস্ত্র সরবরাহকারী’ একজন রয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি, মাদক ও অবৈধ পণ্যসামগ্রী উদ্ধার করা হয়।গুড়িয়ে দেয়া হয় কিশোর গ্যাং সদস্যদের আস্তানা।
গত শুক্রবার বিকালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ভিক্টোরিয়া কলেজ, রানীর দিঘীর পাড়, তালপুকুর পাড়, আদালত এলাকায় অন্তত ৫০০ সদস্যের একটি গ্যাং তাদের শোডাউন করে। রাস্তায় প্রকাশে ককটেল ফাটিয়ে ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা। মোটরসাইকেল ও পায়ে হেঁটে এই শোডাউন এর কয়েকটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ ঘটনার পর পুলিশের দুই দিনের অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় ৯ জনকে। এরপর রবিবার রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার হলো আরো ৯ জন। সব মিলিয়ে শুক্রবারের মহড়ার পর পুলিশ ও যৌথবাহিনীর অভিযানে কুমিল্লায় কিশোর গ্যাং গ্রুপের মোট ১৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মাহিনুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন অপরাধে জড়িত কিশোর গ্যাং গ্রুপের বাকি সদস্যদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
যৌথবাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের ৪৪ পদাতিক ব্রিগেডের অধীনস্থ ২৩ বীর পরিচালিত এবং র্যাবের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ অভিযানে রবিবার রাতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার দুর্গাপুর এলাকা থেকে অস্ত্র সরবরাহকারী মো. রুবেলকে (৩৫)গ্রেফতার করা হয়। রুবেল সম্প্রতি কুমিল্লা শহরে প্রকাশ্যে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে আলোচনায় আসেন এবং কিশোর গ্যাংদের নিকট অস্ত্র সরবরাহ করতেন।
পরে কুমিল্লা শহরের রেসকোর্স (পলাশী গলি) এলাকায় গ্যাং গ্রুপের একটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে মো.আকিব হোসেন (২৯), মো. সাজ্জাদ হোসেন (৪৭) ও মো. শাহাদাত হোসেন (২৮) কে আটক করা হয়। অভিযানে টেবিলের নিচে লুকিয়ে রাখা অবস্থায় একটি ৯ এমএম পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, একটি রিভলভার, আট রাউন্ড রিভলভার অ্যামুনিশন, ইয়াবা, বিদেশি মদ, স্বর্ণের চেন, ল্যাপটপসহ নানা অবৈধ সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।
আটক ব্যক্তিদের তথ্যের ভিত্তিতে, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং সদস্য সাইফুল ইসলাম (১৯), মো. ইমরান হোসেন রতন (১৯), মো. মুজাহিদ (২১) এবং মো. রাফিউল আলম শফি (২০) কে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে আরও চারটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও অভিযান চলাকালে হুমায়ূন কবির (৪৫) নামে আরেকজন সন্দেহভাজন অপরাধীকে আটক করা হয়। আটককৃত ব্যক্তি ও উদ্ধারকৃত আলামতসমূহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
রবিবার বিকেলে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কোতয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, যৌথবাহিনীর অভিযানে আটকদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকসহ কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।